1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তাবলিগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষে নিহত ১

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২ ডিসেম্বর ২০১৮

টঙ্গিতে ইজতেমা মাঠে অবস্থানকে কেন্দ্র করে তাবলিগ জামায়াতের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত একজন নিহত ও দুই শতাধিক ব্যক্তি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷ সংঘর্ষের পর শনিবার বিকেলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে৷

https://p.dw.com/p/39GYN
ছবি: bdnews24.com

ঢাকার অদূরে গাজীপুর জেলার টঙ্গির তুরাগ নদীর তীরে প্রতিবছর ডিসেম্বর-জানুযারিতে তাবলিগ জামায়াতের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় দুইভাগে৷ এবার নির্বাচনের কারণে ডিসেম্বরের ইজতেমা পিছিয়ে যায়৷ তাবলিগ জামায়াত হল মুসলমানদের বিশ্বব্যাপী একটি দাওয়াতি সংগঠন৷ আর বিশ্ব ইজতেমা হল তাদের বাৎসরিক দাওয়াতি সমাবেশ৷ এখানে সারাবিশ্ব থেকে তাবলিগের কয়েক লাখ মুসল্লি প্রতিবছর এই ইজতেমায় যোগ দেন৷ গত ৫০ বছর ধরে ইজতেমা বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে৷ 

Imdadul Haq.mp3 - MP3-Stereo

তবে, গত কয়েক বছর ধরে তাবলিগ জামায়াতের নেতৃত্ব নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়৷ এখন তাবলিগ দুই ভাগে বিভক্ত৷ একাংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভারতের মাওলানা সাদ কান্দলভী৷ এবং আরেক অংশের নেতৃত্বে আছেন বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়ের আহমেদ৷ সাদ দেওবন্দ বিরোধী এবং জুবায়ের দেওবন্দপন্থি৷ মাওলানা জুবায়েরের সঙ্গে আছেন বাংলাদেশের হেফাজত ও কওমীপন্থিরা৷ গত বছর ইজতেমায় মাওলানা সাদ ঢাকায় আসলেও তাকে ফিরে যেতে হয় ইজতেমায় যোগ না দিয়ে৷

এবার মাওলানা সাদের অনুসারীরা ১১, ১২ ও ১৩ জানুয়ারি বিশ্ব ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করেন৷ অন্যদিকে, মাওলানা জুবায়েরপন্থিরা ১৮, ১৯ ও ২০ জানুয়ারি ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন৷ ইজতেমার প্রস্তুতিমূলক সভাকে বলা হয় জোড় ইজতেমা৷ মাওলানা সাদের অনুসারীরা ৭ ডিসেম্বর এই জোড় ইজতেমার আয়োজন করেছিল টঙ্গির ইজতেমা মাঠে৷ আর মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা ১১ ডিসম্বর৷ 

গাজীপুরের সাংবাদিক রায়হানুল ইসলাম আকন্দ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গত কয়েকদিন ধরেই সাদ অনুসারীরা ইজতেমা মাঠে অবস্থান নিতে শুরু করেন৷ আর তাদের অবস্থানের কথা জানতে পেরে জুবায়েরের অনুসারীরা ইজতেমা মাঠের আশপাশের গ্রামে অবস্থান নেয়৷ তারা যাতে ইজতেমা মাঠে ঢুকতে না পারে সেজন্য সাদপন্থিরা ইজতেমা মাঠে ঢোকার সব পথ বন্ধ করে দেয়৷ শনিবার ফজরের নামাজের পর জুবায়েরপন্থিরা ইজতেমা মাঠের বিভিন্ন প্রবেশ পথে জড়ো হলে দু'পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়৷ দুই পক্ষ পরস্পরকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মত ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে৷ দুই পক্ষের কয়েক হাজার মুসল্লির মধ্যে এই সংঘর্ষ চলে দুপুর ১টা পর্যন্ত৷ সংঘর্ষে দু'শরও বেশি মুসল্লি আহত এবং একজন নিহত হন৷''

নিহত মুসল্লির নাম ইসমাইল হোসেন (৭০)৷ মুন্সিগঞ্জ জেলার মিলিয়াপাড়া গ্রামে তাঁর বাড়ি৷ তিনি ইজতেমা মাঠে অবস্থান করছিলেন এবং মাওলানা সাদ গ্রুপের অনুসারী বলে জানা গেছে৷ টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ডয়চে ভেলেকে একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে৷ দুই পক্ষই ইজতেমা মাঠ ছেড়ে গেছে৷ এখন ইজতেমা মাঠ ফাঁকা৷ সেখানে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করছেন৷''

এদিকে, দুপর ১টার দিকে র‌্যাব ও পুলিশের বিপুল সংখ্যক সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন৷ তিনটার পর থেকে পুলিশের উপস্থিতিতে দুই গ্রুপের সদস্যরাই ইজতেমা মাঠ এবং আশপাশের এলাকা ছেড়ে চলে যায়৷ তখন ঢাকার এয়ারপোর্ট এলাকায়ও এক গ্রুপের সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা যায়৷ ওই সময় র‌্যাবের হেলিকপ্টার টহলও চলে৷

এমদাদুল হক বলেন, ‘‘আমরা দুই গ্রুপের মুরব্বিদের নিয়ে বৈঠকের পর তারা ইজতেমা মাঠ এবং আশাপাশ এলাকা থেকে চলে যেতে সম্মত হন৷ দুই পক্ষই ইজতেমার প্রস্তুতি সভা জোড় ইজতেমা না করতে সম্মত হন৷ তারা মনে করেন ইজতেমা একটি ভালো কাজ৷ এটা নিয়ে তারা আর সংঘাত চান না৷''

Raihanul Islam Akond.mp3 - MP3-Stereo

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘নির্বাচনের আগে কোনো ধরনের ইজতেমা হবেনা৷'' তিনি সব পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি তাবলিগের দুই গ্রুপের মুরব্বিদের সঙ্গে বেঠক করেছেন৷ তবে তাবলিগের কোনো মুরব্বি কথা বলতে রাজি হননি৷

উল্লেখ্য, তাবলিগের বিবাদমান উভয় পক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম৷ তিনি এক বিবৃতিতে লিখেছেন, ‘এ ধরনের ঘটনা নিঃসন্দেহে তাবলিগ জামাতের জন্য একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে৷ কোন ব্যক্তি বিশেষের ওপর দীনের সুমহান কাজ নির্ভরশীল নয়৷ এ বাস্তবতা সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে৷''