1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ট্রেনে উঠলেই পাথরের আতঙ্ক

সমীর কুমার দে
৪ অক্টোবর ২০১৯

অন্য যানবাহনের তুলনায় ট্রেনে দুর্ঘটনা অনেক কম৷ ট্রেনযাত্রা তারপরও সব সময় নিরাপদ নয়৷ বাইরে থেকে ছোড়া পাথরের আঘাতে আহত হন অনেকে, মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে৷ গত পাঁচ বছরে ট্রেনের ২ হাজারের বেশি জানালা-দরজা ভেঙেছে পাথরের আঘাতে৷

https://p.dw.com/p/3Qikw
ছবি: imago/ZUMA Press

মাহমুদুর হাসান মামুন কাপড়ের ব্যবসায়ী৷ ব্যবসায়িক কারণেই তাঁকে নিয়মিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকায় আসা-যাওয়া করতে হয়৷ ট্রেনে যাতায়াত সহজ বলে তিনি ট্রেনেই চড়েন৷

মাস চারেক আগে ট্রেনে চড়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন৷ তেজগাঁও স্টেশন পার হওয়ার সময় হঠাৎ জানালার কাঁচ ভেঙে একটি পাথর তাঁর কপালে লাগে৷ সঙ্গে থাকা দুই বন্ধু তাঁর সেবাশুশ্রূষা করেন৷ ভাগ্যক্রমে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যান তিনি৷ এক ‘টোকাইকে' তিনি নিজে পাথর ছুঁড়তে দেখেছেন৷ বছরখানেক আগে আরেকবার আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি৷ সেবার টঙ্গিতে একটি পাথর এসে মাথায় লাগে৷ তখনও অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন৷ ডয়চে ভেলেকে সে কথাই বলছিলেন মামুন৷ সরকারের নানা উদ্যোগের প্রশংসা করে সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শও দিয়েছেন তিনি৷ 

মাহমুদুর হাসান মামুন

বছরে দেড়শ' ঘটনা, স্পিকারের ট্রেনও আক্রান্ত

প্রতি বছর ঢিলের আঘাতের ট্রেনযাত্রীর আহত হওয়ার দেড় শতাধিক ঘটনা ঘটছে৷ গত বছর রেল মন্ত্রণালয় থেকে একটা হিসাব প্রকাশ করা হয়েছিল৷ সেখানে বলা হয়েছে, শুধু পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় গত পাঁচ বছরে ট্রেনের ২ হাজারের বেশি জানালা-দরজা ভেঙেছে৷ এসব জানালা-দরজা মেরামতে বছরে পৌনে দুই কোটি খরচ হচ্ছে৷ গত মে মাসে শুধুমাত্র ঢাকা-রাজশাহী রুটে ১৭টি পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে৷

গত এপ্রিলে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী উত্তরাঞ্চল ভ্রমণের সময় তাঁর ট্রেনেও পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে৷ পাথরের আঘাতে জানালার কাঁচ ভেঙে যায়৷ তবে ওই ঘটনায় কেউ আহত হয়নি৷

ঘটনার মাস খানেক পর রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান৷

প্রীতি দাশের মৃত্যুর পর আলোচনা শুরু

২০১৩ সালের ১০ আগস্ট স্বামীর সঙ্গে বাসায় ফেরার পথে নিহত হন প্রকৌশলী প্রীতি দাশ৷ ওই দিন চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা তুর্ণা-নিশীতা ট্রেনের জানালার পাশে বসেছিলেন প্রীতি৷ রাত সাড়ে ১১টার দিকে ট্রেনটি ভাটিয়ারির ভাঙ্গা ব্রিজ এলাকায় পৌঁছানোর পর জানালা বরাবর উপর্যুপরি পাথর ছোঁড়া হয়৷ একটি পাথর তাঁর মাথায় লাগে৷ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন৷

