1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুনিয়ার বাস্তুহীন এক হও! দখল কর!

২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০

দুনিয়ার বাস্তুহীন এক হও! দখল কর! এমন অতিবিপ্লবী শ্লোগান শুনে শ্রোতারা ভয় পেয়ে গেলেন না তো৷ কিন্তু কারও যদি থাকার জায়গা না থাকে, কিংবা কোনো অযোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও কেউ যদি বাড়ি ভাড়া না পায়, তাহলে সে কি করবে?

https://p.dw.com/p/MBgg
ফাইল ফটোছবি: AP

প্যারিসের বাস্তু-আন্দোলনকারীরা বলছেন, এমন অবস্থায় তারা একটাই কাজ করতে পারেন, আর তা হল ফাঁকা জায়গা পেলেই সেখানে থাকতে শুরু করা৷ এমনকি প্রয়োজনে অনুমতির তোয়াক্কা না করে ‘স্কোয়াটিং' বা জবরদখল করা৷ তাদের যুক্তি, শত শত বাড়ি পরিত্যক্ত পড়ে থাকবে আর হাজার হাজার মানুষ রাস্তায়-পার্কে ঘুমোবে এমন সমাজে জবরদখলে কোনো দোষ নেই৷

এটা সবাই জানে যে, প্যারিসে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়া কি ভীষণ ঝক্কির ব্যাপার আর সেজন্য কতো আর্থ-সামাজিক বাধা পেরিয়ে কতো কাঠখড় পোড়াতে হয়৷ এটা অকল্পনীয় রকমের কঠিন যদি আপনার আর্থিক অবস্থা খুব ভাল না থাকে আর আপনি কোনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ হলে তা বলতে গেলে অসম্ভব৷ ফরাসি আলজেরীয় লেখিকা ফায়জা গেনে এভাবেই প্যারিসের আবাসিক সংকট ব্যাখ্যা করছিলেন৷ ফায়জা বলেন, ‘‘আপনি সংখ্যালঘু হলে অনেক আবাসন সংস্থার এজেন্টরা আপনাকে বাসা দেখার সুযোগ দেওয়া তো দূরে থাক আপনার ফোন কলই ধরবে না৷''

ফায়জার পরামর্শ, আপনি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে বাসা খোঁজার অপেক্ষায় থাকেন তাহলে সেই চিন্তা বাদ দিয়ে প্রতিবছরই অনেক ছাত্রছাত্রীরা যেমন করে থাকে, তেমনি আপনারও কোনো একটা তাঁবুশিবিরে গিয়ে আশ্রয় নেওয়াই ভাল৷ আর যখন আপনি জানবেন যে, একজন শিক্ষার্থীর বাজেটের ৬০ ভাগই চলে যায় বাসা ভাড়া দিতে তখন অবশ্য আপনাকে এতোকিছু বোঝাতে হবে না বলেই ধারণা এই লেখিকার৷

ফায়জা তার নিজের ছাত্রজীবনের অভিজ্ঞতার উদাহরণ দেন৷ তিনি জানান, ১৭ বছর বয়সে লেখাপড়া করার উদ্দেশ্যে প্যারিসে রওনা হওয়ার সময়ে তার মা'র বদ্ধমূল ধারণা ছিল যে তিনি কখনোই সেখানে থাকার জায়গার ব্যবস্থা করতে পারবেন না৷ আদতে হয়েছিলও তাই৷ ফলে ফায়জাকে লেখাপড়া করতে হয়েছি ব্রিটানিতে গিয়ে৷

এই লেখিকা বলছিলেন, ‘‘আমাদের কোনো আত্মীয় বা বন্ধু ছিল না যাদের বাড়িতে ভাড়া থাকা যায়৷ আর সবচেয়ে বড় কথা আমার মায়ের এমন সামর্থ্য ছিল না যে প্রতিমাসে বাড়িভাড়া দেওয়ার বিষয়ে বাড়িওয়ালাকে একটি কাগুজে নিশ্চয়তাপত্র সরবরাহ করতে পারেন তিনি৷ আমার কথা হাস্যকর শোনাতে পারে, কিন্তু এটাই সত্যি৷ প্যারিসের বেশিরভাগ বাড়িওয়ালাই শুধু যে এককালীন মোটাসোটা জামানত চান তা নয়, তারা একইসঙ্গে অভিভাবক বা অন্য কোনো তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকে এ বিষয়ে নিশ্চয়তার আইনি কাগজপত্রও দাবি করে থাকেন৷''

প্যারিসে তরুণ তরুণীদের আবাসন সংকটের অন্যতম বড় বাধা বাড়িওয়ালাদের এই দাবির পাহাড়৷ এছাড়া সরকারি বিকল্পও অত্যন্ত সীমিত৷ প্যারিসে বৃত্তি নিয়ে পড়তে আসা ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৩,৫০,০০০ হলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রণাধীণ ছাত্রাবাসের মোট কক্ষের সংখ্যা মাত্র ৩০,০০০৷

নিরুপায় ছাত্রছাত্রী এবং দরিদ্র কর্মজীবীরা এই পরিস্থিতিতে বেছে নেন অন্য বিকল্পগুলো৷ যেমন - বয়স্কদের সাহায্য করার বিনিময়ে সস্তায় ঘরভাড়া দিয়ে থাকা, সাবলেট করা, আত্মীয়দের সঙ্গে থাকা কিংবা জবরদখলের আশ্রয় নেওয়া৷ এমনকি, অনেক নারী এই পরিস্থিতিতে ‘বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে' সুযোগসন্ধানী পুরুষদের গৃহসঙ্গীও হয়ে যান৷ অর্থাৎ, বাধ্য হয়ে যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন৷

প্যারিসের এই তীব্র আবাসন সংকট থেকেই জনপ্রিয় হয়েছে বাস্তু-অধিকার গ্রুপ ‘জ্যদি নোয়ার'৷ যারা ‘স্কোয়াটিং' বা জবরদখলকে সমর্থন করে আসছেন এবং বিষয়টিকে রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ ফ্রান্সে ‘পিএপি' বা সাপ্তাহিক ক্লাসিফায়েড বাড়িভাড়ার বিজ্ঞাপন প্রকাশের দিন বৃহস্পতিবার৷ এইদিনকে ‘কৃষ্ণ বৃহস্পতি' নামে আখ্যা দিয়েই ওই গ্রুপ নিজেদের নাম রেখেছে ‘জ্যদি নোয়ার' বা ‘কৃষ্ণ বৃহস্পতি'৷

সম্প্রতি প্যারিসের এক বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স সাময়িকভাবে দখল করে নিয়ে আলোচনায় আসে এই ‘কৃষ্ণ বৃহস্পতি' গ্রুপ৷ ৮৭ বছর বয়সি ফরাসি ধনকুবের বিয়াত্রিস কোত্যাঁ'র ১,৩০০ বর্গমিটারের বাড়িটি প্রায় আড়াই মাস দখল করে রাখে এই সংগঠনের আন্দোলনকর্মীরা৷ একসময়ে অনেক নামকরা ব্যক্তির আবাসস্থল হিসেবে বিখ্যাত বাড়িটি গত প্রায় চারদশক ধরে খালি অবস্থায় পড়ে ছিল৷ পুলিশের বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত উচ্ছেদ হতে হলেও তাদের প্রচারণা সফল হয়েছে৷ শুধু যে ওই বাড়িটিই তারা জবরদখল করেছিল তাই নয়, মাঝে মধ্যেই নানা পরিত্যক্ত সরকারি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন বাড়ি, অফিস ভবন বা অন্যান্য স্থাপনাতেও হানা দেয় তারা৷ এই দখল সাময়িক হলেও মূল লক্ষ্য প্রচারণা৷

এই অভিযানে তাদের অন্যতম লক্ষ্য ছিল দেশবাসীকে এটা জানানো যে, প্যারিসের প্রতি ১০টি বাড়ির ১টি পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে৷ যেখানে খোদ প্যারিসের মেয়র বলছেন, শুধুমাত্র প্যারিসেই ১৬,০০০ এমন বাড়ি আছে যা কিনা দেশের পরিত্যক্ত সম্পত্তি আইনে দখলে নিতে পারে সরকার৷

বাস্তু-আন্দোলনকারীদের দাবি সরকার চাইলেই ভাল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এগুলোর সদ্ব্যবহার করতে পারে৷ এই প্রচারণায় যোগ দিয়ে সেখানে ছাত্রছাত্রী এবং তরুণ তরুণীদের সঙ্গে আবাস পেতেছিলেন অনেক পেশাজীবীও৷ যাদের মধ্যে আছেন স্থপতি, সাংবাদিক এমনকি ভায়োলিন বাদকও৷ এদের অনেকের আবাসন সংকট না থাকলেও বিষয়টিকে গণমাধ্যমের পাদপ্রদীপে আনার জন্যই এই জবরদখলকারীদের দলে যোগ দিয়েছিলেন তারা৷ আর সবাই মিলে শ্লোগান ধরেছিলেন, ‘‘দুনিয়ার বাস্তুহীন এক হও! দখল কর!''

প্রতিবেদক: মুনীর উদ্দিন আহমেদ

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক