1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডেঙ্গু প্রতিরোধে জিনগত বৈশিষ্ট্যের সন্ধান

৪ মে ২০১০

ডাব্লিউএইচও’র হিসাবে, প্রতিবছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয় প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ৷ এতে প্রাণহানি ঘটে প্রায় ২২ হাজার জনের, যাদের অধিকাংশই শিশু৷ এই ডেঙ্গু জ্বরের সংক্রমণ রোধে এবার জিনগত সূত্র আবিষ্কারের পথে বিজ্ঞানীরা৷

https://p.dw.com/p/NDsh
ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশাছবি: picture-alliance

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা - ডাব্লিউএইচও'র সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বিশ্বের শতাধিক দেশে ২.৫ বিলিয়ন মানুষ ডেঙ্গু হেমোরাজিক ফিভার তথা ডিএইচএফ নামক এই জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে৷ সংস্থাটি বলছে, ১৯৭০ সালের পূর্বে মাত্র ৯টি দেশে এই জ্বরের সংক্রমণ ছিল৷ অথচ ১৯৭০ সালের পর থেকে এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে চারগুণ হারে৷ আর এই হার এখনও অব্যাহত রয়েছে৷

বলছি ডেঙ্গু জ্বরের কথা৷ এর ভাইরাস লালিত হয় মানুষেরই দেহে৷ আর এই ভাইরাসটি একজনের শরীর থেকে অন্যের শরীরে সংক্রমণের দায়িত্ব পালন করে এডিস মশা৷ এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু ১, ২, ৩ এবং ৪ - এই চারটি ধরণ আবিষ্কার হয়েছে এই রোগটির৷ এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি সিঙ্গাপুরে, এমন পর্যবেক্ষণই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার৷ গত সাত বছরে সেখানকার প্রায় ৫০ লাখ মানুষের দেহে ডেঙ্গু ১ এবং ২ - এই দু' ধরণের ডেঙ্গু প্রকাশ পেয়েছে সবচেয়ে বেশি৷ আর চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ৩ এবং ৪ - এই দু'টি জাতের ডেঙ্গুর সংক্রমণ লক্ষ্য করছেন বিজ্ঞানীরা৷

Dengue-Fieber - Mücke
সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি সিঙ্গাপুরে, জানাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাছবি: picture-alliance/dpa

ভারতে ডেঙ্গু রোগ

এদিকে, ভারতের কলকাতা শহরে প্রথম ডেঙ্গু হেমোরাজিক রোগ ধরা পড়েছিল ১৯৬৩ সালে৷ তবে ১৯৯৬ সালে ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে এই রোগের প্রকোপ৷ ঐ বছর সারা দেশে ১০ হাজার ২৫২ জনের দেহে ধরা পড়ে ডেঙ্গু৷ প্রাণ হারায় ৪২৩ জন৷ এরপর থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তেই আছে৷ ডাব্লিউএইচও'র হিসাবে, ভারতে গত দশ বছরে ডেঙ্গু জ্বরে মারা যাওয়ার হার ১ শতাংশেরও বেশি৷

শুধু তাই নয়, ডেঙ্গু হচ্ছে একটি ব্যয়বহুল রোগ৷ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া একজন ডেঙ্গু রোগীর পেছনে খরচ হয় প্রায় দেড় হাজার ডলার৷ এছাড়া ঐ রোগী কমপক্ষে দশ দিন কাজ করতে পারে না, বলে উল্লেখ করেছে ডাব্লিউএইচও৷ অধিক হারে নগরায়ন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং মানুষের চলাফেরা আরো বেড়ে যাওয়ায় ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাস বহনকারী এডিস অ্যাজিপ্টাই মশার পরিধিও বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ এই প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গু জ্বরের সংক্রমণ রোধে একটু নড়ে চড়ে বসেছে ডাব্লিউএইচও৷

BdT Mückenplage Zunahme der bissigen Insekten erwartet
টিকা না থাকলেও, এখন এর একটা বিহিত করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরাছবি: AP

চিকিৎসা পদ্ধতি এবং ওষুধ আবিষ্কারের প্রচেষ্টা

এতদিন এই রোগের কোন চিকিৎসা কিংবা টিকা না থাকলেও এখন এর একটা বিহিত করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা৷ ইতিমধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের বিভিন্ন ধরণ এবং এর প্রভাব সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেতে সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ায় বিজ্ঞানীরা গবেষণা শুরু করেছেন৷

সিঙ্গাপুরের গেনোম ইন্সটিটিউটের সংক্রামক ব্যাধি বিভাগের সহযোগী পরিচালক ড. মার্টিন হিবার্ড জানান, ভিয়েতনামে সাত হাজার মানুষের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেক ব্যক্তির দেহে ছয় লাখ জিনগত বৈশিষ্ট্যের দিকে আমরা নজর রাখছি৷ এগুলোর মধ্যে যেসব বৈশিষ্ট্য ডেঙ্গু জ্বর সংক্রমণের জন্য দায়ী সেগুলোকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি আমরা৷'' তিনি বলেন, ভিয়েতনামের ঘটনাগুলো অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও সঠিক কিনা, বিজ্ঞানীরা সেটিও নির্ণয় করার চেষ্টা করবেন৷ আর এর পরেই আবিষ্কার করা সম্ভব হবে ডেঙ্গু জ্বরের ওষুধ, প্রত্যাশা হিবার্ডের৷

BdT Im Kampf gegen die Dengue-Mücke wird in Indien ein Cricket-Stadion ausgeräuchert
ডেঙ্গু প্রতিরোধে ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে ভারতের একটি স্টেডিয়ামেছবি: AP

ডা. মো. শামীম হোসেন চৌধুরীর সাক্ষাৎকার

বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মো. শামীম হোসেন চৌধুরী বললেন, ‘‘ডেঙ্গু হচ্ছে ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত রোগ৷ এডিস অ্যাজিপ্টি মশা বহন করে এই ভাইরাস৷ এই মশা বদ্ধ পরিষ্কার পানিতে বংশ বিস্তার করে, যেমন টবের পানি, এসি থেকে নির্গত পানি কিংবা অল্প বৃষ্টির পানি৷'' বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ এবং ভারতে গত তিন-চার বছর আগে এই রোগের বেশ প্রকোপ ছিল৷ এছাড়া এতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণহানির ঘটনাও ছিল বেশ৷ তবে বর্তমানে সচেতনতা অনেক বাড়ার ফলে এই রোগের প্রকোপ কমেছে৷ তবুও ১ থেকে ১.৫ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে৷ আর এই রোগটি ঢাকা মহানগরী এবং এর আশপাশেই বেশি দেখা যাচ্ছে৷''

ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে এবং এতে কেউ আক্রান্ত হলে করণীয় সম্পর্কে তিনি বললেন, ‘‘যদি রোগটি হয়, তাহলে পানি স্বল্পতা কাটানোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণ স্যালাইন দিতে হবে৷ রক্ত স্বল্পতা কাটানোর জন্য রক্ত দিতে হবে৷ আর এই রোগ প্রতিরোধের জন্য এর বাহক মশাকে মেরে ফেলতে হবে৷ এই মশা যেহেতু পরিষ্কার বদ্ধ পানিতে বংশ বিস্তার করে তাই এই ধরণের পানি সরিয়ে ফেলতে হবে৷ এছাড়া এই মশাটা খুব ভোরে এবং শেষ বিকেলে আক্রমণ করে৷ তাই এই দুই সময়ে খুব ভালো করে সুরক্ষামূলক পোশাক পরতে হবে এবং মশারি ব্যবহার করতে হবে৷''

প্রতিবেদক : হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ আল-ফারূক