জেন ফন্ডা – সেক্স সিম্বল থেকে অ্যাক্টিভিস্ট
ষাটের দশকের সেক্স সিম্বল আজ একজন রাজনৈতিক আন্দোলনকারী৷ একাধারে বার্বারেল্লা ও হ্যানয় জেন; এয়ারোবিক্সের রানি ও অস্কার জয়ী অভিনেত্রী জেন ফন্ডার জন্ম ১৯৩৭ সালের ২১শে ডিসেম্বর তারিখে৷
ফন্ডা পরিবার, সিনেমা যাদের রক্তে
জেন ফন্ডা ও তাঁর ভাই পিটার (‘ইজি রাইডার’ ছবির তারকা পিটার ফন্ডা) ছোটবেলায় বাবার বিশেষ দেখা পেতেন না, কেননা অস্কার বিজয়ী অভিনেতা হেনরি ফন্ডা শুটিং-এ ব্যস্ত থাকতেন, এছাড়া একটু গম্ভীর মানুষও ছিলেন৷ জেন আর পিটারের মা ফ্রান্সেস ফোর্ড সিমুর মাত্র ৪২ বছর বয়সে স্যানাটোরিয়ামে আত্মহত্যা করেন – জেনের বয়স তখন মাত্র ১২৷
ষাটের দশকের সেক্স সিম্বল
বার্বারেল্লার ভূমিকায় প্রথমে ইটালির ভির্না লিসি-র অভিনয় করার কথা ছিল৷ ঐ ভূমিকায় জেনকে নেওয়ার পরামর্শ দেন ছবির পরিচালক রজার ভাদিম-এর স্ত্রী স্বয়ং৷ পরিণাম: সিনেমার দর্শকরা আবিষ্কার করেন যৌন আবেদনময়ী জেন-কে; ওদিকে ফন্ডা বিয়ে করেন রজার ভাদিমকে৷
‘হ্যানয় জেন’
সত্তরের দশকের গোড়ায় জেন ফন্ডা ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিবাদে সংশ্লিষ্ট ছিলেন৷ তা সত্ত্বেও, তিনি যে কীভাবে উত্তর ভিয়েতনামিদের একটি বিমান বিধ্বংসী কামানের ওপর উঠলেন ও মাথায় হেলমেট পরা অবস্থায় ভিয়েতকং-দের সঙ্গে তাঁর ছবি উঠল, ফন্ডা তা আজও ঠিকমতো ব্যাখ্যা করে উঠতে পারেননি৷ তবে এডগার জে হুভারের এফবিআই গোয়েন্দা সংস্থা বহদিন ধরে ‘হ্যানয় জেন’-এর ওপর নজর রেখেছিল৷
দু-দু’টি অস্কার
সব সত্ত্বেও কিন্তু ‘হ্যানয় জেন’ দর্শক বা পরিচালকদের অনুরাগ হারাননি৷ ১৯৭১ সালের ‘‘ক্লুট’’ থ্রিলার ছবিতে এক বারবণিতার ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য তিনি প্রথমবার অস্কার জয় করেন৷ সাত বছর পরে আবার সেরা অভিনেত্রীর অস্কার জেতেন ‘‘কামিং হোম’’ (১৯৭৮) ছবিতে এক মার্কিন মেরিনের পতিব্রতা স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করে৷ এছাড়া তাঁর সুদীর্ঘ অভিনয় জীবনে তিনি একাধিক বার গোল্ডেন গ্লোব জিতেছেন৷
কুইন অফ এয়ারোবিক্স
বাড়িতে থেকে ওয়ার্ক আউট – ফন্ডা যে শরীরচর্চার এই সহজ নীতিটি আবিষ্কার করেছেন, এমন বলা চলে না৷ কিন্তু আশির দশকে তাঁর এয়ারোবিক্সের ভিডিও ও সেই সঙ্গে এয়ারোবিক্স সাজগোজ বিক্রির ব্যবসার মূল্য ছিল ৬০ কোটি ডলার৷ আশিতে পা দেবার মুখেও ফন্ডা আগের মতোই ওয়ার্ক আউটের ফ্যান – বিশ্বাস না হয়, তাঁর ইউটিউব ভিডিওগুলো চেক করে দেখতে পারেন৷
কামব্যাক কুইন
১৯৯০ সালে রবার্ট ডে নিরো-র সঙ্গে ‘‘স্ট্যানলে অ্যান্ড আইরিস’’ ছবি করার পর ফন্ডা ঘোষণা করেন যে, তিনি ফিল্ম থেকে অবসর নিচ্ছেন৷ কিন্তু ২০০৫ সালে তাঁকে আবার ‘‘মন্সটার-ইন-ল’’ ছবিটিতে দেখা যায় জেনিফার লোপেজের শ্বাশুড়ির ভূমিকায়৷
বহুমুখী
ফিল্ম থেকে ‘অবসর’ নেওয়ার পর ফন্ডা আরো বেশি করে সামাজিক ও রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিজম-এর দিকে ঝোঁকেন৷ ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় তাঁর জেন ফন্ডা সেন্টার ফর অ্যাডোলেসেন্ট রিপ্রোডাক্টিভ হেল্থ৷ এক বছর পরে তাঁকে ইসরায়েলের পশ্চিম তীর ও গাজা স্ট্রিপ দখলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে দেখা যায়৷ নারীবাদ, আন্তর্জাতিক রাজনীতি, ওয়েলনেস অথবা রান্নার বই ছাড়াও ২০০৫ সালে ফন্ডা তাঁর জীবনস্মৃতি প্রকাশ করেছেন৷
এখনও অ্যাক্টিভ
বড় ও ছোট রুপালি পর্দায় ফেরার পর ফন্ডাকে ‘‘পিস, লাভ অ্যান্ড মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং’’ ছবিতে এক হিপি দাদিমার ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যায়৷ আবার ‘‘দ্য নিউজরুম’’ টেলিভিশন সিরিয়ালে তিনি এক মিডিয়া কোম্পানির প্রধানের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন৷ রাজনীতিতে তাঁর আগ্রহ আগের মতোই: ছবিতে তাঁকে বিতর্কিত কিস্টোন পাইপলাইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে (২০১৭)৷
থামার কোনো প্রশ্ন ওঠে না
যেমন ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে, তেমনই তাঁর সাবেক পেশা অভিনয়ে জেন ফন্ডা আজও সক্রিয়৷ সদ্য তিনি নেটফ্লিক্সের ‘গ্রেস অ্যান্ড ফ্র্যাঙ্কি’ শো-টির তৃতীয় মরশুমের শুটিং শেষ করেছেন৷ নিজের জন্মদিনের পার্টিতে ফন্ডা কি পরে আসেন জানেন? মার্কিন পুরুষদের ডিনার জ্যাকেট টাক্সেডো পরে৷