জুতা যতদূর নিয়ে যায়
শরণার্থীরা জার্মানির কোলন-বন বিমানবন্দরে পৌঁছালে একজোড়া করে নতুন জুতা পান৷ কয়েক’শ কিলোমিটার যাত্রার পর পুরানো জুতার অবস্থা বেহাল হয়ে পড়ে৷ সেই জুতার দিকে তাকালে তার মালিকের করুণ কাহিনি স্পষ্ট হয়ে উঠে৷
জয়নাব, ৩৭, বাগদাদের বাসিন্দা
এই জুতাজোড়া ৪,৬০০ কিলোমিটারের বেশি পথ অতিক্রম করেছে৷ এই জুতা পরে ইরাক থেকে রওয়ানা হয়ে জয়নাব প্রায় ১৮ দিন ধরে যাত্রা করেছেন৷ আদম ব্যবসায়ীদের কুখ্যাত নৌকাতেও চড়তে হয়েছে তাঁকে৷ তুরস্ক ও গ্রিসের মধ্যে দুর্ঘটনা সত্ত্বেও সপরিবারে জীবিত অবস্থায় গন্তব্যে পৌঁছতে পেরেছেন তিনি৷
ক্লান্ত, বিধ্বস্ত
জয়নাব (বামে) ও তাঁর ভাবী হায়াতের মুখে প্রায় তিন সপ্তাহের কঠিন যাত্রার ফলে ক্লান্তির ছাপ দেখা যাচ্ছে৷ তাঁরা দু’জনেই নীরব রয়েছেন৷ জয়নাবের স্বামী সালিম দাবি করছেন, যে অস্ট্রিয়া-জার্মানির সীমান্তে তাঁদের মারধোর করা হয়েছে৷
মোরতাজার, ৫, হেলমন্দ, আফগানিস্তান
যুদ্ধ ও সন্ত্রাস থেকে পালাবার সময় পছন্দ-অপছন্দের কোনো অবকাশ থাকে না৷ যেমন এই বালককে মেয়েদের জুতা পরেই ভিটেমাটি ছাড়তে হয়েছে৷ যাত্রাপথেই কোথাও এই জুতা কুড়িয়ে পায় ছেলেটি৷ ২১ দিন ধরে সাড়ে ছয় হাজার কিলোমিটারেও বেশি পথ অতিক্রম করেছে মোরতাজার৷ তার মধ্যে প্রায় ১২ ঘণ্টা বরফ-ঢাকা পথ দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে৷
হতবাক
মোরতাজারকে কোনো প্রশ্ন করলে সে ফিসফিস করে তার জবাব দেয়৷ ছেলেটির অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কেউ কিছু জানে না৷ কিন্তু তার চোখের দিকে তাকালে গভীর বেদনা ও ক্লান্তি অনুভূতি দেখা যায়৷ পাঁচ বছরের এই বালক তার বড় বোনের সঙ্গে জার্মানিতে এসেছে৷ তালেবান তাদের বাবাকে হত্যা করেছে৷ বয়সের কারণে মা এই যাত্রায় সঙ্গী হতে পারেননি৷
হাসান ইউসেফ বারাকাত, সিনজার, ইরাক
কালো, সুন্দর এই জুতোজোড়া দেখলে মনে হবে কোনো স্যুট-টাই পরা মানুষ এর মালিক৷ কিন্তু ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের হাসান ইউসেফ অতি সাধারণ জামাকাপড় পরে ইরাকের উত্তরে সিনজার থেকে রওয়ানা দিয়ে ৪,৩০০ কিলোমিটারের বেশি পথ অতিক্রম করেছেন৷
নিশ্চিন্ত...
এবং উত্তেজিত হাসান ইউসেফ৷ বিমানবন্দরের তাঁবুতে ঢুকে শান্তি পেয়েছেন তিনি৷ এক সাহায্যকারীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন চেয়ে নিয়ে নিজের ভাগ্নেকে পৌঁছ সংবাদ দিলেন তিনি৷ স্ত্রীকে নিয়ে প্রায় ১৫ দিন যাত্রার পর অবশেষে জার্মানিতে পৌঁছেছেন তিনি৷ স্মৃতিশক্তিও ঠিকমতো কাজ করছে না৷
সিয়াওয়ার, হাজারাজাত, আফগানিস্তান
এই তরুণ মা বড়ই লাজুক৷ বেশি কিছু বলতে চান না৷ শুধু জানা গেছে, যে তিনি সংখ্যালঘু হাজারা সম্প্রদায়ের মানুষ৷ তালেবানের নিপীড়নে তাদের টেকাই দায়৷ ৬,৮০০ কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিয়ে তিনি জার্মানিতে পৌঁছেছেন৷ পায়ের আঙুল অক্ষত রাখতে মোটা মোজার উপর পাতলা স্নিকার্স পরেছেন৷
মনে ভীতি
ফটো তোলার সময়েও সাহারনাজ তাঁর মা সিয়াওয়ারকে চোখে চোখে রেখেছিল৷ বয়স মাত্র দেড় বছর৷ জার্মানিতে এসে স্ট্রলার পেয়েছে তারা৷ তার আগে মেয়েকে বেশিরভাগ সময়ে কোলে নিয়ে থাকতে হতো৷ কেন তাদের ভিটেমাটি ছাড়তে হয়েছে, ক্লান্ত ছোট্ট মেয়েটি সেটা বুঝতে পারছে না৷