টিকা থাকা সত্ত্বেও হাম সম্পর্কে সচেতনতা কম
২৪ আগস্ট ২০২০২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে কোলন শহরে ফ্লু ছড়িয়ে পড়েছিল৷ অনেক মানুষ সর্দি-কাশির ফলে কাহিল হয়ে পড়েছিলেন৷ শহরের এক হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মী হিসেবে আলেক্স সাউয়ারও আচমকা অসুস্থ বোধ করলেন৷ তবে তিনি তখনো জানতেন না, যে ফ্লু নয় – তাঁর আসলে মিজলস বা হাম হয়েছে৷
প্রথম উপসর্গগুলি ফ্লুয়ের মতোই৷ ক্লান্তি, গলায় ব্যথা, কাশি ইত্যাদি৷ হামের ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বলে আলেক্স নিজে ছোঁয়াচে রোগের উৎস হয়ে উঠলেন৷
মিজলস হলেই শহরের স্বাস্থ্য দফতরে তা নথিভুক্ত করা হয়৷ এপ্রিল মাস পর্যন্ত মোট আট জন সেই তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন, যা মোটেই অস্বাভাবিক নয়৷ তবে সেই হাসপাতালের কর্মীরা লক্ষ্য করলেন, যে একমাত্র শহরের এয়ারেনফেল্ড এলাকায়ই হামের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে৷ সেটা কি তাহলে মহামারির লক্ষণ?
আলেক্স সাউয়ার নিজের পারিবারিক ডাক্তারের কাছেই গিয়েছিলেন৷ তিনি গলার ব্যথা সারাতে একটি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়েছিলেন৷ ফ্লুয়ের মতো উপসর্গের কারণে প্রথম দিকে হাম প্রায়ই শনাক্ত করা যায় না৷ কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক খেলে হাম সারে না৷ আলেক্সের অবস্থার অবনতি ঘটতে লাগলো৷ সেই সময়ের কথ মনে করে তিনি বললেন, ‘‘শরীর একেবারে ভেঙে পড়ে৷ এর বর্ণনা দেওয়া কঠিন৷ আমি কোনোদিন স্টিমরোলারের নীচে চাপা পড়ি নি বটে, তবে মনে হচ্ছিল আমার সঙ্গে যেন সে রকমই কিছু একটা ঘটেছে৷ ৪০ ডিগ্রিরও বেশি জ্বরের ফলে কিচ্ছু করার উপায় ছিল না৷ খাবার কোনো ইচ্ছা থাকে না, ওজন কমে যায়৷ বলদের মতো ঘাম হয়৷ ভালো ঘুম হয় না, আবার পুরোপুরি জেগে থাকারও উপায় নেই৷ এমন অসহায় অবস্থায় মনে হচ্ছিল কিছু একটা করতে হবে৷’’
অ্যামবুলেন্স করে কোনোরকমে হাসপাতালে ভর্তি হলেন আলেক্স৷ এর পরেই গোটা শরীরের উপর লাল দাগ ছেয়ে গেল৷ তখন প্রথম বার মিজলস বা হাম ধরা পড়লো৷ আলেক্সকে এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকতে হয়েছিল৷ শরীরে ৪০ডিগ্রি সেলসিয়াস জ্বর৷ তারপর আবার চোখের সমস্যাও শুরু হলো৷ আলেক্স বলেন, ‘‘যত বার মিজলস হবে, ততবার কনজাংকটিভাইটিস হবেই৷ আমার ক্ষেত্রে সেটা এতটাই মারাত্মক রূপ ধারণ করেছিল, যে তিন দিন পর আমি প্রায় কিছুই দেখতে পারছিলাম না৷ সবকিছু ঝাপসা হয়ে উঠেছিল৷ ফলে সেটাই সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছিল৷ এমন ভয়ংকর অবস্থা বর্ণনাও করা যায় না৷’’
এর মধ্যে শহরের স্বাস্থ্য দফতরে প্রতিদিন আরও মিজলস রোগীর নাম নথিভুক্ত করা শুরু হলো৷ কর্মীরা তৎপর হয়ে উঠলেন এবং রোগের প্রসার বন্ধ করতে যারা আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁদের শনাক্ত করার কাজ শুরু করলেন৷ কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল৷ কোলনের স্বাস্থ্য দফতরের কর্মকর্তা প্রো. গেয়ারহার্ড ভিজেম্যুলার বলেন, ‘‘মিজলস যে কোলন শহরের জনসংখ্যার মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে, তা আমরা বুঝতে পারলাম৷ ফলে আমাদের মনে দুশ্চিন্তা ছড়িয়ে পড়লো৷’’
দ্রুতবেগে হামের রোগীদের সংখ্যা বাড়তে লাগলো, যা ছিল এর এক বছর আগের তুলনায় দশ গুণ বেশি৷ ২০১৮ সালের মার্চ মাসে হাসপাতাল ও ডাক্তারের চেম্বারে হামের উপসর্গ নিয়ে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়তে লাগলো৷ ডাক্তাররা বুঝলেন যে এই সব রোগী পাঁচ দিন আগেই ছোঁয়াচে রোগের উৎস হয়ে উঠেছেন৷
এই সময়কালে তাঁরা আশেপাশের অরক্ষিত সব মানুষের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে দিতে পারেন৷ টিকার ভয়, সচেতনতার অভাব অথবা ভুলো মনের কারণে অনেকেরই হাম থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই৷ দুবার টিকা না নিলে যে কেউ এমন ভাইরাসে আক্রান্ত হতে ও ছড়িয়ে দিতে পারে৷
এফা শুলটেস/এসবি
গতবছরের জানুয়ারির ছবিঘরটি দেখুন...