1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তুরস্কে রাজনৈতিক বিতর্কে আয়া সোফিয়া

২ জুলাই ২০২০

ইস্তাম্বুলের জগদ্বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তর করতে চান প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ান৷ বলা হচ্ছে, ভোটার টানতেই এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি৷ তবে এই পরিকল্পনার বিরোধীতা করছেন অনেকে৷

https://p.dw.com/p/3eg1o
আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তর করতে চান প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান৷ অভিযোগ রয়েছে, ভোটার টানতেই এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি৷
ছবি: DW/U. Danısman

তুরস্কের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ আয়া সোফিয়া৷ প্রতি বছর লাখো দর্শনার্থী ইউনেস্কোর বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি দেখতে যান৷ অনন্য এক স্থাপত্যশিল্পই নয়, এটি পরিণত হয়েছে তুরস্কের রাজনীতির প্রতীকেও৷

ষষ্ঠ শতকে বাইজেন্টাইন সম্রাট জাস্টিনিয়ানের সময়ে আয়া সোফিয়া নির্মাণ করা হয়েছিল৷ ১৪৫৩ সালে অটোমানরা কনস্টান্টিনোপল জয়ের পর দ্বিতীয় সুলতান মেহমেদ ক্যাথিড্রালটিকে মসজিদে রূপান্তর করেন৷ আধুনিক তুরস্কের স্থপতি মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক এটিকে জাদুঘরে পরিণত করেন ১৯৫৩ সালে৷ এরপর থেকে অসাম্প্রদায়িক তুরস্কের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে আয়া সোফিয়াকে৷

এই পরিচয়ে আবারও পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ান৷ এর্দোয়ানপন্থিরা বরাবরই আয়া সোফিয়াকে কনস্টান্টিনোপলের খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে ইসলামের শেষ্ঠত্বের প্রতীক হিসেবে দেখেন৷ কামাল আতাতুর্কের সিদ্ধান্তকে উল্টে দিয়ে এটিকে আবারও মসজিদে রূপান্তরের দাবি ছিল তাদের৷ সেই চিন্তাকেই এবার বাস্তবে রূপ দেয়ার পথে হাঁটছেন এর্দোয়ান৷ ১৯৩৫ সালে আয়া সোফিয়াকে জাদুঘর হিসেবে ঘোষণা দিয়ে আতাতুর্ক যে ফরমান জারি করেছিলেন তা বৈধ ছিল কিনা বৃহস্পতিবার তা নিয়ে বসবে তুরস্কের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক আদালত, দ্য কাউন্সিল অব স্টেইট৷

এর্দোয়ানের রাজনৈতিক দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের (একেপি) ডেপুটি চেয়ারম্যান নুমান কর্তুলমুস এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, ‘‘আয়া সোফিয়া আমাদের ভৌগোলিক সম্পত্তি৷ তলোয়ার দিয়ে যারা এটি জয় করেছেন এই সম্পত্তির অধিকার তাদেরই৷'' নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আত্মবিশ্বাসী একেপি৷ তার অংশ হিসেবে গত মাসে ১৪৫৩ সালে অটোমানদের কন্টানটিনোপল (বর্তমানে ইস্তানবুল) জয়ের বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়া সোফিয়ার ভেতরে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়৷

এর্দোয়ানের এই উদ্যোগকে একেপির ভোটার আকর্ষণের কৌশল হিসেবে দেখছেন অনেকে৷ কেননা বেশ কিছু জরিপে সাম্প্রতিক সময়ে ক্ষমতাসীন দলটির জনসমর্থন হারানোর ইঙ্গিত মিলছে৷ কিন্তু এই ধরনের উদ্যোগ সেখানে বড় ধরনের বিরোধেরও জন্ম দিতে পারে৷ ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চের প্রধান প্রথম পেট্রিয়ার্ক বার্থোলোমিউ আয়া সোফিয়াকে মসজিদে পরিণত করার বিরোধিতা করেছেন৷ তিনি বলেন, আয়া সোফিয়া মানব সভ্যতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক স্থাপত্য৷ এটি কারো একক সম্পত্তি নয়

আয়া সোফিয়াকে রাজনৈতিক বিতর্কের হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তোলার বিরোধিতা করেছেন ইস্তাম্বুলের গ্রিক বংশোদ্ভুতদের সংগঠনের প্রধান নিকোলাস উজোনোলুও৷ তিনি মনে করেন এই স্থাপত্যটি ধর্ম এবং সভ্যতার মধ্যে স্বাধীনতার মেলবন্ধন ঘটিয়েছে৷ একে ‘তলোয়ারের বিজয়' হিসেবে দেখানো সমাজের জন্য ক্ষতিকর৷

আয়া সোফিয়াকে নতুন করে পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন দেখেন না দেশটির ইতিহাসবিদেরাও৷ ইস্তাম্বুলে বোয়াজিসি  বিশ্ববিদ্যালয়ের এডহেম এলডেম বলেন, সারা পৃথিবীতে এমন হাতে গোনা কয়েকটি নিদর্শন রয়েছে, যা রক্ষা করা উচিত৷ তার মতে, আয়া সোফিয়া সর্বজনীন এক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য৷ সারা বিশ্বের কাছে তা তুলে ধরারই পক্ষপাতী তিনি৷

ধর্মতত্ত্ববিদ এহসান এলিয়াচিকেরও একই মত৷ তিনি বলেন, আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তরের পেছনে ধর্মীয় কোনো যৌক্তিকতা নেই৷ ‘তলোয়ার দিয়ে জয়ের মাধ্যমে' কোনো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে জোরপূর্বক দখল করা কোরআনে নিষিদ্ধ বলেও মত দেন তিনি৷

যদিও প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান এসব কোনো কথাতেই কর্ণপাত করছেন না৷ সম্প্রতি তিনি গ্রিক সম্প্রদায়ের প্রতি বলেন, ‘‘আপনারা বলেছেন, ‘অনুগ্রহ করে আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তর করবেন না'৷ তুরস্ক কি আপনাদের কথায় চলবে? আমরা কাউন্সিল অব স্টেটের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি৷ এরপরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে৷''

 পেলেন উঙ্কা, ডানিয়েল বেলুট/এফএস/এসিবি