জিন্নাহর ভাষণের রেকর্ডিংস
৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩পাকিস্তানের প্রথম প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর একটি ভাষণ দিয়েছিলেন দেশভাগের দু'মাস আগে ৩রা জুন ১৯৪৭ সালে এবং অন্যটি ১১ই আগস্ট ১৯৪৭-এ পাকিস্তান গণপরিষদে৷ ঐতিহাসিক এই দুটি ভাষণই অল ইন্ডিয়া রেডিও (এআইআর)-র মহাফেজখানায় সংরক্ষিত ছিল এতগুলি বছর৷ যা পাকিস্তান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের প্রধান মুর্তাজা সোলাঙ্গি ২০১১ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিও পরিদর্শনে এসে জানতে পারেন৷
তারপর ২০১২ সালের মার্চ মাসে অল ইন্ডিয়া রেডিও-র মহানির্দেশক লীলাধর মাণ্ডলোইকে চিঠি দিয়ে জিন্নাহর ঐ দুটি ভাষণের রেকর্ডিংস পাকিস্তানকে দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়৷ তাতে সাড়া দিয়ে এআইআর সম্প্রতি তা ইন্টারনেটে ‘আপলোড' করলে পাকিস্তান তা ‘ডাউনলোড' করে নেয়৷ পরো তার সিডিও করা হয়৷ রেকর্ডিংস পাবার পর পাকিস্তান বেতারের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের প্রধান এডিটর জাভেদ খান জাদুন ভারতের এই সহযোগিতাকে বিপুলভাবে স্বাগত জানান৷ জিন্নাহর ঐ ভাষণ কবে প্রচার করা হবে সে সম্পর্কে উনি বলেন, ‘‘এডিটোরিয়াল স্তরে এখনও এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি৷ তবে ভাষণ দুটি প্রচার করা হবে কোনো একটি বিশেষ দিনে৷ হয়ত বা সেটা হতে পারে এ বছরের ১১ই সেপ্টেম্বর, জিন্নাহর মৃত্যু বার্ষিকীতে৷
১৯৪৭ সালের জুন মাসে দিল্লি থেকে দেয়া জিন্নাহর ভাষণে ছিল উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ কোনদিকে, অর্থাৎ ভারতে যাবে নাকি পাকিস্তানে যাবে, সে বিষয়ে গণভোটের কথা৷ গণভোট না হওয়া পর্যন্ত শান্তি বজায় রেখে অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করার জন্য মুসলিম লীগের প্রতি তাঁর আবেদনও ছিল তাতে৷
দ্বিতীয় ভাষণটি ছিল ১১ই আগস্ট ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের প্রথম গণপরিষদে দেয়া৷ ঐ ভাষণ প্রকৃত অর্থেই ছিল ঐতিহাসিক৷ সেখানে তিনি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের ওপরই সবথেকে বেশি জোর দিয়েছিলেন৷ জিন্নাহর রাজনৈতিক দর্শনে ধর্মনিরপেক্ষতার এক দলিল হিসেবে চিহ্নিত সেই ভাষণ৷ ভারতের অন্যতম স্বাধীনতা সংগ্রামী সরোজিনী নাইডু জিন্নাহকে অভিহিত করেছিলেন হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির দূত হিসেবে৷
প্রসঙ্গত, হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপির সভাপতি এল. কে আডবানি ২০০৫ সালে পাকিস্তান সফরে গিয়ে জিন্নাহর মাজারে লিখে আসেন, ‘‘এমন অনেক ব্যক্তি আছেন, যাঁদের নাম ইতিহাসে লেখা থাকবে, আবার এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যাঁরা ইতিহাস গড়েন৷ জিন্নাহ সেই বিরল ব্যক্তিত্বের একজন৷ এই মন্তব্যের জন্য আডবানিকে দেশে ফেরার পর কম বিপাকে পড়তে হয়নি৷ বিজেপি সভাপতি পদে তাঁকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয় এবং ক্ষমা চাইতে হয়৷ হিন্দুত্ববাদী বিজেপি মনে করে সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে দেশ ভাগের জন্য দায়ী জিন্নাহ৷
পাকিস্তানের গণপরিষদে দেয়া ঐ ভাষণে জিন্নাহ বলেছিলেন, পাকিস্তানে জাতি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব নাগরিকের সমান অধিকার৷ ধর্মীয় অর্থে একজন হিন্দু বা মুসলিম হতে পারেন, তবে রাজনৈতিক অর্থে সকলেই পাকিস্তানের নাগরিক৷