1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার নারীররা

সমীর কুমার দে, ঢাকা৮ মার্চ ২০১৬

বাংলাদেশে অ্যাসিড সন্ত্রাসের ঘটনা তুলনামূলকভাবে কমেছে৷ ২০১২ সালে যেখানে ৯৮ জন নারী অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছিলেন, সেখানে ২০১৩ সালে ৮৫, ২০১৪ সালে ৭৬ জন আর ২০১৫ সালে ৭৪ জন নারী অ্যাসিডে আক্রান্ত হন৷

https://p.dw.com/p/1I8ke
Säureattentat Entstellung Säure Gesicht Frau Opfer Attentat
ছবি: picture-alliance/dpa

অ্যাসিড সন্ত্রাসে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমলেও, বিচারে সাজার পরিমাণ খুবই হতাশাব্যাঞ্জক৷ মাত্র ১০ ভাগ মামলায় অভিযুক্তদের শাস্তি হয়েছে৷ কেন সাজার হার এত কম? – এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাসিড সারভাইভাল ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী সেলিনা আহমেদ মনে করেন, পুলিশের গাফিলতি, তদন্তে দীর্ঘসূত্রিতা, পাবলিক প্রসিকিউটারদের আন্তরিকতার অভাব, আর সর্বপরি বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার কারণেই অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার নারীরা ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না৷

অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার নারীদের নিয়ে ১৯৯৯ সাল থেকে কাজ করছে অ্যাসিড সারভাইভাল ফাউন্ডেশন৷ সেখানে গত প্রায় ২৪ বছর ধরে নারী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন সেলিনা আহমেদ৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে এ নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি৷ সেলিনা মনে করেন, অ্যাসিডের সহজলভ্যতাও এই সন্ত্রাস বিস্তৃতির একটি বড় কারণ৷

ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশে অ্যাসিড সন্ত্রাসের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলুন...৷

সেলিনা আহমেদ

সেলিনা আহমেদ: অ্যাসিড সারভাইভাল ফাউন্ডেশন যখন যাত্রা শুরু করেছিল, অথবা তার পরবর্তী সময়ে ২০০১ বা ২০০২ সালের দিকে অ্যাসিড সন্ত্রাসের পরিমাণ ছিল অনেক বেশি৷ বর্তমানে সংখ্যাগত দিকটা যদি দেখি তাহলে দেখা যাবে যে, হারটা কমে এসেছে৷ গত বছর আমরা দেখেছি ৫৯টি ঘটনায় ৭৪ জন নারী অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন৷ সেই দিক দিয়ে হারটা ক্রমশ কমে আসছে৷ কিন্তু অ্যাসিড সহিংসতা বন্ধ হয়নি৷ যারা এর শিকার হচ্ছেন, ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে যাচ্ছেন৷ ফলে তাদের ন্যায়বিচার আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না৷

অ্যাসিড সন্ত্রাস প্রতিরোধে আপনাদের ভূমিকা কতখানি?

আমরা কাজ শুরু করেছিলাম দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর আগে, অর্থাৎ ১৯৯৯ সালে৷ সেই জায়গায় আমরা মনে করি, অ্যাসিড সারভাইভাল ফাউন্ডেশনই হচ্ছে সারা বিশ্বে একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যারা একটি বিশেষ ইস্যুতে কাজ করছে৷ যারা অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন তাদের জন্য যে সেবাগুলো প্রয়োজন, আমরা সেগুলো দেয়ার চেষ্টা করেছি৷ আর প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আমি বলবো, এই ফাউন্ডেশনের একার পক্ষে বাংলাদেশে অ্যাসিড সন্ত্রাস কমিয়ে আনা সহজ ছিল না৷ সেখানে সবাই, বিশেষ করে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া, এমনকি সাধারণ জনগণের সহযোগিতা এবং ডোনার এজেন্সি ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো সহযোগিতা করেছে৷ সংগঠনের যোগ্য নেতৃত্ব ও নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরাও কাজ করেছেন৷ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অ্যাসিড সন্ত্রাস কমানো সম্ভব হয়েছে বলে আমি মনে করি৷

অ্যাসিড সন্ত্রাসের ঘটনায় মামলাগুলো শাস্তির পরিমাণ কেমন?

আমাদের কাছে কিছু পরিসংখ্যান আছে, যাতে দেখা যাচ্ছে যে, যে পরিমাণ মামলা হয় তাদের শাস্তির পরিমাণ খুবই হত্যাশাবাঞ্জক৷ মাত্র ১০ ভাগ মামলায় অভিযুক্তদের শাস্তি হচ্ছে৷

যে পরিমাণ শাস্তি হওয়ার কথা সেটা হচ্ছে না কেন? আমাদের দূর্বলতাটা কোথায়?

