1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টিআরপি-র ধাক্কায় বাংলা ধারাবাহিকের অকাল মৃত্যু

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১ ডিসেম্বর ২০২২

বাংলা টেলিভিশনে মেগা ধারাবাহিকের তুমুল জনপ্রিয়তা। কিন্তু কোনো কোনো ধারাবাহিক মাঝপথেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

https://p.dw.com/p/4KKji
কলকাতায় সিরিয়াল শ্যুটিং
ছবি: DW/S. Bandopadhyay

দূরদর্শনের একক রাজত্বের সময় থেকে আজকের বহু চ্যানেলের যুগ পর্যন্ত বিনোদনের একটা বড় জায়গা জুড়ে রয়েছে বাংলা মেগা ধারাবাহিক। মাসের পর মাস, কিংবা বছর পার করে চলা ধারাবাহিকের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা গৃহস্থের ঘরের মানুষ হয়ে ওঠেন। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে দেখা যাচ্ছে, কয়েকমাস চলার পর সিরিয়াল মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

বাংলা টেলিভিশনের প্রথম সারির চ্যানেলগুলিতে একের পর এক ধারাবাহিক মাঝপথে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শীর্ষস্থানীয় চ্যানেলে 'মাধবীলতা' দেখানো হয়েছে সাড়ে চার মাস, 'বৌমা একঘর' চলেছে মাত্র তিন মাস। এই চ্যানেলে সম্প্রচারিত 'মন ফাগুন', 'খড়কুটো', 'আয় তবে সহচরী', 'ধুলোকণা'র আয়ুও ছিল অল্প।

আর এক শীর্ষ বাংলা বিনোদন চ্যানেলে 'যমুনা ঢাকি' ও 'ঊমা' কিছুদিন চলার পর বন্ধ হয়ে যায়। 'উড়ন তুবড়ি' চলেছে ১০ মাস। এই চ্যানেলের সিরিয়াল 'পিলু' বেশিদিন চলেনি। 'লালকুঠি' ছয় মাস সম্প্রচারের পর হারিয়ে গেছে।

অপেক্ষাকৃত নবীন চ্যানেলেও একই অভিজ্ঞতা। একটি চ্যানেলে 'আমার সোনা চাঁদের কণা' চলেছে মাত্র চার মাস। অন্য একটিতে 'মৌয়ের বাড়ি'র আয়ু বেশি দিন চলেনি।

অর্থাৎ মেগা ধারাবাহিকের একাংশ এখন আর মেগা নয়, সেগুলি স্বল্পায়ু। অথচ কেবল টিভি বিনোদনের আগে দূরদর্শনে একের পর এক ধারাবাহিক চলেছে বছরের পর বছর। 'জননী', 'জন্মভূমি', 'খেলা', 'অগ্নিপরীক্ষা' এখনো অনেকের স্মৃতিতে।

‘গল্প, চিত্রনাট্য খারাপ মানের হলে অভিনেতারা কী করবেন?’

জনপ্রিয়তায় শিখর ছুঁয়েছিল বলে এখনো 'বিবাহ অভিযান', 'আবার যকের ধনে'র মতো ধারাবাহিক পুনঃপ্রচারিত হয় সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে।

আজ যারা মাঝবয়সি, তাদের কৈশোর ভরিয়ে রেখেছিল 'মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি', 'নৃসিংহ রহস্য'।

এমন উদাহরণ রয়েছে বাণিজ্যিক বাংলা চ্যানেলের ক্ষেত্রেও। হাজার পর্ব অতিক্রম করা 'এক আকাশের নীচে' এখনো ইউটিউবে জনপ্রিয়। ধারাবাহিকের জগতে মাইলফলক গড়ে দেওয়া ঋতুপর্ণ ঘোষের 'গানের ওপারে' দর্শকের মন কেড়েছিল। আরও কয়েকটি ধারাবাহিক প্রচারিত হয়েছিল বছরের পর বছর।

কিন্তু এখন বাংলা বাণিজ্যিক চ্যানেলে একের পর এক ধারাবাহিক কেন দ্রুত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে? এর মূল কারণ হিসেবে উঠে আসছে টিআরপি তত্ত্ব। প্রতি সপ্তাহে প্রকাশিত টিআরপি অনুষ্ঠানের জনপ্রিয়তার সূচক। কোন অনুষ্ঠান কত দর্শক দেখেছেন তা বোঝা যায় এই সূচক থেকে। টিআরপি কম থাকলে সংশ্লিষ্ট ধারাবাহিকের অকালমৃত্যু ঘটছে। এমনটাই বলছেন নবীন-প্রবীণ অভিনেতারা।

সিরিয়ালের প্রবীণ অভিনেতা ফাল্গুনি চট্টোপাধ্যায়। তার পুত্র আবির চট্টোপাধ্যায় এখন বাংলা সিনেমার তারকা। ফাল্গুনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''টিআরপি সবটা নিয়ন্ত্রণ করে। রেটিং ভাল না হলে বিজ্ঞাপন আসবে না। তাই চ্যানেল কর্তৃপক্ষ সিরিয়াল বন্ধ করে দেন। অথচ আমিই এমন সিরিয়ালে অভিনয় করেছি, যেগুলি সাত-আট বছর চলেছে।''

জনরুচির পরিবর্তনকে এর জন্য দায়ী করছেন আর্টিস্ট ফোরাম-এর যুগ্ম সম্পাদক, অভিনেতা শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''মানুষের রুচি বদলাচ্ছে। মানসিকতা বদলাচ্ছে। সেই অনুযায়ী চ্যানেল কর্তৃপক্ষ বলে দিচ্ছেন, কোন দৃশ্য হবে। এখন কাহিনি রচয়িতা, চিত্রনাট্যকারের ভূমিকাও কমে এসেছে।''

অভিনেতা অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়, দেবদূত ঘোষ থেকে অভিনেত্রী বিদীপ্তা চক্রবর্তী, সকলেই এ সব যুক্তিতে মোটের উপর সহমত। তবে শুধু কি কর্পোরেটের দায়, অভিনয় বা কাহিনিতে কি ঘাটতি নেই? বিদীপ্তা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''আগের অভিনেতারা এখনো অভিনয় করেন। কিন্তু আসল হচ্ছে গল্প, চিত্রনাট্য। সেটা খারাপ মানের হলে অভিনেতারা কী করবেন?''

গল্প মাঝপথে বদলেও যায়, ডয়চে ভেলেকে এমনটাই জানিয়েছেন অভিনেতা দেবদূত ঘোষ। তার বক্তব্য, ''শুরুতে কাহিনি যে অপছন্দ হয় তা নয়। কিন্তু পরে গল্প বদলে যায়। তখন ছেড়ে দেওয়া যায় না যেহেতু চুক্তি থাকে। তার উপর এটাই আমাদের উপার্জনের জায়গা।''

‘যখন-তখন কাজ হারাবো, এটা জেনেই শিল্পী হয়েছি’

ধারাবাহিক বন্ধের ফলে অনেক অভিনেতা, কলাকুশলী কাজ হারাচ্ছেন। উদার অর্থনীতির নিয়মেই এটা অনিবার্য, এমনটাই মত বাদশা মৈত্রের। অভিনেতা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''যখন-তখন কাজ হারাব, এটা জেনেই শিল্পী হয়েছি। একটা নোটিসে যদি কারখানা বন্ধ করা যায়, তা হলে টিভি ইন্ডাস্ট্রিতে অন্যরকম কিছু কী করে হবে?''

একই মত প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''দর্শকের এখন আর আগের মতো ধৈর্য নেই। তাদের সামনে বিনোদনের অনেক বিকল্প। তাই তারা যতদিন দেখবেন, ততদিন সিরিয়াল চলবে। অভিনেতা, টেকনিশিয়ানরাও এটা জানেন। এই অনিশ্চয়তা অন্য কাজের ক্ষেত্রেও আছে।''

এই পরিস্থিতিতে সরকারি গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অরিন্দম। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''দূরদর্শন অবহেলিত হয়ে পড়ে আছে। যদি তারা এগিয়ে আসত, তা হলে বাণিজ্যিক চ্যানেল প্রতিযোগিতার মুখে পড়তো। কিন্তু সরকার এ সব ভাবে না, তারাই কর্পোরেটের কাছে বিকিয়ে গিয়েছে।''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য