1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দেশের সিনেমা হলে হিন্দি ছবি চালানোর প্রস্তাব

সমীর কুমার দে ঢাকা
২১ নভেম্বর ২০২০

করোনাকালে দর্শক সংকট কাটাতে বাংলাদেশের সিনেমা হলগুলোতে হিন্দি ছবি চালানোর প্রস্তাব করেছেন হল মালিকরা৷ সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া ঠেকাতে এমন পদক্ষেপের বিকল্প নেই বলে তাদের মত৷ 

https://p.dw.com/p/3leaw
Bangladesch | Film "Shahoshi Hero Alom" mit Ashraful Alom Saeed
ছবি: bdnews24

বাংলাদেশ হল মালিক সমিতির নেতাসহ অন্যান্যরা তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সাথে এক বৈঠকে বলিউডের দশটি সিনেমা চালানোর প্রস্তাব দিয়েছেন৷ তথ্যমন্ত্রী হল মালিক সমিতিকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একটি লিখিত প্রস্তাব দিতে বলেছেন৷ লিখিত পাওয়ার পর মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে বলে জানা গেছে৷

সিনেমাগুলো ভারতের সাথে একযোগে বাংলাদেশে মুক্তি পাবে নাকি বলিউডের পুরোনো সিনেমা চালানো হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি৷ লিখিত পাওয়ার পর মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে তা নির্ধারণ করবে৷ সিনেমা চালুর দিন তারিখও সেসময় নির্ধারিত হবে৷

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চলচিত্র প্রযোজক ও পরিবেশ সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি৷ লিখিত দেওয়ার পর মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে৷’’

‘কিছুদিন হিন্দি ছবি চালানোর জন্য সম্মতি দিয়েছি’

তিনি বলেন, ১৬ অক্টোবর থেকে প্রেক্ষাগৃহগুলো খুলে দেওয়া হলেও দর্শক আসছে না৷ বড় বাজেটের ৩৫টি ছবি অপেক্ষায় থাকলেও দর্শক না আসার কারণে ছবি মুক্তি দিচ্ছেন না প্রযোজকরা৷ এ অবস্থায় প্রক্ষাগৃহগুলো চলবে কী করে এমন প্রশ্ন তুলে খসরু বলেন, ‘‘কিছুদিন বলিউডের ছবি চালানোর জন্য আমরাও সম্মতি দিয়েছি৷ বৈঠকে বলিউডের ১০টি ছবি আনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে৷’’

এদিকে হল মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা গেছে পুরোনো নয়, ভারতের সাথে একযোগে বাংলাদেশেও নতুন সিনেমার মুক্তি দিতে চান তারা৷ এর ফলে সিনেমা হলগুলো ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবে বলে আশা তাদের৷

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সহ-সভাপতি মিয়া আলাউদ্দিন বলেছেন, ‘‘ভারতের ছবি আনার বিষয়ে আমরা হল মালিকরা একমত হয়েছি৷ তবে পুরনো সিনেমা নয়, আমরা চাই বলিউড ও কলকাতার সিনেমা সেখানে যেদিন মুক্তি পাবে, আমাদের এখানেও একই দিনে মুক্তি পাবে৷ আমরা এখন সেই চেষ্টাই করছি৷''

একইধরনের মতামত জানিয়েছেন বাংলাদেশ হল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি ও মতিঝিলের মধুমিতা হলের মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘এটা অনেক আগেই করা উচিত ছিল৷ দেরি হয়ে গেছে৷ তারপরও সময় ফুরিয়ে যায়নি৷ যত দ্রুত সম্ভব এটা করতেই হবে৷ তবে পুরনো হিন্দি ছবি দিয়ে হলে দর্শক আনা সম্ভব নয়৷ খুব বেশি হলে মাসখানেক আগে মুক্তি পাওয়া হিন্দি ছবি আনতে হবে৷ হল বাঁচাতে ভালো সিনেমার বিকল্প নেই৷''

এদিকে, চলমান সংকট কাটাতে নির্মাতা, চিত্রনায়কসহ অনেকেই এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন৷ তবে কিছু শর্তের কথা বলেছেন কেউ কেউ৷ চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদের মতে করোনার সময়ে নির্মাতারা ছবি মুক্তি দিচ্ছেন না৷ হলগুলোর টিকিয়ে রাখার স্বার্থে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বলিউডের ছবি চালানো যেতেই পারে৷ 

ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘হলগুলো যদি না বাঁচে তাহলে আমাদের ক্ষতি হয়ে যাবে৷ আমাদের কিন্তু বেশ কিছু বড় বাজেটের ছবি তৈরি হয়ে আছে৷ হলগুলোতে দর্শক না আসায় পরিচালকরা সেই ছবিগুলো মুক্তি দিচ্ছেন না৷’’

‘নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হিন্দি ছবি চালানো যেতেই পারে’

দেশে একসময় বাংলা ছায়াছবির পাশাপাশি হিন্দি-উর্দু ছবি চলতো এমন তথ্য উল্লেখ করে দুই বাংলায় জনপ্রিয় এ চিত্রনায়ক বলেন, ‘‘আমি কলকাতায় দেখেছি, একটি হলে বাংলা ছবি চলছে, পাশেই হলেই হয়তো বোম্বের ছবি চলছে৷ আমাদের আসলে বিরোধিতা করার চেয়ে কীভাবে বিশ্বমানের ছবি নির্মাণ করা যায়, সে চেষ্টা করা উচিত৷’’

এ ক্ষেত্রে দেশীয় শিল্প-সংস্কৃতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে বলছেন তিনি৷

শর্তসাপেক্ষে বলিউডের সিনেমা চালানোয় সমস্যা দেখছেন না নির্মাতা আমিতাভ রেজা চৌধুরীও৷ তার মতে, প্রেক্ষাগৃহগুলো বাঁচানোর স্বার্থে বলিউডের ছবি চালানো যেতে পারে৷ 

তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি, সময় ঠিক করে এটা করা উচিত – কত ঘণ্টা বলিউডের ছবি চলবে, আর কত ঘণ্টা বাংলা ছবি চলবে৷ আবার ট্যাক্সের ক্ষেত্রেও একটা পার্থক্য থাকতে হবে৷ বাংলা ছবির টিকিটের দাম যদি ৪০০ টাকা হয়, তাহলে হিন্দি ছবির টিকিটের দাম ৮০০ টাকা হওয়া উচিত৷ তা না হলে ওদের ছবির সঙ্গে আমাদের ছবি কোনভাবে চালানো যাবে না৷ কারণ ওরা শত কোটি টাকা খরচ করে একটি ছবি বানায়, আর আমাদের ছবির বাজেট কয়েক লাখ টাকা৷ ফলে দেশীয় শিল্পকে বাঁচাতে একটা ব্যবস্থা থাকতেই হবে৷’’

প্রসঙ্গত, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তির (সাফটা) আওতায় সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে চলচ্চিত্র বিনিময়ের সুযোগ থাকলেও দেশের প্রেক্ষাগৃহে হিন্দি সিনেমা সর্বশেষ ২০১৫ সালে দেখানো হয়েছিল৷ সালমান খান অভিনীত ‘ওয়ান্টেড' ছবিটি চালানো হয়েছিল তখন৷