এখানে আসলে অনেকগুলো ‘ফ্যাক্টর' কাজ করে৷ একটা মামলা যখন ফাইল হয়, তখন তদন্তের দায়িত্বে থাকে পুলিশ৷ আইনে বলা আছে, ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে৷ প্রয়োজনে এটা ৬০ কর্মদিবস পর্যন্ত বাড়ানো গেলেও, তার মধ্যে শেষ করতে হবেই৷ কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, তদন্ত দীর্ঘ সময় ধরে চলছে৷ অন্যদিকে যারা অ্যাসিড ছুড়ছে, তারা কিন্তু অনেক দিক দিয়ে ক্ষমতাবান৷ অনেক সময় সমঝোতার জন্য বা মামলা প্রত্যাহারের জন্যও চাপ আসছে৷ আবার অনেক সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের সমঝোতা হয়ে যাচ্ছে৷ তাছাড়া আমাদের কিন্তু ভিকটিম ও সাক্ষীদের প্রটেকশনের জন্য কোনো আইন নেই৷ এর ওপর আছে বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা৷ বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা হলে অনেক সময় ন্যায়বিচার পাওয়া যায় না৷ এটাও একটা বড় কারণ বলে আমি মনে করি৷ এছাড়া সরকারি কৌঁসুলিরা অনেক সময় ভালো ‘রেজাল্ট' দিলেও, অনেকক্ষেত্রেই তারা আন্তরিকতা দেখান না৷ তাই সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি একটা বড় কারণ৷ এ সব অনেকগুলো ‘ফ্যাক্টর' মিলিয়ে আমি মনে করি যে, ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না৷

কী কী কারণে আসলে অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে?

আমরা কাজ করতে গিয়ে দেখেছি সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ একটা কারণ৷ অনেক সময় দেখা যায়, অল্প বয়সি একটা মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে৷ আর সে রাজি না হলে তার ওপর অ্যাসিড ছোড়া হচ্ছে৷ ধর্ষণও একটা কারণ৷ এছাড়া যৌতুক না দেয়ায় অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে৷ আবার অনেক সময় সংসারে সাধারণ বিবাদের কারণেো নারীরা অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছেন৷ অ্যাসিডের সহজলভ্যতাও একটা বড় কারণ৷ অ্যাসিডের ব্যবহার তো আমরা বন্ধ করতে পারব না৷ কিন্তু যারা অ্যাসিড আনছে, কোথায়, কীভাবে সেটা ব্যবহার করছে, সেটা মনিটরিং ঠিকমতো হচ্ছে না৷ ফলে অনেকেই অপব্যবহার করার সুযোগ পাচ্ছে৷

অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার নারীদের মনস্তাত্ত্বিক দিক সম্পর্কে একটু বলুন...৷

যারা অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হন, তাদের শুধু উপরের অংশটা পোড়ে না, পোড়ে ভেতরটাও৷ পুড়ে যায় তার মনটাও৷ সে বিপর্যস্থ হয়ে পড়ে, হতাশ হয়ে পড়ে৷ তার মধ্যে অনেক ধরনের দুঃশ্চিন্তা কাজ করে৷ কারণ সে হয়ত দু'টি চোখই হারিয়েছে বা সে কর্মক্ষম ছিল এখন আর তার সেই কর্মক্ষমতা নেই৷ ফলে তার মধ্যে হতাশা কাজ করে এই ভেবে যে, কীভাবে আমি আগের অবস্থায় ফিরে যাব? আরেকটা বড় কারণ তার চেহারার যে রূপান্তর হয়েছে, সেটা নিয়ে সে কী করবে? এটা একটা মারাত্মক মানসিক টানাপোড়েনের বিষয়৷ শুধু বাংলাদেশের পেক্ষাপটে নয়, সারা বিশ্বেই কিন্তু সকলে চেহারা বা ‘এপিয়ারেন্সকে' বড় করে দেখে৷ তাই অনেকের মধ্যে আত্মহত্যা করার প্রবণতাও দেখা দিতে পারে৷

আমাদের তো আইন আছে, বিচার হচ্ছে, আবার একসঙ্গে অ্যাসিড সন্ত্রাসও চলছে৷ তা অ্যাসিড সন্ত্রাস সমাধানে আপনার প্রস্তাব কী?

আমি মনে করি, চিরতরে অ্যাসিড সন্ত্রাস বন্ধ করা সম্ভব৷ কারণ আমরা দেখছি যে এমন ঘটনা ক্রমেই কমে আসছে৷ আমাদের যে আইন দু'টি হয়েছে, সেই আইন দু'টি কিন্তু খুবই ‘কমপ্রিহেনসিভ' আইন৷ তবে আইনের সঠিক বাস্তবায়নাটা খুব জরুরি৷ আমরা যদি সঠিকভাবে ঐ আইন দু'টি বাস্তবায়ন করতে পারি, আমরা যে শাস্তিহীনতার সংস্কৃতি তৈরি করেছি – সেটা যদি না করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি আরো বেশি সজাগ হয়, আমাদের যে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচিগুলো রয়েছে – তা যদি অব্যহত থাকে আর দৃষ্টিভঙ্গি – যেটা আসলে এত সহজ না – যে ছেলেরা বড় হচ্ছে, তারা যদি সঠিক, ‘পজেটিভ' মেসেজগুলো পায়, তাহলে দীর্ঘমেয়াদি হলেও একটা ‘রেজাল্ট' আসবে৷ এখানে মিডিয়ারও একটা ভূমিকা আছে৷ তারা সেই ভূমিকা এ পর্যন্ত পালন করেছে৷ সেটা অব্যহত রাখতে হবে এবং সবাই মিলে আমরা যেভাবে কাজ করেছি, সেইভাবে যদি কাজ করে যেতে পারি তাহলে অবশ্যই এটা বন্ধ করা সম্ভব৷

বন্ধু, আপনি কি সেলিনা আহমেদের সঙ্গে একমত? জানান নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান