1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টিভি মালিকেরা স্বাধীনভাবে সরকারকে খুশি রাখেন

২৯ আগস্ট ২০১৯

টেলিভিশনের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শতকরা একশ ভাগ ঠিক কথা বলেছেন৷ সত্যিই টেলিভিশনগুলোর মালিকদের পুরোপুরি স্বাধীনতা রয়েছে৷ স্বাধীনভাবেই তারা জানার উপায় খুঁজে বার করেন, কীসে সরকার খুশি হবে আর কীসে বেজার৷

https://p.dw.com/p/3OgFZ
ছবি: picture-alliance/Photoshot

কারণ বিষয়টি আদর্শলিপির মতো সরল, সরকার খুশি থাকলে মালিকদের ভালো, সরকার বেজার হলে মালিকদের জীবনে নেমে আসতে পারে অন্ধকার৷ মালিকদের স্বাধীনতা মানে যে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নয়, তাও দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট৷ 

দেশের টেলিভিশন চ্যানেলের মালিকেরা বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন৷ প্রধানমন্ত্রী তাদের বলেছেন, দেশের সব টেলিভিশন চ্যানেলের পরিপূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে৷ বিএনপির পক্ষে বলা হয়েছে, টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে আওয়ামী–রসগোল্লা গিলতে বাধ্য করা হয়৷ এখানে টেলিভিশনের মালিক ও সংশ্লিষ্ট কলাকুশলীদের করার কিছুই থাকে না৷

বিএনপি যাই বলুক, শেখ হাসিনা অনেক বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ যার অন্যতম প্রধান শক্তি তথ্য৷ তিনি বেশিরভাগ বিষয় নিয়েই ভালো খোঁজ-খবর রাখেন৷ তাই এটা সেটা বলে সাত পাঁচ বোঝানো তাঁকে কঠিন৷ একথা টেলিভিশন মালিকেরাও জানেন, জানেন বলেই প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করার উপায় ভেবে ভেবে বের করেন৷ সংবাদ সম্মেলনে বা ঈদে-চাঁদে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাংবাদিকদের যখনই দেখা হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, সেখানে মালিকপক্ষও গিয়ে হাজির হন৷ আর আনুগত্যের চরম পরীক্ষার সম্মুখীন সম্পাদক বা প্রতিবেদকেরা তখন নানা ধরনের স্নেহ জাতীয় পদার্থ বার করেন৷ কেউ প্রধানমন্ত্রীকে বলেন ‘আপনি ম্যাজিক লেডি’, কেউ বলেন, ‘আমি আপনার ছাত্র সংগঠন করেছি’, আর কেউ বলেন ‘আপনার নোবেল প্রাইজ পাওয়া দরকার’৷

শেখ হাসিনা ও তাঁর অনুসারীরা অনেকবার বলেছেন, টিভিগুলো তারা দিয়েছেন, অথচ এমনই আশ্চর্য যে সেখানে তাদের সমালোচনা হয়৷ কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী একথাও বলেছেন, তাঁর বা তাঁর সরকারের সমালোচনা করার আগে গণমাধ্যমের মালিকদের দুর্নীতি খুঁজে বার করা সাংবাদিকদের দায়িত্ব৷ মালিকেরা যে এরপর থেকে আরও স্বাধীনভাবে শেখ হাসিনার সন্তুষ্টির সাধনা করবেন তাতে কি আর কারও কোনো দ্বিধা রাখা উচিত?

Khaled Muhiuddin
খালেদ মুহিউদ্দীন, প্রধান, ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগছবি: DW/P. Böll

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার বক্তব্যে পরিষ্কার যে, আপনি জানেন কোন মিডিয়া মালিক কী দুষ্টুমি বা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত? তারপরও আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী তাদের কিছু বলছে না৷ এর কারণ কী বলে আপনি মনে করেন? আমার অনুমান এই, পুলিশ বা গোয়েন্দারা তাদের কিছু বলছে না, কারণ তারা পরিপূর্ণ স্বাধীনভাবে আপনাকে খুশি করে যাচ্ছেন৷ যখন সময় হবে অর্থাৎ তাদের কাজে-কর্মে আপনি আর খুশি থাকবেন না, তখন তাদের সব কাজ-কর্মের কড়ায় গণ্ডায় হিসাব নেওয়া হবে৷ 

স্বাধীন মালিকদের কারো কারো কী কখনো সখনো জাতির বিবেক হয় উঠতে ইচ্ছে করে? আমার মনে হয় না৷ দরকার কী সরকারকে ঘাটিয়ে? এমনিতেই দেশে ডেঙ্গু আসবে, নুসরাতকে পুড়িয়ে মারা হবে, ভয়াবহ বা করুণ কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে আর কচি থেকে বুড়ো সংবাদকর্মীরা সেখান থেকে লাইভ করবেন, দর্শক আরাম করে দেখবেন৷ আর মাঝে সাঝে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ওয়াসা বা তিতাসের কেরানি, মাঝারি পুলিশ কর্মকর্তা বা পতিত সংসদ সদস্য বা সাবেক মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে রোমহর্ষর্ক চুরি-দুর্নীতির অভিযোগের সচিত্র বয়ান দেওয়া হবে, দর্শক বলবেন বাহ৷ আর সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত অব্দি কিছু বাধা পুরোহিত সরকারের সাফাই গাইবেন বা সমালোচনা করবেন৷ এইতো স্বাধীন দেশের স্বাধীন মালিকের স্বাধীন টিভি৷

Khaled Muhiuddin
খালেদ মুহিউদ্দীন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও টিভি উপস্থাপক৷ ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান।
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য