দুঃসাহসী রবিন হুডের গল্প
ধনীর কাছ থেকে লুট করে গরীবের মধ্যে বিলিয়ে দেয়ার গল্প মনে আছে? সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে রবিন হুডের রুখে দাঁড়ানোর গল্প নিয়ে নাটক-সিনেমা-কার্টুনও হয়েছে৷ কিন্তু এখনো কেউ জানেন না, আসলেই কি রবিন হুড নামে কেউ বাস্তবে ছিল?
হলিউড হিট
‘চোরদের রাজার’ এই গল্প নিয়ে অগণিত চলচ্চিত্র হয়েছে৷ ১৯৯১ সালে কেভিন রেনল্ডসের পরিচালনায় কেভিন কস্টনার রবিন হুডের ভূমিকায় অভিনয় করেন৷ তাঁর বিশ্বাসী সাথী আজিমের ভূমিকায় ছিলেন মর্গ্যান ফ্রিম্যান৷ নটিংহ্যামের শেরিফের ভূমিকায় অভিনয় করে প্রয়াত অভিনেতা অ্যালান রিকম্যানও বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন৷
মধ্যযুগের নায়ক
মধ্যযুগের বিভিন্ন সাহিত্যকর্মে রবিন হুডের কীর্তির বর্ণনা পাওয়া যায়৷ ‘আ গেস্ট অফ রবিন হোড’ নামের এক ব্যালাডে প্রথমবারের মতো এসব কাজ এক জায়গায় করা হয়৷ ষোড়শ শতকে রচিত এই ব্যালাডে ৪৫৬টি স্তবকে দস্যুরাজ রবিনের গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়৷ এখনো পর্যন্ত রবিন হুডের ঐতিহাসিক বাস্তবতা নিয়ে গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে এই ব্যালাডকেই বিবেচনায় রাখা হয়৷
ধূর্ত শেয়াল
১৯৭৩ সালে রবিন হুডকে নিয়ে তৈরি অ্যানিমেশনে চরিত্রগুলোকে বিভিন্ন প্রাণির রূপ দেয় ডিজনি৷ রবিনকে দেখানো হয় শেয়ালের চরিত্রে, অনুগত বন্ধু লিটল জনকে ফুটিয়ে তোলা হয় ভালুক হিসেবে৷ তাঁদের লড়াই চলে সিংহ প্রিন্স জন এবং তাঁর সহযোগী নটিংহ্যামের শেরিফ নেকড়ের বিরুদ্ধে৷
মিসচিফ ইন শেরউড
থ্রিডি অ্যানিমেটেড সিরিজ ‘রবিন হুড: মিসচিফ ইন শেরউড’-এ রবিনকে দেখানো হয়েছে লাল চুলের এক নায়ক হিসেবে৷ ছয় বছর ও তার বেশি বয়সের শিশুদের জন্য তৈরি এই সিরিজে দেখানো হয়েছে, রবিন কিভাবে প্রতিবারই প্রিন্স জনকে বুদ্ধি দিয়ে পরাজিত করে৷
লুকানোর প্রিয় স্থান
শেরিফের হাত থেকে বাঁচতে এই ওক গাছের জঙ্গলেই আশ্রয় নিতেন রবিন ও তাঁর বন্ধুরা৷ ৭০০ বছরের পুরাতন এই গাছগুলো ইংল্যান্ডে মেজর ওক নামে পরিচিত৷ এই শেরউড জঙ্গল কিন্তু বাস্তবেই আছে, আর তা অবস্থিত নটিংহ্যামের পাশে৷
সত্যিকার ভালোবাসা– মারিয়ান
কখনো মারিয়ানকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে অভিজাত, কখনো সাধারণ নারীর চরিত্রে৷ মেইড মারিয়ন (কোথাও কোথাও লেডি মারিওন অফ লিফোর্ড) রবিন হুডের প্রেমিকা৷ মধ্যযুগের সাহিত্যেও তাঁকে সাহসী ও স্বাধীনচেতা নারীর চরিত্রে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে৷ ১৯৭৬ সালের রিচার্ড লেস্টারের চলচ্চিত্র ‘রবিন অ্যান্ড মারিয়ন’-এ অভিনয় করেছিলেন শন কনারি ও অড্রে হেপবার্ন৷
প্যারোডি রবিন
রবিন হুডের চরিত্র নিয়ে শুধু সিরিয়াস চলচ্চিত্র হয়েছে তেমনটি নয়৷ ‘রবিন হুড: ম্যান ইন টাইটস’ চলচ্চিত্রে এই চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে স্যাটায়ার হিসেবে৷ ১৯৯৩ সালের এই চলচ্চিত্র রবিনকে নিয়ে তৈরি করা সবচেয়ে জনপ্রিয় চলচ্চিত্রগুলোর একটি৷
সামাজিক বিচারের প্রতিচ্ছবি
রবিন হুডকে সবসময়ই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাওয়া এক নায়ক হিসেবে৷ কাল্পনিক এই হিরোর নামে গড়ে উঠেছে অনেক প্রতিষ্ঠানও৷ ২০১০ সালে বার্লিন শহরে এক বিক্ষোভ থেকে দারিদ্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ‘রবিন হুড ট্যাক্স’ চালুর দাবি ওঠে৷