1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুয়ারে রেশন কি মুখ থুবড়ে পড়বে?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৪ ডিসেম্বর ২০২১

দুয়ারে সরকারের সাফল্যের পরবর্তীকালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প দুয়ারে রেশন ৷ কিন্তু চালু হওয়ার সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই এই প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তা ৷ রেশন ডিলারদের একটা বড় অংশ প্রকল্প চালাতে চাইছেন না৷

https://p.dw.com/p/43pVE
দুয়ারে সরকারের সাফল্যের পরবর্তীকালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প দুয়ারে রেশন ৷ কিন্তু চালু হওয়ার সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই এই প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তা ৷ রেশন ডিলারদের একটা বড় অংশ প্রকল্প চালাতে চাইছেন না৷
ছবি: DW/Prabhakar Mani

বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি ক্ষমতায় এলে রেশন সামগ্রী পৌঁছে যাবে দুয়ারে৷ প্রকল্পের নাম দুয়ারে রেশন৷ সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, কোন এলাকায় ৫০০ মিটার দূরে দূরে রেশন সামগ্রীবাহি গাড়ি দাঁড়াবে৷ সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষকে অর্থাৎ যারা গাড়ি দাঁড়ানোর ৫০০ মিটারের মধ্যে বসবাস করে, তাদের সামগ্রী বিতরণের আগাম খবর দিতে হবে৷ গ্রাহকরা গাড়ি থেকে সামগ্রী সংগ্রহ করবেন নিজস্ব কার্ড দেখিয়ে৷ সামগ্রী বহন করার গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে এক লক্ষ টাকা ভর্তুকি দেবে সরকার৷ মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব প্রত্যেক রেশন ডিলার দুজন কর্মী রাখতে পারবেন৷ তাদের বেতনের অর্ধেক বহন করবে রাজ্য সরকার৷ এর ফলে রাজ্যের সব রেশন দোকানের নিরিখে প্রায় ৪২ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ কিন্তু রেশন ডিলারদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ‘জয়েন্ট ফোরাম ফর ওয়েস্ট বেঙ্গল রেশন ডিলার্স’ বলছে এই প্রকল্প চালানোর পরিকাঠামো তাদের হাতে নেই৷ একইসঙ্গে এর জন্য বাড়তি খরচ বহন করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়৷

নীরদময় পালিত

রেশন ডিলাররা যাতে বাড়তি খরচ বহন করতে পারেন, সেজন্য তাদের কমিশন বৃদ্ধি করেছে রাজ্য কুইন্টাল প্রতি কমিশন ৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে দেড়শ টাকা করা হয়েছে৷ কিন্তু এতেও সন্তুষ্ট নন রেশন ডিলারদের একটা বড় অংশ৷ সংগঠনের চেয়ারম্যান নীরদময় পালিত বলেন, ‘‘গাড়ির জন্য আমাদের যে টাকা ঋণ নিতে হবে তার ইএমআই দিতে হবে প্রতি মাসে৷ গাড়ি চালকের বেতন আছে, আছে গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের খরচ আর জ্বালানির দাম কোথায় দাঁড়িয়ে সেটা সবাই জানে৷ সরকার কমিশন বাড়ালেও আমরা সামাল দিতে পারব না৷’’

পশ্চিমবঙ্গে যে ২০,২৭১ টি রেশন দোকান রয়েছে, তার উপর ১০ কোটি ৪৮ লক্ষ মানুষ নির্ভরশীল৷ উত্তর দমদম এলাকায় রেশন ডিলার শেখ আমিনুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন,  ‘‘আমরা দুয়ারে রেশন প্রকল্পের বিরোধিতা করছিনা৷ কিন্তু সেটা বাস্তবায়িত করা সম্ভব কিনা তা সরকারকে বুঝতে হবে৷ শহরাঞ্চলে ৫০মিটারের মধ্যে দুইটি দোকান, এক কিলোমিটারের মধ্যে পাঁচটি দোকান৷ সে ক্ষেত্রে দুয়ারে রেশন করার সার্থকতা কোথায়?’’ আমিনুলের দোকানের এক খদ্দের নীপা দাস বলেন, ‘‘পাড়াতে গাড়ি গেলেও যদি লাইন দিতে হয়, তাহলে দোকানেই দেখে জিনিস নেওয়া বেশি ভাল৷ ডিজিটাইজেশনের জন্য এই ছাপ মেলানোর জন্য বাড়িতে বাচ্চা রেখে আসতে অসুবিধা হয়৷ একদম বাড়িতে পৌঁছে দিলে সেটা অবশ্যই স্বাগত৷’’

বিশ্বম্ভর বসু

নভেম্বরের শেষে বাঁকুড়া জেলা রেশন ডিলার সংগঠন সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জানিয়ে দেয় ডিসেম্বর মাসে তারা রেশন দিতে পারবে না বাড়ি বাড়ি৷ মুখ্যমন্ত্রীর একগুচ্ছ প্রস্তাব ও সহায়তা ঘোষণার পরেও কী সমস্যা হচ্ছে? নীরদময় পালিতের বক্তব্য, ‘‘গ্রাহকদের আঙ্গুলের ছাপ ছাপ না মিললে রেশন দেওয়া যাবে না৷ কোন এলাকায় গিয়ে যদি রেশন না দিয়ে আমি ফিরে আসতে চাই, গ্রামবাসী আমাদের ছাড়বে না৷ সেক্ষেত্রে কর্মীদের নিরাপত্তা কী হবে?” শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে সমস্যা বেশি বলে মনে করেন তিনি৷ তার বক্তব্য, ‘‘গ্রামাঞ্চলে দুয়ারে রেশনের গাড়ি নিয়ে গিয়ে দেখা যাচ্ছে রেশন নেওয়ার কেউ নেই৷ অনেকেই কাজ করতে বাড়ির বাইরে থাকছে৷’’

সুতরাং রেশন ডিলারদের আপত্তিতে পশ্চিমবঙ্গে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে দুয়ারে রেশন প্রকল্প৷ ফোরামের সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু বলেন, ‘‘আমরা সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম ১৫ দিন দোকান থেকে রেশন দেয়া হবে৷ বাকি ১৫ দিন অসুস্থ প্রবীণ মানুষদের বাড়িতে আমরা রেশন পৌঁছে দেব৷ এই প্রস্তাবে সরকার রাজি হয়নি৷ কিন্তু নিয়মিত বাড়ি গিয়ে রেশন সরবরাহ আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়৷’’ ভবিষ্যতে কি রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতের পথে যাবেন তারা? বিশ্বম্ভর বসু বলেন, ‘‘সোমবার আমাদের একটা কনভেনশন আছে সেখানে আলোচনার ভিত্তিতে মঙ্গল-বুধবার আমরা পদক্ষেপ নেব৷ আগামী সপ্তাহে রাজ্য সরকারকে আমরা বিকল্প প্রস্তাব দেব৷ তাদের প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করছে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ৷’’ প্রতিক্রিয়ার জন্য খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বেজে গিয়েছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান