1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তিনি আছেন, আবার নেইও!‌

রাজীব চক্রবর্তী নতুনদিল্লি
২৬ জুন ২০১৯

ভারতে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সভাপতি কে?‌ এই প্রশ্নের জবাবে রাহুল গান্ধীর নাম নেওয়ার আগে দু-‌বার ভাবতে হয়৷ তিনি পদে আছেন, নাকি নেই? কারও জানা নেই৷ নির্বাচনে দলের ভরাডুবির পর সাংগঠনিক রদবদল চাইছেন রাহুল৷

https://p.dw.com/p/3L7T7
Indien Politiker Rahul Gandhi
ছবি: Ians

শুরুটা করতে চাইছেন নিজেকে দিয়ে৷ কিন্তু, নারাজ দল৷ শতাব্দী প্রাচীন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পদ থেকে সরে আসার কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন রাহুল গান্ধী৷ এ-‌ও জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর জায়গায় গান্ধী পরিবারের কাউকে বসানো চলবে না৷ নতুন সভাপতি হতে হবে গান্ধী পরিবারের বাইরের কাউকে৷ দলের ওয়ার্কিং কমিটিকে ভার দিয়েছেন নতুন সভাপতি খোঁজার৷

কিন্তু, এই ঘটনা ২৫ মে-‌র৷ তারপর থেকে কংগ্রেসের নেতারা কেউই রাহুলের বিকল্প হিসেবে কাউকে খুঁজতে নারাজ৷ বরং তাঁরা নানা ভাবে, সে বুঝিয়ে-‌সুঝিয়ে হোক বা আন্দোলনের ভঙ্গিতে রাহুলকেই সভাপতি পদে থেকে যাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে চলেছেন৷ওদিকে, রাহুলও গোঁ-‌ধরে বসে রয়েছেন৷ পদ তিনি ছাড়বেনই৷ পরিস্থিতি এমন, সভাপতি পদে রাহুল আছেন, আবার নেইও৷ এমন অবস্থায় দেশের প্রধান বিরোধী দল কার্যত খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে৷ কারও জানা নেই, সভাপতি পদে রাহুল আছেন কি নেই, তিনি আর কতদিন দায়িত্ব সামলাবেন বা তাঁর উত্তরসূরী কে?‌

তবে, রাহুল অনড়৷ তিনি আর পদে থাকবেন না৷ বুধবার নতুন দিল্লিতে যুব কংগ্রেস-‌সহ বিভিন্ন শাখা, সংগঠন সভাপতি  পদেরাহুলকে রেখেদেওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিক দাবি জানিয়েছে৷ দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত একাধিকবার রাহুলের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেছন৷ বোঝানোর চেষ্টা করেছেন মা সোনিয়া গান্ধী, বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রও৷ তবে, বরফ গলেনি৷ তাঁর গোঁ তিনি তো পদ ছাড়বেনই, সেইসঙ্গে গান্ধী পরিবারের বাইরের কেউ সভাপতি হবেন৷

এরইমধ্যে রাহুল-‌পরবর্তী সভাপতি হিসেবে উঠে আসছে অশোক গেহলটের নাম৷ এছাড়াও শোনা যাচ্ছে মুকুল ওয়াসনিকের নাম৷ দুজনেই পোড় খাওয়া নেতা৷

দলের মধ্যেও তাঁকে সভাপতি চেয়ে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে: গৌতম লাহিড়ি

এই বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক গৌতম লাহিড়ি ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন, ‘‌‘‌২০১৯-‌এর নির্বাচনে ভরাডুবির পর রাহুল গান্ধী সভাপতির পদ ছাড়তে চেয়েছেন৷ তারপর থেকেই কংগ্রেস দোলাচলে পড়েছে৷ গান্ধী পরিবারের কাউকে শীর্ষ পদে আনা হলে অন্য কাউকে দলকে সংঘবদ্ধ রাখা যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে৷ রাহুল নিজে বলেছেন তিনি নতুন সভাপতি নির্বাচনে তিনি নাক গলাচ্ছেন না৷ তারপর থেকে এখন পর্যন্ত রাহুল যতগুলি মন্তব্য করেছেন, সবগুলিই দলের সভাপতি হিসেবে৷ অর্থাৎ তিনি এখনও সভাপতি পদে রয়েছেন৷ পাশাপাশি বিধানসভা নির্বাচনী প্রস্তুতি বৈঠক শুরু করেছেন৷ দলের মধ্যেও তাঁকে সভাপতি চেয়ে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে৷ নতুন নাম নিয়ে জল্পনা চলছে৷ তাঁদের মধ্যে অন্যতম নামটি হল দলের প্রবীন নেতা তথা রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট এবং কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির দলিত নেতা মুকুল ওয়াসনিক৷ তবে, এখনও কোনও নাম চূড়ান্ত হয়নি৷'‌'

‌রাজনৈতিক দক্ষতা, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা এবং উভয় ক্ষেত্রে সফলতার নিরিখে কংগ্রেসের অন্য নেতাদের তুলনায় ঢের বেশি এগিয়ে রয়েছেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী৷ দল মনে করছে, রাজস্থানে এবারের পরাজয়ের অন্যতম কারণ হল, গেটলট ও শচীন পাইলটের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব৷ সেক্ষেত্রে গেহলটকে দলের সর্বোচ্চ পদে বসানো হলে এক ঢিলে দুই পাখি মারা সম্ভব হবে৷ একদিকে যেমন দল পরিচালনার ভার অভিজ্ঞ সংগঠকের হাতে থাকবে, ঠিক তেমনই রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে শচীন পাইলটকে বসানো হলে রাজ্যে দুই নেতার দীর্ঘকালীন দ্বন্দ্বও মিটবে৷

গত ২৫ মে দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশের পাশাপাশি একগুচ্ছ শর্ত রেখেছিলেন তিনি৷ যারমধ্যে অন্যতম হল, তাঁর(‌রাহুল)‌ উত্তরসূরি হিসেবে গান্ধী পরিবারের কাউকে সভাপতির পদে বসানো চলবে না৷ সরাসরি ইঙ্গিত ছিল বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর দিকে৷ এমনকী লোকসভায় দলীয় নেতার পদটিও নিতে চাননি তিনি৷ সোনিয়া গান্ধী বেছে নিয়েছেন বাংলার নেতা অধীর চৌধুরিকে৷

রাহুল পদত্যাগ করতে চেয়েছেন কমিটি তা গ্রহণ করেননি: শুভঙ্কর সরকার

রাহুল গান্ধীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বাঙালি কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর সরকার অবশ্য এখনই রাহুলের বিকল্প নিয়ে চিন্তিত নন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানালেন, ‘‌‘‌কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়৷ এই কমিটির কাছে রাহুল পদত্যাগ করতে চেয়েছেন৷ কমিটি তা গ্রহণ করেননি৷ রাহুল কখনও নিজের অবস্থান বদল করেন না৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে মনে রাখতে হবে, কংগ্রেস ও গান্ধী পরিবার একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে রয়েছে৷ নতুন সভাপতি পদে যাঁর নাম আসুক না কেন, ওয়ার্কিং কমিটি বিচক্ষণভাবে বিচার করবে৷ ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, এখনই কোনও নাম নিয়ে আলোচনা করা উচিত হবে না৷ অশোক গেহলট অবশ্যই যোগ্য নেতা৷ কিন্তু, কংগ্রেসকে শক্তিশালী করতে রাহুলকে অনেক বেশি প্রয়োজন৷'‌'‌ সম্প্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রাহুল জানিয়েছেন, তাঁর উত্তরসূরি খোঁজার দায়িত্ব দলের৷ তিনি এ বিষয়ে নাক গলাবেন না৷‌

কংগ্রেস সূত্রের খবর, সভাপতি হিসেবে অশোক গেহলটকে পছন্দ গান্ধী পরিবারেরও৷ তাছাড়া একসঙ্গে দলের সভাপতি ও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে এদেশে৷ যেমন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক, উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব এবং মায়াবতী, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, তামিলনাড়ুর প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা৷