1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দীপাবলি থেকে বড়দিনে রাশ চেয়ে মামলা

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৫ নভেম্বর ২০২০

পুজোয় ভিড় নিয়ন্ত্রণে হাইকোর্টের নির্দেশ অগ্রাহ্য করার অভিযোগ একাধিক পুজো কমিটির বিরুদ্ধে৷ আদালত অবমাননার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/3kuYI
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Kachroo

নিয়ন্ত্রণের নিয়ম দীপাবলি থেকে বড়দিন পর্যন্ত কার্যকর করতে নতুন মামলাও হয়েছে৷ কেউ কেউ বাজি পোড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা চেয়েছেন৷

কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, এ বছর দীপাবলিতে বাজি পোড়ানো যাবে না৷ বাজি বিক্রিও নিষিদ্ধ৷ শুধু কালীপুজো নয়, গোটা শারদীয় উৎসবের পর্বে এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে৷ পুলিশকে এই নির্দেশ কার্যকর করতে বলা হয়েছে৷

জনস্বার্থ মামলার ভিত্তিতে দুর্গাপুজোর মুখে কলকাতা হাইকোর্ট একগুচ্ছ নির্দেশিকা দিয়েছিল করোনা সংক্রমণ রোধ করতে৷ ‘নো এন্ট্রি' বোর্ড লাগানো থেকে শুরু করে মণ্ডপের ভিতর উদ্যোক্তাদের উপস্থিতির সংখ্যা ঠিক করে দেওয়া— এমন নির্দেশিকার পরিপ্রেক্ষিতে মহাষ্টমী পর্যন্ত অনেকটাই সংযম দেখা গিয়েছিল৷ নানা কারণে কলকাতায় এবার জনপ্লাবন দেখা যায়নি৷ কিন্তু নবমী থেকে পরিস্থিতি কিছুটা বদলায়৷ অভিযোগ, কলকাতার একগুচ্ছ পূজা কমিটি আদালতের নির্দেশ না মেনে মণ্ডপে দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে দিয়েছে৷ এই কমিটির বিরুদ্ধে অবমাননার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে আদালতে৷

কোভিডের ফলে ফুসফুসজনিত অসুস্থতা প্রবল আকার ধারণ করে: নব দত্ত

সুরুচি সংঘ নাকতলা উদয়ন সংঘ, বেহালা নতুন দল, বড়িশা ক্লাব, কাশী বোস লেন, হরিদেবপুর ৪১ পল্লী, চোরবাগান, সন্তোষপুর লেক পল্লী, টালা প্রত্যয় ১ ও ২ পূজা কমিটির বিরুদ্ধে আদালতের পাশাপাশি কলকাতা পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে৷ আঙুল উঠেছে পূজা ঘিরে আয়োজিত প্রতিযোগিতার আয়োজক সংস্থার বিরুদ্ধেও৷ অনেক ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা মাস্ক ব্যবহার করেননি বলে দাবি করা হয়েছে আবেদনে৷ মণ্ডপে ভিড় থেকে থেকে প্রতিযোগিতায় পুরস্কার বিতরণের ছবি পেশ করা হয়েছে আদালতের কাছে৷ অন্যতম মামলাকারী অজয় দে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘নির্দেশ যাই থাক, সমাজের একাংশের মানুষ ক্ষমতাবলে তা অগ্রাহ্য করতে অভ্যস্ত৷ তাই এ বারও দেখা গিয়েছে, মাইকে ঘোষণা করে দর্শনার্থীদের মণ্ডপের ভিতরে ডাকা হয়েছে৷ প্রশাসন এ সবে উৎসাহ দিয়েছে৷ তাই কালীপুজো থেকে বড়দিন পর্যন্ত এই প্রবণতা দেখা যাবে৷ যে কোনও ভাবেই জমায়েত রুখতে হবে৷'

করোনা পরিস্থিতিতে উৎসব ঘিরে একের পর এক মামলা দায়ের হয়েছে আদালতে৷ আইনজীবী অঙ্কন বিশ্বাস জানান, কোনও মামলায় দীপাবলিতে বাজি পোড়ানো ও তার আগে বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে৷ কোনও মামলায় ছটপুজোয় জলাশয় ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার দাবি উঠেছে৷ বাজি নিষেধের আর্জি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত৷ আতসবাজি থেকে যে দূষণ ছড়ায় তা কোভিড পরিস্থিতিকে আরো প্রতিকূল করে তুলবে বলে বিশেষজ্ঞদের মত৷ পরিবেশকর্মী নব দত্ত এ বছর আলোর উৎসব বাতিল করার পক্ষে জোরালো যুক্তি দিয়েছেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘কোভিডের ফলে ফুসফুসজনিত অসুস্থতা প্রবল আকার ধারণ করে৷ বাজি পোড়ালে বাতাসে দূষণ বাড়বে, তাতে রোগীর কষ্টও বাড়বে৷’

এ বার অন্তত প্রদীপ জ্বেলে দীপাবলি হোক: তড়িৎ রায়চৌধুরী

দিল্লি ইতিমধ্যে ব্যাপক দূ্ষণের কবলে পড়েছে৷ নাড়া পোড়ানো শুরু হওয়ায় অতীতের পরিস্থিতি ফিরে এসেছে৷ তার উপর দীপাবলির আতসবাজি সমস্যা বাড়াবে৷ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধিকর্তা তড়িৎ রায়চৌধুরী বলেন, ‘বাজির মধ্যে ভারি ধাতু থাকে৷ অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজের মতো ধাতু পুড়লে বিষাক্ত গ্যাস বেরোয়৷ শীতকালে বাতাসের গতি ধীর থাকায় তা বেশিদূর যেতে পারে না৷ কুয়াশায় আটকে থাকে৷ এই বাতাস করোনা আক্রান্ত রোগীর সঙ্কট বাড়িয়ে দেবে৷ তাই এ বার অন্তত প্রদীপ জ্বেলে দীপাবলি হোক৷’

গত বছর ছটপুজো নিয়ে কলকাতায় ব্যাপক বিতর্ক হয়েছিল৷ জাতীয় পরিবেশ আদালত রবীন্দ্র সরোবর-সহ অন্যান্য জলাশয় ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও তালা ভেঙে সরোবরে প্রবেশ করেন পুণ্যার্থীরা৷ পুলিশ-প্রশাসন তাঁদের রোখার চেষ্টা করেননি বলে অভিযোগ৷ এ বার আগেভাগে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানিয়েছে, সরোবর ছটপুজোয় ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হোক৷ নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে এই মামলার শুনানি হতে পারে৷ নব দত্ত বলেন, ‘ছটে জলাশয়ের মারাত্মক ক্ষতি হয়৷ জীববৈচিত্র্যে ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়ে৷ জল থেকে প্লাস্টিক তুলে নিলে সেই ক্ষতি এড়ানো যায় না৷ কিন্তু ভোটের দিকে তাকিয়ে সরকার পরিবেশের দিকটি অগ্রাহ্য করছে৷’

যদিও রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় আবেদন জানিয়েছেন, এ বার যেন বাজি পোড়ানো না হয়৷ তাতে আবার আশঙ্কার সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বাজি ব্যবসায়ীরা৷ তাঁরা ইতিমধ্যে বসে গিয়েছেন বাজির পসরা নিয়ে৷ বাজি বিক্রি বন্ধ হলে তাঁদের ক্ষতি পোষাবে কে, এমন নানা সমস্যার গোলকধাঁধাঁয় শারদীয় উৎসব৷