ডোপিং-এর কত রকম অজুহাত হতে পারে!
খেলাধুলার জগতে ডোপিং-এর জন্য ‘ব্যান’ প্রায় জলভাত হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ মূত্রে বা রক্তে নিষিদ্ধ ডোপিং পদার্থ ধরা পড়লে প্রশ্ন ওঠে, ক্রীড়াবিদের শরীরে তা ঢুকল কি করে৷ ঠিক তখনই নানা বিশ্বাস্য কিংবা অবিশ্বাস্য কাহিনির অবতারণা ঘটে৷
চায়ের পেয়ালাতে বোধহয় কিছু ছিল
পেরুর জাতীয় ফুটবল একাদশের ক্যাপ্টেন এবং বায়ার্ন মিউনিখ ও হামবুর্গের সাবেক খেলোয়াড় পাওলো গেরেরো রাশিয়ায় আগামী বিশ্বকাপে অনুপস্থিত থাকবেন৷ কোকেন ও অন্যান্য মাদকের রেশ ধরা পড়ার পর তাঁর উপর এক বছরের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷ গেরেরো বলছেন, তিনি নাকি জ্বর-জ্বর ভাব কাটানোর জন্য এক পেয়ালা চা খেয়েছিলেন৷ সেই চাতেই নাকি কিছু ছিল৷
কে যেন টুথপেস্টে...
জার্মানির ডিটার বাউমান ১৯৯২-এর অলিম্পিকে ৫,০০০ মিটার দৌড়ে চ্যাম্পিয়ন হন৷ পরে তাঁর ড্রাগ টেস্টে নান্ড্রোলোন ধরা পড়ায় ১৯৯৯ সালে বাউমানকে দু’বছরের জন্য ব্যান করা হয় – ফলে তিনি ২০০০ সালের সিডনি অলিম্পিকে অংশ নিতে পারেননি৷ বাউমানের যুক্তি ছিল, হেটেলে কে যেন তাঁর টুথপেস্টে কিছু একটা ঢুকিয়ে দিয়েছিল৷ তবে ২০০২ সালে মিউনিখের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে বাউমান ৩৭ বছর বয়সে রুপো জেতেন ১০,০০০ মিটার দৌড়ে৷
অন্যরা গঞ্জিকা সেবন করছিল
অলিম্পিকের ইতিহাসে স্নোবোর্ডিং-এ প্রথম সোনা জেতেন ক্যানাডার রস রেবাগলিয়াতি, ১৯৯৮ সালে নাগানোয় অনুষ্ঠিত শীতকালীন অলিম্পিকে৷ জেতার কয়েক ঘণ্টা পরেই তাঁর স্যাম্পলে গাঁজার মূল উপাদান টিএইচসি ধরা পড়ে, ফলে রেবাগলিয়াতিকে সাময়িকভাবে ডিসকোয়ালিফাই করা হয়৷ রেবাগলিয়াতির যুক্তি ছিল, অন্যরা যখন গাঁজা খাচ্ছিল, তখন তিনি সেখানে ছিলেন৷ ২০১৩ সালে রেবাগলিয়াতি মেডিক্যাল মারিজুয়ানার ব্যবসা শুরু করেন৷
ডোপিং সত্ত্বেও চ্যাম্পিয়ন
বলা হয়, সেটাই নাকি খেলাধুলায় ডোপিং-এর প্রথম ঘটনা৷ ১৯০৪ সালে সেন্ট লুইসের ম্যারাথনে ট্রেনাররা দৌড়ের আগে মার্কিন দৌড়বীর টমাস হিক্সকে স্ট্রিকনিন বিষ ও ডিমের সাদাটি মিশিয়ে একটি পদার্থ সেবন করতে দিয়েছিলেন৷ হিক্স রেসে জেতেন ঠিকই, যদিও তিনি ফিনিশিং লাইনে কাত হয়ে পড়েন ও তার পর বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে দৃষ্টিভ্রমে ভোগেন৷ তবে ডোপিং সংক্রান্ত নিয়মকানুন না থাকায় হিক্সকে যথারীতি বিজয়ী ঘোষণা করা হয়৷
ডোপিং নয়, পুরুষকার