প্রীতি দাশের মৃত্যুর পর ট্রেনে পাথর ছোড়ার বিষয়টি আলোচনায় আসে৷ গত বছরের ৩০ এপ্রিল খুলনা-বেনাপোল রুটের বেনাপোল কমিউটার ট্রেনে দায়িত্ব পালন করছিলেন রেলওয়ের পরিদর্শক বায়েজিদ শিকদার৷ ট্রেনটি বেনাপোল থেকে খুলনা যাওয়ার পথে দৌলতপুর স্টেশন এলাকায় দুর্বৃত্তরা পাথর ছুড়ে মারে৷ এতে মারাত্মকভাবে আহত হন বায়েজিদ৷ দীর্ঘ ৪১ দিন চিকিৎসাধীন থেকে বায়েজিদ মারা যান৷ ২০১৭ সালের অক্টোবরে রাজশাহী থেকে খুলনাগামী সাগরদাঁড়ি ট্রেনে দুর্বৃত্তদের ছোঁড়া পাথরে চোখের মধ্যে মারাত্মক আঘাত পান খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের একজন শিক্ষার্থী৷ প্রতিনিয়তই এমন পাথর নিক্ষেপের খবর পাওয়া যায়৷ 

২০ জেলায় ৭০ ঝুঁকিপূর্ণ স্পট

রেলওয়ে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে ২ হাজার ৯০০ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে৷ ২০ জেলায় পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে৷ এর মধ্যে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ৫টি ও পশ্চিমাঞ্চলের ১৫টি জেলা রয়েছে৷ ২০ জেলার মধ্যে ৭০টি স্পটকে স্টোন থ্রেয়িং স্পট হিসাবে শনাক্ত করা হয়েছে৷ এসব স্পটে সবচেয়ে বেশি পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে৷

এগুলোর মধ্যে আছে গাজীপুরের টঙ্গী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে গঙ্গাসাগর, কুমিল্লার ময়নামতি, চট্টগ্রামের পাহাড়তলি, সীতাকুণ্ড, নরসিংদী, পূবাইল, গফরগাঁও, গৌরিপুর, মোহনগঞ্জ, সরিষাবাড়ি,  দেওয়ানগঞ্জ, ঢাকার তেজগাঁও, কাওরানবাজার, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা, লালমনিরহাট, পীরগঞ্জ, গাইবান্ধা, বুনারপাতা, সোনাতলা, আজিমনগর, খুলনা, পার্বতীপুর, জামতইল, কোট চাঁদপুর, নোয়াপাড়া, দৌলতপুর, রংপুর, আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা, ষোলশহর ফৌজদারিহাট, সীতাকুণ্ড, চৌমুহনী, শশীদল, ইমামবাড়ি, কসবা, পাঘাচং, ভাতশালা, শায়েস্তাগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, কাউনিয়া, বামনডাঙ্গা৷ এর বাইরেও অনেক স্পটে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে৷ 

পাথর নিক্ষেপের কী শাস্তি?

১৮৯০ সালের রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারা অনুযায়ী চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের জন্য একজন অপরাধীর যাবজ্জীবন বা ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড হতে পারে৷ উদ্দেশমূলকভাবে চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুঁড়ে রেলযাত্রীর মৃত্যুর কারণ বলে প্রমাণিত হলে ৩০২ ধারায় ফাঁসির বিধান রয়েছে৷ এছাড়া ‘অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান' এই অপরাধ করলে অভিভাবকের শাস্তির বিধানও আছে৷

রেলমন্ত্রী যা বললেন

নুরুল ইসলাম সুজন

রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয়, ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা আগের তুলনায় অনেক কমেছে৷ গত তিন মাসে আমরা এমন কোনো ঘটনার খবর পাইনি৷ স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মানুষকে সচেতন করার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি আমরা৷ এর ফলে ঘটনা কমে এসেছে৷'' 

সামনে এ নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘‘গ্রামের রাস্তা দিয়ে ট্রেন যাওয়ার সময় শিশু-কিশোররা কৌতুহলবশত এসব ঘটায়৷ আর এ কারণেই তারা স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করেছি৷ জনসচেতনতার পাশাপাশি যেসব জায়গায় এই ধরনের ঘটনা ঘটে সেসব জায়গায় পুলিশি নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে৷ ফলে এখন ঘটনা যেমন কমে এসেছে, তেমনি অনেকে ধরাও পড়ছে৷''

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা মানুষকে সচেতন করতে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছি৷ বিশেষ করে স্কুল-কলেজে এই ধরনের প্রচারণা চালানো হয়েছে৷ ফলে মানুষ সচেতন হয়েছেন৷ এতে করে ঘটনা কমে আসছে৷ সবাই সচেতন হলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আরো কমে যাবে৷''

সমীর কুমার দের এই প্রতিবেদনটি আপনার কেমন লাগলো? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷  

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান