1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দিল্লি-আবু ধাবি নতুন সেতুবন্ধন

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
২৯ জানুয়ারি ২০১৭

সংযুক্ত আরব আমিরাতের যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ানের ভারত সফর দু'দেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে৷ সই হয়েছে ১৪টি চুক্তি, যাতে বিনিয়োগ ছাড়াও রয়েছে অশোধিত তেলের মজুত ভাণ্ডার গড়ার অঙ্গিকার৷

https://p.dw.com/p/2WVX1
সংযুক্ত আরব আমিরাতের যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ানের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী
ছবি: UNI/A. Kar

ভারতের ৬৮তম সাধারণতন্ত্র দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ানের উপস্থিতি হোক, বা কুচকাওয়াজে সেদেশের সেনাবাহিনীর যোগদান, সবই ছিল প্রতীকী৷ আসল কথা, আবু ধাবিকে অর্থিনীতির ক্ষেত্রে ‘স্ট্র্যাটিজিক পার্টনার' হিসেবে পাওয়া অবশ্যই মোদী প্রশাসনের অন্যতম কূটনৈতিক সাফল্য৷ আর ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন মোদী৷ ২০১৫ সালে মোদীর আবু ধাবি সফর সেদিক থেকে সম্পর্কের বরফ অনেকটাই গলাতে পেরেছিল, যার পূর্ণতা পেল এবার৷

 

সন্ত্রাস বা ধর্মের নামে জঙ্গিপনা দমনে দু'দেশের নীতিতে যে কোনো ফারাক নেই, যুবরাজের সফর শেষে প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে সেকথাই উচ্চকণ্ঠে স্বীকার করেলেন উভয় নেতা৷ পাকিস্তানের নাম না করলেও তার অভিমুখ যে ভারতের প্রতিবেশী পাকিস্তানের দিকে, সেটা সহজবোধ্য৷ সংযুক্ত আরব আমিররাত নিজেও সন্ত্রাসের বলি৷ হালে আফগানিস্তানের কান্দাহারে তালিবান জঙ্গিদের হামলায় নিহতদের পাঁচজন সেদেশের কূটনীতিক৷ ৯০-এর দশকে এই তালিবানকেই সমর্থন করেছিল আবি ধাবি, সৌদি আরব এবং পাকিস্তান৷ তাই দিল্লি-আবু ধাবির অবস্থান আইএস বা ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের পক্ষে এক বড় ধাক্কা বলেই মনে করা হচ্ছে৷

উপসাগরীয় অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আবু ধাবি হবে ভারতের ‘স্প্রিংবোর্ড'৷ আর্থিক বিনিয়োগের দিক থেকে ভারতে, বিশেষ করে ভারতের পরিকাঠামো এবং তেলের মজুত ভাণ্ডার গড়ে তুলতে, আবু ধাবির ৭৫ বিলিয়ান ডলার বিনিয়োগের আশ্বাসও সে কথা প্রমাণ করে৷ পরিকাঠামো  নির্মাণ ক্ষেত্রে থাকবে নৌ-বন্দর, জাতীয় সড়ক, বিমান বন্দর ইত্যাদি৷ এ জন্য গড়ে তোলা হবে পরিকাঠামো ফান্ড৷ ভারত ২০২০ সালে দুবাইয়ের ‘ওয়ার্ল্ড এক্সপো'-তে ব্যাপকভাবে অংশ নেবে৷ ভারতে ‘ম্যানুফ্যাকচারিং' এবং পরিষেবা ক্ষেত্র, ডিজিটাল অর্থনতি, মেধা সম্পদে লাভবান হতে পারে সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ তবে তার আগে জরুরি একটি প্রশাসনিক প্রক্রিয়াকরণ ‘মেকানিজম'৷

দু'দেশের শীর্ষ স্তরের বৈঠকের পর সই হয় প্রতিরক্ষা, পরিকাঠামো, বাণিজ্য, ভারতে অশোধিত তেলের মজুত ভাণ্ডারসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ১৪টি সহযোগিতামূলক চুক্তি৷ অশোধিত তেল আমদানির স্ট্র্যাটিজিক পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ সিস্টেমের প্রশ্নে যে সমঝোতা হয়েছে, তাতে আবু ধাবি জাতীয় তেল সংস্থা অ্যাডনক কর্নাটকের ম্যাঙ্গালোরে মাটির নীচে গড়ে তুলবে এক কোটি ৮০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের জরুরিকালীন তৃতীয় মজুত ভাণ্ডার৷ ভারতে গড়ে দৈনিক যে পরিমাণ তেল খরচ হয়, তাতে এটা ১০ থেকে ১৪ দিনের মজুত৷ জানা গেছে, সরবরাহ শুরু হবে এই বছরের শেষার্ধে৷ এ নিয়ে দিল্লি-আবি ধাবির মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালে৷ এই মজুত ভাণ্ডার দেশের জাতীয় নিরাপত্তার মতো জরুরি অবস্থায় ব্যবহার করার অধিকার থাকবে ভারতের৷ উল্লেখ্য, ম্যাঙ্গালোরের ভূগর্ভস্থ মজুত ভাণ্ডারে ইরানের ৬০ লাখ ব্যারেল অশোধিত তেলও মজুত থাকবে৷ অশোধিত তেলের আরেকটি মজুত আছে অন্ধ্রপ্রদেশের ভাইজাগে৷ সেখানে মজুত থাকে ৭৬ লাখ ব্যারেল ইরাকি তেল৷ বিশ্বে অশোধিত তেলের মজুত ভাণ্ডার সবথেকে বড়৷ তারপর চীনের৷ যদিও চীন তার মজুত ভাণ্ডারের পরিমাণ জানাতে অনিচ্ছুক৷

প্রধানমন্ত্রী মোদীর বাসভবনে এক একান্ত বৈঠকে আবু ধাবির যুবরাজ তাঁর দেশে জঙ্গিদের কোনোরকম ঠাঁই দেওয়া হবে না বলে আশ্বাস দেন৷ এতে বিদেশ মন্ত্রকের কর্তাব্যক্তিদের আশা, সন্ত্রাসে মদতদাতা মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমসহ অন্য কুখ্যাত জঙ্গিদের ভারতের হাতে তুলে দেবার পথ অনেকটাই সাফ হলো৷ এছাড়া  যুবরাজ প্রতিশ্রুতি দেন যে, আফগানিস্তানসহ এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও সুস্থিতি বজায় রাখতে তত্পর হবে আবু ধাবি৷

প্রসঙ্গত, ভারতে মুসলিম সমাজের একটা বড় অংশ মোদী সরকারকে সংখ্যালঘু বিদ্বেষীর তকমা দেওয়া সত্ত্বেও মোদী যেভাবে উপসাগরীয় মুসলিম দেশগুলিকে পাশে আনতে পেরেছেন, সেটা মোদী সরকারের এক বড় কূটনৈতিক কৃতিত্ব তো বটেই!

বন্ধু, হঠাৎ করে আবু ধাবির প্রতি এতটা নরম কেন ভারত? আপনার মতামত জানান নীচের ঘরে৷

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান