জার্মান কৃষকেরা ক্ষেপে আছেন কেন?
সম্প্রতি হাজার হাজার কৃষক জার্মানির রাস্তায় নেমে এসেছিলেন৷ শ্লোগান দিয়েছেন, ‘আমরা ক্ষিপ্ত’৷ কিন্তু কেন? তারা বলছেন, তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে৷
‘আমরা ক্ষিপ্ত’
১৮ জানুয়ারি বিক্ষোভটি হয় রাজধানী বার্লিনে৷ এতে অংশ নেন প্রায় ২৭ হাজার মানুষ৷ তারা রাস্তা বন্ধ করতে শত শত ট্রাকটর নামান৷ কৃষকেরা ছাড়াও পরিবেশবাদীরা অংশ নেন এতে৷
আয়োজনে কারা ছিলেন?
এর আগেও কৃষকরা বিক্ষোভ করেছেন নানা সময়৷ কিন্তু এবারেরটি আলাদা ছিল৷ একেবারে তৃণমূলের কৃষকদের নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক সংগঠনগুলোর বাইরে গিয়ে এই আন্দোলন৷ একে বলা হচ্ছে ‘লান্ড শাফট ফেয়ারবিন্ডুং’ বা ‘যে সংযোগ দেশ তৈরি করে’৷
ফেসবুক গ্রুপ দিয়ে যাত্রা শুরু
২০১৯ সালের অক্টোবরে একটি ফেসবুক গ্রুপ দিয়ে এই আন্দোলনের যাত্রা শুরু৷ এর মধ্যেই এটি এক লাখ কৃষকের নেটওয়ার্কে দাঁড়িয়ে গেছে৷ জার্মানির ১৬টি রাজ্যের অন্তত সাতটিতে এর সাংগঠনিক কাঠামো আছে৷
সরকারের নতুন নীতি
জার্মানির সরকার নতুন সরকারি নীতি তৈরি করেছে৷ সেখানে চাষিদের নির্দিষ্ট সার ও পোকা মারার ওষুধ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে৷ কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, সম্প্রতি জার্মানিতে পোকামাকড়ের সংখ্যা অনেক কমে গেছে৷ ভূ-গর্ভস্থ পানিতে বেড়েছে নাইট্রেটের মাত্রা৷
দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে
জার্মানিতে কৃষকদের নির্ভর করতে হয় সুপারমার্কেটদের দয়ার ওপর৷ গড়ে একেকজন বছরে ২২ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ২৪ লাখ টাকা কামান, যা জার্মানির তুলনায় যথেষ্ট নয়৷ অনেকে কৃষি ব্যবসা বন্ধই করে দিচ্ছেন৷ তারওপর নতুন নীতির কারণে তাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে৷ তখন সুপারমার্কেটগুলো পণ্য বাইরে থেকে আমদানি করবে৷ এতে তারা আর বাঁচতে পারবেন না বলে দাবি করছেন কৃষকেরা৷
ক্ষতি হবে পরিবেশেরও
পরিবেশবাদীরা বলছেন, আমদানির কারণে বাড়তি কার্বন নিঃসরণ হবে৷ আমদানিকৃত খাবার ব্যবস্থাপনা ও পরিবহণ খরচ এর কারণ৷
সমাধানও আছে
কৃষকরা বলছেন, পোকামাকড়ের সংখ্যা কেন কমছে তার একটা বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা করা হোক৷ তার ওপর ভিত্তি করে কোন পদ্ধতিতে ও আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চাষ করতে হবে তা বলা হোক৷ এর সঙ্গে নাইট্রেটের মাত্রা বাড়ার কৃষি ও অকৃষি কারণগুলো আলাদা করে বিচার করে তবেই সিদ্ধান্ত নেয়া হোক৷
তবে কি খাবারের দাম বাড়ছে?
জার্মানির কৃষিমন্ত্রী ইউলিয়া ক্ল্যোকনার বলেছেন, পরিবেশগত উদ্যোগগুলো না নেয়ার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বছরে আট কোটি টাকা জরিমানা দিতে হয় সরকারকে৷ তবে সরকারের পক্ষ থেকে নাইট্রেটের বিষয়টি ভেবে দেখার ব্যাপারে তিনি একমত৷ তিনি এও যোগ করেন যে, জার্মানির জনগণকে খাবারের পেছনে ব্যয় বাড়াতে হবে৷