ডেনিস মিচেল (ডান দিক থেকে দ্বিতীয়) ১৯৯২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে রিলেতে সোনা জেতেন বটে, কিন্তু ছ’বছর পরে তাঁর শরীরে অবৈধ পরিমাণ টেস্টোস্টেরন পাওয়া যায়৷ মিচেল দাবি করেন যে, নমুনা দেওয়ার আগে তিনি নাকি পাঁচ বোতল বিয়ার পান করেছিলেন ও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে অন্তত চারবার যৌনসম্ভোগ করেছিলেন৷ মার্কিন ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড অথরিটি ব্যাখ্যাটি মেনে নিলেও আইএএএফ তা মেনে নেয়নি৷
ঠোঁটের মলম থেকে বিপত্তি
নরওয়ের প্রখ্যাত মহিলা স্কি খেলোয়াড় টেরেজে ইউহাগ গতবছর একটি ড্রাগ টেস্টে অ্যানাবলিক স্টেরয়েডের জন্য পজিটিভ ফলের পর দেড় বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন – ফলে তিনি আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের শীতকালীন অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না৷ ইউহাগের বক্তব্য হলো, তিনি ঠোঁট না ফাটার একটি মলম ব্যবহার করেছিলেন৷ নরওয়ের স্কি দলের ডাক্তার, যিনি ইউহাগকে মলমটি দিয়েছিলেন, তিনি এই ঘটনার পর পরই পদত্যাগ করেন৷
অ্যাক্সিডেন্টের দরুণ ড্রাগ টেস্টে যেতে পারেননি
একাতেরিনি থানু ও তাঁর ট্রেনিং পার্টনার কনস্তান্তিনোস কেন্তেরিস ২০০৪ সালে এথেন্সে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের প্রাক্কালে একটি ড্রাগ টেস্টে হাজির হননি৷ সেদিনই এর কিছু পরে দু’জনকে হাসপাতালে পাওয়া যায় – উভয়ের নাকি একটি মোটরসাইকেল অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল৷ দুই ক্রীড়াবিদ আর সেই অলিম্পিকে যোগ দেননি কিন্তু কর্তৃপক্ষ সাব্যস্ত করেন যে, তারা ভুয়ো বিবৃতি দিয়েছেন ও দুজনের বিরুদ্ধে এই মর্মে মামলাও করা হয়৷
রাষ্ট্রীয় ডোপিং
ক্রিগার (ছাবিতে ডানদিকে) আদতে ছিলেন হাইডি (ছবিতে বাঁ দিকে), সাবেক পূর্ব জার্মানির এক মহিলা শট পাটার৷ কমিউনিস্ট দেশটির ক্রীড়া কর্মকর্তারা হাইডিকে এমন পরিমাণে স্টেরয়েড দিতে থাকেন যে, হাইডির চেহারাই বদলে যায়৷ শেষমেষ হাইডি জেন্ডার রিঅ্যাসাইনমেন্ট সার্জারির পর পুরোপুরি ট্রান্সজেন্ডার সত্তা নেন ও আন্ড্রেয়াস ক্রিগার নামে পরিচিত হন৷
ওজন কমাতে গিয়ে
অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়ার্ন ক্রিকেটের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে এক মহান ব্যক্তিত্ব৷ সেই শেন ওয়ার্নকেও ২০০৩ সালে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়, কেননা তাঁর নমুনায় একটি ডিউরেটিক বা মূত্রবর্ধক পদার্থ পাওয়া গিয়েছিল৷ ওয়ার্ন বলেন, তিনি ওজন বাড়া নিয়ে সমস্যায় ভুগছিলেন; তখন তাঁর মা নাকি তাঁকে ঐ পথ্যটি খেতে দেন৷