দেড় বছর পর ঢাবির হলগুলোতে প্রাণের ফেরা
করোনার কারণে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি আবাসিক হল খুলে দেওয়া হয়েছে৷ প্রাথমিক পর্যায়ে অনার্স চতুর্থ বর্ষ এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে হলে থাকার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে৷
ফুল, চকলেট দিয়ে শিক্ষার্থীদের বরণ
দেড় বছর পর হল খুলে দেওয়ার পর আবাসিক শিক্ষক ও কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের ফুল, চকলেট, মাস্ক দিয়ে বরণ করে নেন৷ স্যার এ এফ রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন পর হল খুলে দেওয়ার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো পরিবার আনন্দিত৷ এরই বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আমরা শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দিতে এ আয়োজন করেছি৷’’
স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রবেশ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হল, স্যার এ এফ রহমান হল, বিজয় একাত্তর হলসহ একাধিক হলে গিয়ে দেখা গেল সেখানে শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা সাবান-পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করে হলে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে৷ এছাড়া সবার মুখেই যেন মাস্ক থাকে, সে বিষয়ে বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে৷
দেখাতে হচ্ছে এক ডোজ কোভিড টিকার সনদ
শিক্ষার্থীদের হলে থাকার জন্য যেসব শর্ত ও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্বের পরিচয়পত্র এবং কমপক্ষে এক ডোজ কোভিড টিকা নেওয়ার সনদপত্র৷ যাদের পরিচয়পত্রের মেয়াদ শেষ, তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পরিচয়পত্রের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হচ্ছে৷ এছাড়া হলভেদে দেওয়া হচ্ছে হলে থাকার সাময়িক পরিচয়পত্র, যা হলে প্রবেশের সময় বাধ্যতামূলকভাবে শিক্ষার্থীদের দেখাতে বলা হয়েছে৷
‘কত খুশি লাগছে বলে বুঝাতে পারবো না’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমা আবেদিন বলেন, ‘‘এতদিন পর হল খুলে দিয়েছে, কতটা ভালো লাগছে বলে প্রকাশ করা যাবে না আসলে৷ ক্যাম্পাস লাইফটা অনেক মিস করেছি৷ আশা করছি পড়াশোনার যে ঘাটতিটা হয়েছে, সেটি আমরা দ্রুতই পুষিয়ে উঠতে পারবো৷’’
গণরুম তালাবদ্ধ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের সাতটি গণরুম ঘুরে দেখা গেল, প্রতিটিই তালাবদ্ধ৷ কেন ছাত্র নেই, জানতে চাইলে দায়িত্বরত একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, ‘‘আগে আমাদের গণরুমগুলোতে ১০-১২ জন ছাত্র থাকতো৷ কিন্তু করোনার কারণে এ নিয়ম পরিবর্তন করা হয়েছে৷ এখন সীমিত সংখ্যক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী এখানে থাকবেন এবং কোনো অছাত্র থাকার সুযোগ পাবেন না৷’’
হলের তালা ভেঙে প্রবেশ
মঙ্গলবার থেকে হল খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও ১ তারিখেই ফজলুল হক হল ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের কিছু শিক্ষার্থী হলের তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করেন৷ কারণ জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘‘আমরা যারা এতদিন মেসে ছিলাম, তারা ১ তারিখেই মেস ছেড়ে দিয়েছি৷ নাহলে মাত্র পাঁচ দিনের জন্য পুরো মাসের ভাড়া দিতে হতো৷ কর্তৃপক্ষকে অনেক অনুরোধ করেও সুরাহা না হওয়ায় আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি৷’’
টিকা কার্যক্রম চালু
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে সকল বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা এবং শ্রেণিকক্ষে সশরীরে পাঠদান কর্মসূচি চালু করতে গত ৪ অক্টোবর থেকে ডঃ মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম চালু করা হয়েছে৷
চারদিকে ধুলোর স্তর জমে গেছে
ফজলুল হক মুসলিম হল, কবি জসীমউদ্দিন হল, বিজয় একাত্তর হলগুলোর বিভিন্ন কক্ষে গেলে শিক্ষার্থীদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়৷ কেমন লাগছে জানতে চাইলে একজন বলেন, ‘‘ভাই, আর বইলেন না৷ দেড় বছর ধরে রুম বন্ধ থাকার পরেও ধুলার স্তর জমে গেছে সবকিছুতে৷ এর আগে সর্বোচ্চ এক মাস রুম হয়তো বন্ধ ছিল, কিন্তু এই দীর্ঘ সময় রুম তালাবদ্ধ থাকা অবশ্যই ঐতিহাসিক ঘটনা৷’’
হলের সংস্কার কাজ
করোনার কারণে দীর্ঘদিন আবাসিক হলগুলো বন্ধ থাকা এবং শিক্ষার্থীদের সেবার মান বাড়াতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একাধিক হলে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করেছে৷ এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মত জানতে চাইলে তারা স্বস্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘‘এতদিন অনেক সমস্যা সহ্য করতে হয়েছে৷ প্রশাসনের এমন উদ্যেগকে আমরা সাধুবাদ জানাই৷’’
‘আজকে মনে হচ্ছে ঈদের দিনের মতো’
দেড় বছর পর হল খুলে দেওয়ার পর সেগুলোর সার্বিক অবস্থা পরিদর্শন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ মোঃ আখতারুজ্জামান৷ পরিদর্শন শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘‘আজকে আমাদের জন্য খুব আনন্দের দিন৷ অনেকটা মনে হচ্ছে যেন ঈদের দিনের মতো৷ করোনার সার্বিক পরিস্থিতি এবং ছাত্রছাত্রীদের টিকার আওতায় আনার ব্যাপারগুলো আশাব্যঞ্জক হওয়ায় আমরা খুব শীঘ্রই সশরীরে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান শুরু করতে পারবো বলে আশা করছি৷’’
ক্যাম্পাসে ফিরছে প্রাণ
আবাসিক হল এবং লাইব্রেরি খুলে দেওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন অনেকটাই প্রাণ ফিরে পেয়েছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর, হাকিম চত্বর, টিএসসিসহ একাধিক স্থানে ঘুরে দেখা যায়, অনেকদিন পর সহপাঠী, সিনিয়র, জুনিয়রদের পেয়ে শিক্ষার্থীরা আপ্লুত৷ অনেকে আড্ডা দিচ্ছে, খাবার খাচ্ছেন, কেউ কেউ ছবি তুলছেন৷ খুব শীঘ্রই আবার তাদের প্রাণের ক্যাম্পাস তার পুরনো রূপ ফিরে পাবে এমন আশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা৷