1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুর্নীতি মামলায় বারবার নেতা-মন্ত্রীদের তলব

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২২ মে ২০২২

রাজ্যের দুই মন্ত্রী ও শাসক দলের এক দাপুটে নেতা সিবিআই তদন্তের মুখে৷ বারবার তলব করা হচ্ছে তাদের৷

https://p.dw.com/p/4Bh99
Indien Westbengalen | Protest gegen Minister | BJP
ছবি: Payel Samanta/DW

নেতা মন্ত্রীদের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার এমন অভিযোগে ফলে অস্বস্তিতে ক্ষমতাসীন তৃণমূল৷ আর বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনীতিতে এর ফল সুদূরপ্রসারী হতে পারে৷

মন্ত্রী-কন্যা কীভাবে তালিকায়?

স্কুল সার্ভিস কমিশন (‌এসএসসি)-র মেধা তালিকায় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতার নাম ছিল না৷ ২০১৬ সালে ‌এসএসসির পরীক্ষা হয়৷ ২০১৭ সালের ২ মে ফল বেরোয়৷ কিন্তু পরে নতুন তালিকায় তাঁর নাম এক নম্বরে চলে আসে৷ 

অভিযোগ আছে আগের তালিকা বাতিল করে দিয়ে নতুন করে আবার মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়৷ আর নতুন করে প্রকাশিত তালিকায় মন্ত্রী-কণ্যার নাম চলে আসে এক নম্বরে৷

এ নিয়ে মামলা করেন চাকরিপ্রার্থী ববিতা সরকার৷ আদালত পরেশকে হাজিরা দিতে বলে৷ দেড়দিন কার্যত নিখোঁজ থাকার পর মন্ত্রী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজাম প্যালেসে তদন্তকারীদের মুখোমুখি হন৷ সাড়ে তিন ঘণ্টা ছিলেন সেখানে৷ শুক্রবার ফের তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই৷ ১০ ঘণ্টার বেশি সময় তিনি ছিলেন নিজাম প্যালেসে৷ শনিবার তাঁকে আবার তলব করে কেন্দ্রীয় সংস্থা৷ সাড়ে তিন ঘণ্টা মন্ত্রী ছিলেন সিবিআই দপ্তরে৷

জিজ্ঞাসাবাদে জানতে চাওয়া হয়, কম নম্বর পেয়েও কীভাবে চাকরি পেলেন তাঁর মেয়ে এবং এ বিষয়ে তিনি কী প্রভাব খাটিয়েছিলেন?

জানা গেছে, মন্ত্রীকে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পরও মেলেনি সম্পূর্ণ তথ্য৷ বরং তাঁর কথায় অসঙ্গতি মিলেছে৷ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তরও পাওয়া যায়নি৷ তাই তাঁকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান সিবিআই আধিকারিকরা৷

সমস্যায় মন্ত্রিসভার আরেক সদস্য

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রিসভার আরো এক সদস্যও সিবিআই নিয়ে বিপাকে৷ প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এসএসসি দুর্নীতিতে এক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা৷ তাঁকে ২৫ মে ফের তলব করা হয়েছে৷ এই হাজিরা থেকে রক্ষা পেতে আদালতে আর্জি জানিয়েছেন বর্তমান শিল্পমন্ত্রী৷ হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ তাঁকে তদন্তকারীদের সামনে হাজিরা দিতে বলেছিল৷ এর বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানালেও রক্ষাকবচ পাননি পার্থ৷ বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ আর্জি খারিজ করে দিয়েছে৷ এর আগেই অবশ্য সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের দরজায় হাজির হয়েছেন মন্ত্রী৷ সেখানেও তিনি রক্ষাকবচ চেয়েছেন৷ শুক্রবার সিঙ্গল বেঞ্চে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় মন্ত্রীর সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন৷

পার্থর পক্ষে সওয়ালকারী আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘‘নেতা-মন্ত্রীদের এতো সম্পত্তি কোথা থেকে আসে৷ এই আয়ের উৎস কী?'' এমনকি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি৷ এর আগে এই তদন্তের ক্ষেত্রে তথ্য লোপাটের আশঙ্কা করেছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা৷ পুরো এসএসসি দফতরের নিরাপত্তায় আধাসেনা মোতায়েন করা হয়৷ এখন শুধু ডেটা রুমের পাহারায় রাখা হয়েছে সিআরপিএফ-কে৷ ডেন্টা সেন্টার সিল করে দেওয়ার পর সার্ভার লক করে দিয়েছে সিবিআই৷

‘শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হলে চাকরি মিলবে এই বার্তা সমাজে যাচ্ছে’

'দিনের ছুটি অনুব্রতর!

দীর্ঘ দেড় মাস কলকাতায় কাটিয়ে শুক্রবার বোলপুরে নিজের বাড়ি ফিরেছেন অনুব্রত মণ্ডল৷ তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি চলতি সপ্তাহে গরুপাচার মামলার তদন্তে সিবিআই-এর মুখোমুখি হন৷ তার আগে দফায় দফায় সিবিআই তলব এড়িয়েছেন তিনি৷ অসুস্থতার জন্য ভর্তি হন হাসপাতালে৷ ২৫ মে এই দাপুটে নেতাকে ফের তলব করেছে সিবিআই৷ অনুব্রতর কাছে তাঁর শেষ পাঁচ বছরের আয়কর রিটার্ন ও সম্পত্তি সংক্রান্ত নথি চেয়েছেন তদন্তকারীরা৷

নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় শাসক দল অস্বস্তিতে রয়েছে৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক নীলাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযোগ গুরুতর৷ এ ধরনের দুর্নীতির দায়ে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী ওমপ্রকাশ চৌতালার ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল৷ যোগ্যতা নয়, শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হলে চাকরি মিলবে, এই বার্তা সমাজে যাচ্ছে৷ এসএসসি দুর্নীতির সুদূরপ্রসারী প্রভাব বাংলার রাজনীতিতে পড়তে পারে৷’’

স্কুলে নিয়োগ কবে?

টালবাহানার মধ্যেই নিয়োগে আশার খবর রাজ্যে৷ উচ্চ প্রাথমিক নিয়ে জট কাটার আভাস৷ এক হাজার ৪৪৮ জনকে ইন্টারভিউতে ডাকার তোড়জোড় শুরু হয়েছে৷ আগেই ১৫ হাজার প্রার্থীকে ডাকা হয়েছিল৷ তবে শিক্ষা দফতর নতুন পদ তৈরির বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে আদালতের ভর্ৎসনার মুখে পড়েছে৷ শুক্রবার আদালতে বিজ্ঞপ্তি পেশ করা হয়৷ ৬ হাজার ৮৬১ পদ তৈরির কথা সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে৷ এক্ষেত্রে আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হবে৷ তবে আদালতের ভাষায়, এই বিজ্ঞপ্তি বিভ্রান্তিকর৷ এটি জারির উদ্দেশ্য সৎ নয়৷ সবমিলিয়ে রাজ্যের স্কুলে নিয়োগ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না৷ বড় সংখ্যক বিদ্যালয় শিক্ষকের অভাবে রয়েছে৷ এখন গরমের ছুটি থাকলেও এর পর কী হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ শিক্ষা মহলে৷