1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মান প্রেসিডেন্টের বিস্ময়কর পদত্যাগ

১ জুন ২০১০

যুদ্ধ পরবর্তী জার্মানিতে এই প্রথম কোন প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করলেন৷ বিদেশে জার্মান সেনাদের অবস্থানের সঙ্গে জার্মানির অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত - এ ধরণের মন্তব্য করার জের ধরেই ক্যোলার সোমবার পদত্যাগ করেন৷

https://p.dw.com/p/Nf97
সাবেক প্রেসিডেন্ট ড. হর্স্ট ক্যোলারছবি: AP

হর্স্ট ক্যোলারের জন্ম ১৯৪৩ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাসে৷ বাবা-মায়ের সপ্তম সন্তান হর্স্ট ক্যোলার৷ জার্মান দখলকৃত পোল্যান্ডে হর্স্ট ক্যোলারের জন্ম৷ ১৯৪৪ সালে ক্যোলার পরিবার পোল্যান্ড ছেড়ে চলে যান জার্মানিতে, কিন্তু কমিউনিস্ট শাসনের অধীনে কিছুতেই থাকতে রাজি হননি বাবা এডুয়ার্ড ক্যোলার৷ পালিয়ে চলে যান লাইপসিগ-এ৷ ১৯৫৩ সালে, বার্লিনের সোভিয়েত নিয়ন্ত্রিত এলাকা ছেড়ে চলে যায় তাঁরা এবং ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত থাকেন বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে৷ এরপর স্টুটগার্টের কাছে লুডউইগ্সবুর্গ শহরে শেষ পর্যন্ত স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে ক্যোলার পরিবার৷ সেখানেই জীবনের প্রথম ১৪ বছর কাটে সাবেক প্রেসিডেন্ট হর্স্ট ক্যোলারের৷

সোমবার পদত্যাগের কারণ সম্পর্কে হর্স্ট ক্যোলার বলেন, ‘‘২২শে মে রেডিও'তে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিদেশে জার্মান সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে যে মন্তব্য আমি করেছি, তা তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে৷ আমি দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আমার এই মন্তব্য জাতীর মধ্যে ভ্রান্ত ধারণার জন্ম দিয়েছে৷''

Bundeskanzlerin Angela Merkel Rücktritt Horst Köhler
আঙ্গেলা ম্যার্কেলের বিশিষ্ট পরামর্শদাতা ছইলেন ড. ক্যোলারছবি: AP

সাবেক প্রেসিডেন্ট হর্স্ট ক্যোলার আফগানিস্তানে জার্মান সেনাবাহিবীর উপস্থিতি সম্পর্কে বলেন, অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণেই জার্মান সেনাবাহিনী এই অঞ্চলে কাজ করছে৷ এবং এই উক্তি করার পর জার্মান রাজনীতিবিদরা সমালোচনায় মুখোর হয়ে ওঠেন৷ বার্লিনে প্রেসিডেন্টের বাসভবন ‘বেলভ্যু' প্রাসাদে হর্স্ট ক্যোলার এক সাংবাদিক সম্মেলনে নিজের পদত্যাগ সম্পর্কে জানান, ‘‘আমি আমার পদত্যাগ ঘোষণা করছি এবং এই মুহূর্ত থেকেই তা কার্যকরী হবে৷ আমার কাজে সাহায্য এবং সহযোগিতা করার জন্য আমি প্রতিটি জার্মান নাগরিকের কাছে কৃতজ্ঞ, আমি তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি৷ আমার ওপর পূর্ণ আস্থা তাদের ছিল৷ আমি আশা করছি, আমার এই সিদ্ধান্তের কারণ তারা বুঝবেন৷''

ড. হর্স্ট ক্যোলার পেশায় একজন অর্থনীতিবিদ৷ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি ব্যংক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ বেশ কিছু স্বনামধন্য ব্যংকের পরিচালক হিসেবে তিনি কাজ করেছেন৷ বলা প্রয়োজন, হর্স্ট ক্যোলার তাঁর ডক্টরেট ডিগ্রীও পান অর্থনীতিতে৷ ২০০০ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ড. হর্স্ট ক্যোলার ওয়াশিংটনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন৷

Flash-Galerie Horst Köhler tritt zurück Afghanistan
সম্প্রতি আফগানিস্তান সফরে গিয়েছিলেন ক্যোলার, কি দেখেছেন সেখানে ?ছবি: AP

ড. হর্স্ট ক্যোলার জার্মানির প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম নির্বচিত হন ২০০৪ সালে৷ রাজনৈতিক দল খ্রীস্টিয় গণতান্ত্রিক দল তখন ক্ষমতায়৷ ২০০৪ সালের জুন মাস থেকে তিনি জার্মানির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷ দ্বিতীয়বারের মত তাঁকে নির্বাচিত করা হয় ২০০৯ সালের মে মাসে৷ অর্থাৎ, ঠিক এক বছর পরই তিনি প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন৷

ড. হর্স্ট ক্যোলারের পদত্যাগ প্রসঙ্গে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেন, ‘‘দুপুর বারোটায় প্রেসিডেন্ট ক্যোলার টেলিফোনের মাধ্যমে আমাকে জানান, দুপুর দু'টায় তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগের কথা জানাতে চান৷ আমি খুবই অবাক হয়েছি এবং টেলিফোনেই আমি চেষ্টা করেছি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আরেকবার ঠান্ডা মাথায় সবকিছু ভেবে দেখতে৷ কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি৷ এই পদত্যাগ, এভাবে পদত্যাগ, আমাকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছে৷ কিন্তু সাবেক প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তকে আমি পুরোপুরি শ্রদ্ধা করি৷''

চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল আরো বলেন, সম্প্রতি জার্মানি যে আর্থিক সংকটে পড়েছিল, তার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ বিদায়ী প্রেসিডেন্ট আমাকে দিয়েছিলেন৷ একজন অর্থনীতিবিদ, একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন যথার্থভাবে৷ তিনি ছিলেন সত্যিকার অর্থেই একজন পরামর্শদাতা৷

Berlin Reichstag Flash-Galerie 037
তিরিশে জুনের মধ্যে চাই নতুন প্রেসিডেন্টছবি: DW/Nelioubin

আগামী ৩০ দিনের মধ্যেই নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে হবে জার্মানিকে৷ সংবিধানে সেরকমই উল্লেখ রয়েছে৷ বর্তমানে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন জার্মান সংসদের উচ্চকক্ষ ‘বুন্দেসরাট'-এর সভাপতি ইয়েন্স ব্যোর্নসেন৷ প্রেসিডেন্ট বাসভবন ‘বেলভ্যু' প্রাসাদ ত্যাগের পূর্ব মুহূর্তে স্ত্রী এফা বনেটের হাত ধরে অশ্রুসজল চোখে ৬৭ বছর বয়স্ক ড. ক্যোলার জানান, ‘‘জার্মানির প্রেসিডেন্ট হওয়া আমার জন্য ছিল এক বিরল সম্মান৷''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদন: দেবারতি গুহ