1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দেশ আগের চেয়ে অনেক এগিয়েছে : প্রভুদান চৌধুরী

৪ মে ২০১১

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না৷ এটি ছিল আপামরজনতার লড়াই৷ সেই লড়াইয়ে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন আদিবাসী জনগোষ্ঠীও৷ তাঁদেরই একজন প্রভুদান চৌধুরী৷

https://p.dw.com/p/118WW
একাত্তরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তাই মনস্থ করলেন অস্ত্র তুলে নেবেন হাতেছবি: Public domain

ছাত্র রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ

প্রভুদান চৌধুরী কলেজ জীবন থেকেই জড়িত ছিলেন ছাত্র রাজনীতিতে৷ একাত্তরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তাই মনস্থ করলেন অস্ত্র তুলে নেবেন হাতে, স্বাধীন করবেন দেশকে৷ মারমা সম্প্রদায়ের এই তরুণ কোনরকম প্রশিক্ষণ ছাড়াই এপ্রিলে চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন৷ তাঁর প্রথম মিশন ছিল মদুনাঘাট ব্রিজে৷ এই বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘মদুনাঘাট ব্রিজের পশ্চিম পাশে আমাদের একটা ডিফেন্স ছিল৷ সেখানে পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ করে৷ সেটাই ছিল আমার প্রথম সরাসরি যুদ্ধ৷''

ভারতে প্রবেশ

এপ্রিল মাসেই পাকিস্তানি বাহিনী চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান বিস্তৃত করে৷ কোনঠাসা হয়ে পড়ে মুক্তিযোদ্ধারা৷ তাছাড়া গেরিলা প্রশিক্ষণেরও প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়৷ তখন প্রভুদানসহ আরো অনেকে ভারতে পাড়ি দেন৷ সেসময়কার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে বর্ষীয়ান এই যোদ্ধা বলেন, ‘‘আমরা মে মাসে দুই তারিখ রামগড় সীমান্ত পার করি৷ তারপর হরিনা ক্যাম্পে যোগ দেই৷ সেখানে ১৫-২০ দিন থাকার পর আসামের তেলিয়ামুড়া থানায় আমি প্রথম গেরিলা প্রশিক্ষণ নেই৷ ভারতীয় সেনা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে ছিল এই প্রশিক্ষণ৷''

গেরিলা হামলা

ভারতে শুরু হয় গেরিলা প্রশিক্ষণ৷ একসময় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হন প্রভুদান ও তাঁর সঙ্গীরা৷ এরপর ভারত থেকে হঠাৎ হঠাৎ বাংলাদেশে প্রবেশ করতেন তাঁরা, গেরিলা অভিযান অংশ নিতে৷ কখনো কখনো দীর্ঘসময় থাকতে হতো দেশের মধ্য৷ প্রভুদান বলেন, ‘‘আমরা ছোট ছোট দলে বিভিক্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতাম৷ বিভিন্ন লক্ষ্যে হামলা চালাতাম৷''

সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধ

প্রভুদান ছিলেন বিজ্ঞানের ছাত্র৷ ভারতের গেরিলা শিবিরে তাই বিস্ফোরক বিষয়ক প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেন তিনি৷ এই প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে সীমান্ত সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন ব্রিজ উড়িয়ে দেন এই সাহসী যোদ্ধা৷ পাকিস্তানি বাহিনীর জন্য যা ছিল বড় রকমের বিপত্তি৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমরা শুভপুর এলাকার আশেপাশে যেসমস্ত ছোট ছোট ব্রিজ ছিল, বিশেষ করে যেগুলো পাকিস্তানি সেনারা ব্যবহার করতো, সেগুলো উড়িয়ে দিয়েছিলাম৷''

রণাঙ্গনের নামজাদারা

চট্টগ্রাম এলাকায় যুদ্ধ করতে গিয়ে প্রভুদান অনেককে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন৷ রণাঙ্গণে মেজর জিয়া, মেজর রফিকসহ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি রউফ পর্যন্ত নামজাদা অনেকেই ছিলেন প্রভুদানের সহযোদ্ধা৷ যুদ্ধের শেষের দিকে ওয়্যারলেস অপারেটর হিসেবেও কাজ করার সুযোগ হয় তাঁর৷ যুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘রাঙামাটির বন্দুকভাঙ্গায় আমি শত্রুর ফেলে যাওয়া একটি এলএমজি উদ্ধার করেছিলাম পানির নীচ থেকে, ডুব দিয়ে৷ এটা এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা৷''

বর্তমানে প্রভুদান

এভাবে লড়াই করে একসময় স্বাধীন হলো দেশ৷ বিজয়ী দেশে প্রভুদান চৌধুরী ফিরে গেলেন নিজের কাজে৷ বর্তমানে তাঁর বয়স ৬৫ বছর৷ এখনো তিনি কাজ করছেন চন্দ্রঘোনা খ্রিষ্টান হাসপাতালে৷ নিজের দেশ নিয়ে প্রচণ্ড আশাবাদী এই যোদ্ধা৷ তিনি বলেন, ‘‘যদিও দেশের মধ্যে আমাদের অনেক সমস্যা এখনো আছে৷ এখনো অনেক চাওয়া পাওয়া আমাদের পূর্ণ হয়নি৷ তবে আমরা আশাবাদী৷ এবং আমি দেখছি দেশ আগের চেয়ে অনেক এগিয়েছে৷''

প্রভুদান আদিবাসী জনগোষ্ঠীর একজন প্রতিনিধি৷ পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটিতে জন্মেছিলেন তিনি৷ জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন চন্দ্রঘোনায়৷ পার্বত্য অঞ্চলের অস্থিরতা নিরসনে আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি৷ বিশেষ করে, শান্তি চুক্তি সেই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হয়েছে বলেই মনে করেন এই যোদ্ধা৷

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক