1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাশিয়ায় তৈরি গাড়িতে চড়লেন পুটিন

৮ মে ২০১৮

চতুর্থবারের মতো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে সোমবার শপথ নিয়েছেন ভ্লাদিমির পুটিন৷ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে তিনি এবার রাশিয়ার তৈরি লিমুজিন বেছে নিয়েছেন৷

https://p.dw.com/p/2xLnl
ছবি: Reuters/Sputnik/A. Nikolskyi

অতীতে পুটিন জার্মান গাড়ি নির্মাতামার্সিডিজের গাড়ি ব্যবহার করেছেন৷ এবার গাড়ি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে তিনি দেশবাসীকে একটি সাধারণ বার্তা দেয়ার চেষ্টা করেছেন আর সেটি হচ্ছে, আমদানি কমিয়ে দেশেই প্রয়োজনীয় পণ্য তৈরির চেষ্টা করতে হবে৷

২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রাইমিয়া দখলের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ রাশিয়ার উপর একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে চলেছে৷ তার প্রভাব পড়ছে রুশ অর্থনীতির উপর৷ ব্যাপারটি সাধারণ রুশ নাগরিকরা পছন্দ করছেন না৷ রাশিয়ার স্বাধীন জরিপ পরিচালনা সংস্থা লেভাদা সেন্টারের সবশেষ জরিপ বলছে, অধিকাংশ রুশ নাগরিক পুটিনের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে সন্তুষ্ট৷ কিন্তু পুটিনের বিরুদ্ধে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মূল অভিযোগ অর্থনীতি নিয়ে৷ ৪৫ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, দেশের আয় সাধারণ মানুষের মধ্যে ন্যায্যভাবে বিতরণ করতে পারছেন না পুটিন৷

বিষয়টি অনুধাবন করেই হয়ত পুটিন শপথ নেয়ার কয়েক ঘণ্টা পর আগামী ছয় বছরের জন্য তাঁর লক্ষ্যমাত্রার যে ফিরিস্তি দিয়েছেন তাতে ২০২৪ সালের মধ্যে দারিদ্র্যতার হার অর্ধেকে নামিয়ে আনার কথা বলেছেন৷ এছাড়া পেনশনের পরিমাণ বাড়ানো ও গড় আয়ু ৭৮ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন পুটিন৷

Russia preparing for more cyberattacks?

শপথ গ্রহণের পর দেয়া বক্তব্যে পুটিন আগামী ছয় বছরে নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছেন৷ ‘‘মানুষ আরও ভালভাবে বাঁচবে,'' বলেন তিনি৷

শপথ অনুষ্ঠানে জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর

জার্মানিসহ পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কে নানা টানাপোড়েন চলছে৷ এই অবস্থার মধ্যে সোমবার পুটিনের শপথ অনুষ্ঠানে জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর গেয়ারহার্ড শ্র্যোডারের উপস্থিতি নানান প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে৷ ১৯৯৮ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দলের এই নেতা৷

শপথ অনুষ্ঠানে প্রথম সারিতে রুশ প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভের পাশে বসতে দেখা গেছে৷ রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ তৃতীয় কিংবা চতুর্থ সারিতে আসন পেয়েছিলেন৷ অনুষ্ঠানে প্রায় পাঁচ হাজার অতিথি উপস্থিত ছিলেন৷

শুধু তাই নয়, শপথ নেয়ার পর পুটিনের সঙ্গে হাত মেলানো দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর শ্র্যোডার৷ রুশ প্রধানমন্ত্রী মেদভেদেভের আগেই এই সুযোগ পান শ্র্যোডার৷

জার্মানির এই সাবেক চ্যান্সেলর গত বছর রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি রোসনেফট'এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷ তিনি প্রায়ই রাশিয়ার উপর থেকে পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া উচিত বলে মন্তব্য করে থাকেন৷ রাশিয়ার প্রতি শ্র্যোডারের এমন আনুকুল্যের সমালোচনা করেছেন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা৷ জার্মানির সরকারি প্রচারমাধ্যমের একজন সাংবাদিক এখন থেকে শ্র্যোডারকে ‘রুশ লবিয়িস্ট' হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া যুক্তিসংগত হবে বলে মনে করছেন৷ জার্মানির গ্রিন পার্টির অন্যতম প্রধান বলেছেন, ভাড়াটে প্রশংসাকারী না হয়ে শ্র্যোডারের উচিত রাশিয়ার গণতন্ত্রের ত্রুটি নিয়ে কথা বলা৷

শ্র্যোডারের দল এসপিডি ও শাসক দল সিডিইউর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি৷

ম্যার্কেলের রাশিয়া সফর

পুটিনের শপথ অনুষ্ঠানে শ্র্যোডারের উপস্থিতি নিয়ে সমালোচনার মধ্যে জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল দশদিন পর রাশিয়া সফরে যাচ্ছেন৷ দক্ষিণ রাশিয়ার সোচি শহরে তিনি  রুশ প্রেসিডেন্ট পুটিনের সঙ্গে আলাপ করবেন৷ তার আগে সংক্ষিপ্ত নোটিশে জার্মানির অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী পেটার আল্টমায়ার ১৩ ও ১৪ তারিখে রাশিয়া সফরে যাচ্ছেন৷ সেই সময় তিনি অর্থনীতি ও জ্বালানি খাত নিয়ে আলোচনা করবেন৷ ম্যার্কেল ও পুটিনের মধ্যকার বৈঠকের প্রাথমিক প্রস্তুতি নিয়েও রুশ সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন আল্টমায়ার৷

পুটিনের কাছে প্রত্যাশা

চতুর্থবার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়া পুটিন তাঁর আগের মেয়াদগুলোর নীতিই চালিয়ে যাবেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷ জার্মানির গ্যোটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মানফ্রেড হিল্ডারমায়ার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘(পুটিনের শাসন ব্যবস্থা) আরও কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে, স্বৈরাচারী অবস্থা পর্যন্ত যাবে না৷'' তবে পুটিনের জন্য সেটি প্রয়োজন নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি৷ ‘‘তিনি বিশ্বকে গণতন্ত্রের ধোঁয়াশাযুক্ত একটি পর্দা দেখাতে চান,'' বলেন হিল্ডারমায়ার৷

রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কাজ করা জার্মান সরকারের সাবেক প্রতিনিধি গেয়ারনট এর্লার মনে করেন, পুটিন তাঁর নতুন মেয়াদে আগের মেয়াদের নীতিগুলো ‘ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে' যাবেন৷

পুটিনের আগের মেয়াদের শেষ কয়েক বছরে রাশিয়ায় কয়েকজন মানুষের একসঙ্গে একত্র হওয়ার ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের ভয় দেখানো হয়েছে, ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যমের নেটওয়ার্কগুলোর উপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে৷ ‘‘আমার আশঙ্কা, গণতান্ত্রিক চর্চার সুযোগ ধ্বংস হয়ে যাবে,'' বলেন জার্মানির লুডভিগ মাক্সিমিলিয়ান ইউনিভার্সিটির পূর্ব ইউরোপের ইতিহাসের অধ্যাপক মার্টিন শ্যুলৎস ভেসেল৷

রোমান গনচারেঙ্কো/জেডএইচ (এএফপি, রয়টার্স, ডিপিএ, এপি)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য