1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পানি সংকট সমাধানে অভিনব উদ্যোগ

২ সেপ্টেম্বর ২০২০

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পানির সংকট বেড়ে চলেছে৷ আজ যেখানে পর্যাপ্ত পানির সরবরাহ রয়েছে, আগামীকাল সেখানে তা নাও থাকতে পারে৷ টিউনিশিয়ার পাহাড়ি অঞ্চলে চাষিদের সে বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা করছে জার্মানির এক সংস্থা৷

https://p.dw.com/p/3htG3
ছবি: DW

অনেকেই মনে করেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি রয়েছে৷ জলপাই ও শাকসবজির খেতের জন্য শেরিফ শেহাইবির অনেক পরিমাণ পানির প্রয়োজন হয়৷ সেই চাহিদা মেটাতে তাঁর তিনটি নিজস্ব জলাধার রয়েছে৷ কিছুটা গর্ব নিয়েই তিনি দায়িত্ব পালন করেন৷

শেরিফের মোট ৯০ হেক্টর জমি রয়েছে, যা কাইরুয়ান অঞ্চলে যথেষ্ট বেশি হিসেবে গণ্য করা হয়৷ এখনো পর্যন্ত তাঁকে পানি সাশ্রয়ের কথা ভাবতে হয় নি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের খেতের জন্য সেকেন্ডে ছয় লিটার পানি পাম্প করতে পারি৷ গ্রীষ্মকালে দিনে ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা পর্যন্ত প্লান্ট চালু রাখতে হয়৷ শীতকালে অবশ্যই এত পরিমাণ পানি প্রয়োজন হয় না৷ তখন আবহাওয়া শীতল থাকে৷ যথেষ্ট বৃষ্টি হয় বলে আমাদের কুয়াগুলিতে সবসময়ে যথেষ্ট পানি থাকে৷’’

পানি সংকট সমাধানে টিউনিশিয়ায় জার্মান প্রকল্প

পরিস্থিতি বদলাচ্ছে

সবার জীবন অবশ্য এমন আরামের নয়৷ মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের ওপারে মানুষের জীবনযাত্রা অনেক বেশি কঠিন৷ বেশিরভাগ পরিবারকে পানির সন্ধানে দিনে একাধিকবার বেশ কয়েক কিলোমিটার পাড়ি দিতে হয়৷ শুধু গৃহপালিত প্রাণীর তেষ্টা মেটাতে ও খেতে চাষের জন্য রিজাব জাগদুদিকে প্রায় ২৫০ লিটার পানি সংগ্রহ করতে হয়৷ তাছাড়া স্ত্রী ও তিন সন্তানসহ নিজস্ব পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে ৪৯ লিটার পানীয় জল লাগে৷ পরিস্থিতি বর্ণনা করে রিজাব বলেন, ‘‘এই অঞ্চলে আমাদের অবস্থা কঠিন৷ শুধু পানি সংগ্রহ করতেই আমাদের অনেক সময় লাগে৷ প্রতিদিন সেই কাজ করতে করতে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি৷ শিশুরাও আর পারছে না৷ গোটা অঞ্চল দুর্বল হয়ে উঠছে৷ বাসায় এখনো কল থেকে পানি আসে না৷ জীবনযাত্রার মানের ক্ষতি হচ্ছে৷ অবস্থা বেশ কঠিন৷ এখানে আমরা সবাই এর সমাধানসূত্র খুঁজছি৷’’

জলাধারে কমপক্ষে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে সমস্যার আংশিক সমাধানের চেষ্টা চলছে৷ জার্মানির আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জিআইজেড সেখানে ১০০টি এমন জলাধার তৈরি করছে৷ কারণ এখনো পর্যন্ত বৃষ্টির পানির একটা বড় অংশ কাজে লাগানো হয় নি৷ সংস্থার প্রতিনিধি মানফ্রেড মাৎস বলেন, ‘‘বাসার সামনে জলাধারে পানি জমা হয়৷ সংসারের কাজে, খেতে পানি দিতে সেটা কাজে লাগানো যায়৷ চাষিরা এভাবে জলপাই, অ্যামন্ড বাদাম ও রোজমেরি চাষ করতে পারেন, যার জন্য কম পানির প্রয়োজন হয়৷’’

সমবেত উদ্যোগ

জিআইজেড স্থানীয় চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছে৷ সেই সঙ্গে কয়েকটি তথাকথিত ‘ওয়াটার ফোরাম’ গড়ে তুলেছে এই সংস্থা৷ সেখানে পরিকল্পনা স্থির করা হয়৷ কম পানির চাহিদাওলা কোন গাছ লাগানো হবে, চাষিরা একসঙ্গে সে বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করেন৷ মানফ্রেড মাৎস মনে করেন, ‘‘আমরা এখন যে অঞ্চলে রয়েছি, সেখানকার পরিস্থিতি একেবারে ভিন্ন৷ বেলাগাম ব্যবহারের কারণে কয়েক বছর ধরে ভূগর্ভস্থ পানি আর নেই বললেই চলে৷ সে কারণে চাষিদের জমা করা পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে৷’’

চাষিরা একটি বাঁধ থেকে পানি পাচ্ছেন৷ টিউনিশিয়ার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ এই বাঁধের ফলে উপকৃত হচ্ছেন৷ তবে মানুষ বুঝতে পারছে, যে পানির পরিমাণ কমে চলেছে৷ পাম্পের সাহায্যে সেই পানি আনতে হচ্ছে৷ সেইসঙ্গে বৃষ্টির পরিমাণও কমছে৷ গত চার বছরে যথেষ্ট বৃষ্টি হয় নি৷ মানফ্রেড মাৎস বলেন, ‘‘আরও বাঁধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে স্ট্র্যাটিজি বা নির্দিষ্ট কৌশলের প্রয়োজন৷ শুধু পানির স্থানান্তরের জন্য একটি বাঁধের প্রয়োজন৷ তাছাড়া গোটা অঞ্চলের জন্যও স্ট্র্যাটিজি প্রয়োজন, যেখানে এখন শুধু বৃষ্টির পানি রয়েছে৷ পানি সাশ্রয়ের জন্যও এক মৌলিক স্ট্র্যাটিজি থাকা উচিত৷ টিউনিশিয়ার মানুষকে বুঝতে হবে, যে আগের তুলনায় অনেক ভেবেচিন্তে পানি ব্যবহার করতে হবে৷’’

পানি সংকটের নানা দিক

শেরিফ শেবাইবির মতো যে সব চাষি এতকাল ভাবতেন যে তাদের কাছে যথেষ্ট পানি রয়েছে, তাদের উপর চাপ বাড়ছে৷ এর মধ্যে অনেক জায়গায় পানি চুরির ঘটনাও ঘটছে৷ শেরিফ বলেন, ‘‘ভূগর্ভস্থ পানি একেবারে কমে গেছে৷ দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় প্রতি বছর পরিমাপ করছে৷ পানির স্তর নেমেই চলেছে৷ এছাড়া আশেপাশে ৩৫টি বেআইনি কুয়া রয়েছে৷ সরকারি অনুমতি নিয়ে মাত্র চারটি কুয়া তৈরি হয়েছে৷ অবশ্যই সেটা ভালো নয়৷’’

গোটা দেশে আনুমানিক ২০,০০০ বেআইনি কুয়া রয়েছে৷ সে কারণে পানি সম্পর্কে সচেতনতা এত গুরুত্বপূর্ণ৷ এমন সচেতনতা সৃষ্টি না হলে ভবিষ্যতে চাষিরা সম্ভবত আর তাদের গবাদি পশু নিয়ে পাহাড়ি অঞ্চলে থাকতে পারবেন না৷ তখন গোটা অঞ্চল হয়তো জনমানবশূন্য হয়ে পড়বে৷

হাইনরিশমান/ডালালি/এসবি

৯ জানুয়ারির ছবিঘরটি দেখুন..