ঢাকায় লকডাউনের প্রথম তিনদিন
করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার গত ৫ এপ্রিল থেকে সাতদিনের জন্য দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করেছে৷ লকডাউনের প্রথম তিনদিনে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা প্রায় স্বাভাবিক দেখা গেছে৷
১১ দফা নির্দেশনা
করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ও মৃত্যু মোকাবিলায় সরকার ১১ দফা নির্দেশনা দিয়ে ৫ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করে৷ নির্দেশনাগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল হোটেল বা রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়া যাবে না৷ তাই ঢাকার বড় হোটেলগুলোকে শুধু দোকানের অংশবিশেষ খুলে পার্সেল খাবার বিক্রি করতে দেখা যায়৷
যাত্রীদের অভিযোগ ‘ভাড়া বেশি’
লকডাউনের প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে প্রধানসড়কে রিক্সা ও সিএনজি অটোরিক্সার সংখ্যা ছিল উল্লেখযোগ্য৷ একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেন, গণপরিবহন বন্ধের সুযোগে যাত্রীদের কাছে ইচ্ছেমতো ভাড়া হাঁকছেন চালকেরা৷ অনেকে বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত ভাড়ায় গন্তব্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন৷ তবে এই প্রতিবেদকের কাছে রিক্সা ও অটোরিক্সার চালকেরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেন৷
এমন লকডাউনে শুধুই ভোগান্তি
লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে কথা হয় সবুজ ইসলামের সঙ্গে৷ তিনি সস্ত্রীক বাসস্ট্যান্ডে এসেছিলেন শ্বশুরের জানাজায় যোগ দিতে গ্রামের বাড়ি যাবেন বলে৷ কিন্তু কোন দূরপাল্লার বাহন না পেয়ে ক্ষোভের সুরে বলেন, ‘‘এ বছরের এটা কোনো লকডাউনই না, শুধু জনগণের ভোগান্তি৷ বন্ধ করলে সবই বন্ধ করা উচিত ছিল৷’’
বন্ধ দূরপাল্লার গণপরিবহন
লকডাউন কার্যকরের অংশ হিসেবে তৃতীয় দিনে মহাখালীর টাঙ্গাইল বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, সেখান থেকে কোনো দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি৷ দূরপাল্লার বাস ছাড়াও গণপরিবহন হিসেবে বন্ধ আছে ট্রেন, লঞ্চ এবং অভ্যন্তরীণ বিমান৷ এছাড়া বন্ধ রয়েছে শপিং মল, মার্কেট এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ৷
কাঁচাবাজারে নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই
প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের কাঁচাবাজার চালু রাখার নির্দেশনা থাকলেও সরেজমিনে তার ছিটেফোঁটাও পাওয়া গেল না৷ বাজারের কয়েকজনের সাথে এ ব্যাপারে কথা বললে তারা জানান, এখানে এত কিছু মানা সম্ভব না৷
লকডাউনেও যানজট
ছবিটি বুধবারের৷ লকডাউনের তৃতীয় দিনে পান্থপথ সিগন্যালে দেখা গেল বেশ বড়সড় যানজট৷ জটে আটকা পড়া একজন যাত্রী এই প্রতিবেদককে দেখে বলেন, ‘‘লকডাউন চলাকালে জ্যামের নজির পৃথিবীর আর কোনো দেশে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে৷’’
গণভোগান্তি নিরসনে চালু সিটি বাস
লকডাউনের প্রথম দুই দিনে অফিস চলাকালীন গণপরিবহন বন্ধের কারণে সৃষ্ট ভোগান্তিতে জনমনে চরম ক্ষোভ এবং অসন্তোষের জন্ম হয়, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে৷ সে কারণে সরকার বুধবার থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি প্রদান করেছে৷
ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ
লকডাউনের প্রথম এবং দ্বিতীয় দিনে ঢাকার নীলক্ষেত মোড় এবং নিউমার্কেট এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন৷ তাদের দাবি, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারাও ব্যবসাপরিচালনা করতে চান৷ এজন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপিও পেশ করেছেন বলে জানান একজন নেতা৷
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা
গাবতলী, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ি, মহাখালীর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথে ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ব্যক্তিগত গাড়িতে অবৈধভাবে দূরপাল্লায় ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন হচ্ছে কিনা তা তদারক করা হচ্ছে বলে জানান ট্রাফিক সার্জেন্ট কবির হোসেন৷ তিনি এও বলেন, এরকম অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে৷
‘রিকশা নিরাপদ, তাই বইমেলা চালু’
করোনা প্রতিরোধে সরকারের বিধিনিষেধ এবং লকডাউনের মধ্যেও রিকশা চলছে এবং এটি নিরাপদ বলে বইমেলা চালু আছে বলে মন্তব্য করেছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন৷ তবে সরেজমিনে গিয়ে স্টলগুলো প্রায় ক্রেতাশূন্য অবস্থায় দেখা যায়৷
সন্ধ্যার পর উলটোচিত্র
সরকারের ১১ দফার মধ্যে অন্যতম ছিল সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না৷ কিন্তু বাস্তবে সন্ধ্যার পর ঠিক বিপরীতচিত্র দেখা যায়৷ সন্ধ্যার পরই মানুষ অপ্রয়োজনে বের হচ্ছে বেশি৷ কেন বন্ধুদের নিয়ে বের হয়েছেন জানতে চাইলে সাইমুম হাসান নামের এক তরুণ বলেন, ‘‘সারাদিন ঘরেই ছিলাম, বিকালের পর তাই একটু বাতাস খেতে কয়েকজন মিলে বের হলাম৷’’
যারা লকডাউন আওতার বাইরে
জরুরি চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ সৎকার, জরুরি পরিষেবা, সংবাদপত্র, পার্সেল সেবা, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহন, বিদেশ প্রত্যাগত বা বিদেশগামী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে লকডাউনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না৷