দূষণের নগরী ঢাকা
৩১ ডিসেম্বর ২০১০ঢাকা ঢেকে থাকে মানুষে, যানে, শব্দে, ধুলোয়৷ ঢাকা ঢেকে থাকে ধোঁয়াশায়৷ এক কথায় চারশ বছরের ঢাকার এই হলো এখনকার পরিচয়৷ সেই ঢাকা – যে ঢাকাকে বলা হতো তিলোত্তমা নগরী৷
১ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি নাগরিকের শহর ঢাকা৷ সরকারি হিসাবে এই সংখ্যা অবশ্য আরও একটু কম৷ প্রতিদিন নতুন করে ২ হাজার ১৩৬ জন আসছে এই কোটি মানুষের শহরে৷ আর বছর শেষে যুক্ত হচ্ছে ৭ লাখ ৮০ হাজার নতুন মানুষ৷
মানুষের ভারে ন্যুব্জ ঢাকা৷ ঢাকার পরিবেশ আজ মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে৷ জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিভাগের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৫ সালে জাপানের রাজধানী টোকিওর পরেই দ্বিতীয় স্থানে থাকবে ঢাকা৷ এরপরেই থাকবে ভারতের বাণিজ্য নগরী মুম্বই৷ওই হিসাব অনুযায়ী তখন ঢাকা মহানগরীর লোকসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে দুই কোটির ওপরে৷
পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও যানজটের সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে, এই শহরে৷ এটা যেমন সত্য তেমনি সত্য উপচেপড়া জনসংখ্যার কারণে ঘটছে ঢাকার অপরিকল্পিত নগরায়নও৷ রাজধানী ঢাকা শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নেই কোন সমন্বত ব্যবস্থা৷ বিশ্বব্যাংকের মতে, ঢাকা শহরে প্রতিদিন মজুদ হচ্ছে প্রায় ৭ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য৷ এরমধ্যে মাত্র ৩ হাজার ৮শ মে. টন বর্জ্য ডাম্পিং করা হয়৷ বাকিটা থেকে যায় এখানে সেখানে৷
ঢাকায় গাড়ির ভেঁপু ৯৩ শতাংশ, মাইকিং ৬৫ শতাংশ শব্দদূষণ করছে৷ শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালায় হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতের চারপাশে একশ' মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকাকে নীরব এলাকা নির্ধারণ করা হয়েছে৷ কিন্তু সেই নীরব এলাকা আর নীরব থাকছে না৷ হয়ে উঠেছে সরব৷
ঢাকার মানুষের ব্যবহৃত পানির শতকরা ৮৭ ভাগ ভূমির গভীর থেকে তোলা হয়৷এ কারণে প্রতি বছর ২ থেকে ৩ মিটার পর্যন্ত পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে৷ সাথে সাথে খাল, জলাধার ইত্যাদি দিন দিন ভরাট হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে নগরী জুড়ে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা৷ স্বাধীনতার আগেও এই শহরে ৪৭টি খালের অস্তিত্ব ছিল৷ বেশির ভাগ খালের প্রস্থ ছিল ১৫০ ফুটের বেশি৷ স্বাধীনতার পর মাত্র তিন যুগের ব্যবধানে জলাধার দখলকারী ভূমিদস্যু থাবায় রাজধানী ঢাকা মহানগরী এলাকার ২৫টি খাল বিলুপ্ত হয়েছে৷
প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক