1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টাইগারমেট-এর আইপি শনাক্ত করেছে টেকটিউনস

২৪ জানুয়ারি ২০১১

বাংলাদেশে ইন্টারনেট চর্চা নিয়মিতই বাড়ছে, তৈরি হচ্ছে নিত্য নতুন ওয়েবসাইট, ব্লগ, সামাজিক যোগাযোগের গ্রুপ৷ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় পৌঁছেছে৷ আশি লাখ মানুষ নিয়মিতই ডুব মারছেন অনলাইন তথ্য ভাণ্ডারে

https://p.dw.com/p/101St
ছবি: picture-alliance/chromorange

এতসব আশা জাগানিয়া খবর শুনে যে কেউ শান্তি পেতে পারেন৷ মনে হতে পারে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে৷ কিন্তু বিপত্তি রয়েছে এখানেও৷ ইদানিং প্রায়ই শোনা যায় হ্যাকিং এর কথা৷ বাংলাদেশের বিভিন্ন ওয়েবসাইটের দখল নিয়ে নিচ্ছে হ্যাকার চক্র৷

হ্যাকারদের কবলে নয় শতাধিক সাইট

প্রযুক্তি বিষয়ক জনপ্রিয় ব্লগসাইট টেকটিউনস ডটকম ডটবিডি৷ কিছুদিন আগে হঠাৎ করেই এই সাইটটি হ্যাকারদের কবলে পড়ে৷ হ্যাকাররা শুধু সাইটটির দখল নিয়েই ক্ষান্ত হয়নি৷ এটির বিভিন্ন অপশনে পরিবর্তন আনে টাইগারমেট নামের হ্যাকার চক্র৷ এই প্রসঙ্গে টেকটিউনস ডটকম ডটবিডি'র সহ প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ শাহজালাল বলেন, এই বছরের প্রথম দিকে বিটিসিএল এর হোস্টিং যেখানে করা ছিল, সেখানে একদল হ্যাকার হানা দেয়৷ এরপর সেখান থেকে কিছু লগ ফাইল নিয়ে টেকটিউনস সাইটটিকে হ্যাক করা হয়৷ ফলে ২৪ ঘন্টার মত সাইটটি হ্যাকাররা হ্যাক করে রাখতে সক্ষম হয়েছিল৷

Russische Hacker
হ্যাকাররা নাকি ঘুমায় না!ছবি: Peter Sobolev

টাইগারমেট এর সন্ধান

শাহজালাল জানান, টেকটিউনসের নিজস্ব অনুসন্ধানে হ্যাকার দল টাইগারমেট-এর দু'টি আইপি শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে৷ এর একটি বাংলাদেশে এবং অন্যটি সিঙ্গাপুরের৷ এই বিষয়ে আরো অনুসন্ধান চলছে বলে জানান তিনি৷

টাইগারমেট চক্রের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯ শতাধিক ওয়েবসাইট৷ এরমধ্যে গুগল ডটকম ডটবিডি সাইটও ছিল৷ ইতিমধ্যে অবশ্য বেশ কিছু ওয়েবসাইট পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়েছে৷ তারপরও নিউজ ডটঅর্গ ডটবিডিসহ কয়েকটি সাইট এখনো টাইগারমেটের দখলেই আছে৷

আরো হ্যাকার

শুধু টাইগারমেট নয়, আরো অনেক হ্যাকার চক্রের কবলে পড়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন ওয়েবসাইট৷ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট একাধিকবার আক্রান্ত হয়৷ কে সাইটটিকে আক্রান্ত করেছিল, তা জানা না গেলেও কিছু সময়ের জন্য আরবি ভাষায় একটি বার্তা প্রদর্শিত হয় নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে৷ এছাড়া জেলাভিত্তিক বিভিন্ন ওয়েবসাইটেও হানা দেয় হ্যাকার চক্র৷ এই চক্র অবশ্য নিজেদেরকে ভারতীয় হ্যাকার হিসেবে দাবি করে৷ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক ওয়েবসাইটও হ্যাকাররা দখল করে নিয়েছিল৷

এভাবে নিয়মিতই হ্যাক বা আক্রান্ত হচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন ওয়েবসাইট ৷ অবস্থা এমন যে, যে কোন সময় বাংলাদেশের যে কোন সাইটই দখল করে নিতে পারে হ্যাকাররা৷ তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এমন অবস্থার জন্য ওয়েবসাইটের দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণকে দায়ী করছেন৷ ইন্টারনেট সেবাদাতা সংস্থা বিডিকম এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমন আহমেদ সাবের এই প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলো ঠিক যথাপোযুক্ত নয়, যেকারণে হ্যাকিং এর ঘটনাগুলো ঘটছে৷ তবে, যারা হ্যাক করছে তাদেরকেও কিছুটা কৃতিত্ব দিতে হবে৷

সুমন আহমেদ মনে করেন, বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান বিটিসিএল এর গাফিলতির কারণেও অনেক সময় ওয়েবসাইট আক্রান্ত হয়েছে৷ বিশেষ করে টাইগার মেট এর হ্যাক করা ডটবিডি-যুক্ত ডোমেইনগুলো সুরক্ষার দায়িত্ব বিটিসিএল এর উপরই বর্তায়৷

Film "Hacker" von Alexander Biedermann
হ্যাকারদের নিয়ে হলিউডেও হয়েছে সিনেমাছবি: salzgeber

হ্যাক এর তালিকায় সেনাবাহিনী, ব়্যাব এর ওয়েবসাইট

তবে শুধু সরকারি-বেসরকারি ওয়েবসাইট হ্যাক করেই ক্ষান্ত হয়নি দুষ্ট চক্র৷ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওয়েবসাইটও আক্রমণ করেছে হ্যাকাররা৷ ২০০৯ সালে তুর্কি হ্যাকাররা এই সাইটের দখল নিয়ে নেয় কিছু সময়ের জন্য৷ তবে তারা সাইটটির কোন বিশেষ ক্ষতি করেনি বলেই জানা যায়৷ এছাড়া ২০০৮ সালে ব়্যাবের ওয়েবসাইট হ্যাক করে ধরা পড়ে শাহি মির্জা নামের এক তরুণ৷

হ্যাকিং প্রতিরোধ

বাংলাদেশে হ্যাকিং প্রতিরোধে করণীয় কি? এই প্রশ্নের উত্তরে সুমন আহমেদ বলেন, ওয়েবসাইটগুলো যখন আরো বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে উঠবে, মানুষগুলো যখন আরো বেশি নির্ভরশীল হবে, তখন এর পেছনে যে লোকগুলো কাজ করছেন, তারা আরো অনেক বেশি সতর্ক হবেন৷ এবং ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও বাড়বে৷

উল্লেখ্য, বিশ্বজুড়ে হ্যাকারদের দৌরাত্ম্য নেহাত কম নয়৷ এইতো কিছুদিন আগেও উইকিলিক্সের সমর্থনে হ্যাকারচক্র হামলা চালায় মাস্টার কার্ডসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে৷ এমন অনধিকার প্রবেশের প্রবণতা তাই পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়৷ তবে যেকোন ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা মজবুত করা সম্ভব৷ সেক্ষেত্রে যেনতেন হ্যাকাররা সহজে সাইটের নিরাপত্তা ভাঙতে সক্ষম হবে না৷ বাংলাদেশের সরকারি ওয়েবসাইটগুলোর শক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরী৷

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী