1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানির জাতীয় সংগীত নিয়ে গেল গেল রব ওঠেনি

৯ আগস্ট ২০১৯

কোনো দেশের জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার পরিবর্তনের প্রস্তাবকে কি সব ক্ষেত্রে হুমকি হিসেবে দেখা উচিত? জার্মানির ইতিহাসে জাতীয় সংগীত নিয়ে বিতর্ক বিরল নয়৷ আজও তার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে৷

https://p.dw.com/p/3Ncxc
ছবি: Reuters/U. Marcelino

বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত নিয়ে চলমান বিতর্কের পেছনে আবেগের যে কোনো অভাব নেই, এ বিষয়ে বোধহয় সব পক্ষই একমত৷ জাতীয়তাবোধ মানেই আবেগ-অনুভূতি৷ জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত, জাতীয় শৌধ মানুষের মনে স্বদেশ সম্পর্কে গর্ব, একাত্মবোধ, সম্মিলিত শক্তির অনুভূতি জাগিয়ে তোলে৷ জাতীয় ক্রিকেট টিমের যে কোনো সাফল্য সেই অনুভূতিকে লাগামহীন উচ্ছ্বাসে পরিণত করে৷ কিন্তু সব জাতি কি নিঃসঙ্কোচে দেশাত্মবোধের জোয়ারে নিজেদের ভাসিয়ে দিতে পারে?

আধুনিক জার্মানির মানুষের পক্ষে দেশপ্রেম বা দেশাত্মবোধের অনুভূতি মোটেই সহজ বিষয় নয়৷ নাৎসি জমানায় ‘মহান' জার্মান জাতির নামে হিটলার ইহুদি নিধন যজ্ঞ চালিয়ে প্রায় ৬০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিলেন৷ মানবজাতির ইতিহাসে অদ্বিতীয় সেই অপরাধের কালো ছায়া জার্মান জাতির উপর এমন কলঙ্ক বয়ে এনেছে, যা কখনোই ভোলা যায় না৷ হিটলারের ফ্যাসিবাদী শাসনযন্ত্র সাধারণ মানুষের জন্য স্পষ্ট নির্দেশাবলী তৈরি করে দিয়েছিল৷ কোনটা ‘নির্ভেজাল জার্মান' আর কোনটা ‘অ-জার্মান' তা আগে থেকেই ছেঁকে দিয়েছিল তারা৷

‘ডয়েচলান্ড উ্যবার আলেস' বা ‘সবার উপর জার্মানি' হয়ে উঠেছিল হিটলার-জার্মানির জাতীয় সংগীত৷ আউগুস্ট হাইনরিশ হফমান ফন হালার্সলেবেন নামের এক কবি ১৮৪১ সালে যে কবিতাটি লিখেছিলেন, ১৯২২ সালেই সেটি জার্মানির জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি পায়৷ তখনও হিটলার ক্ষমতায় আসেন নি৷ ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত নাৎসি জমানায় সেই কবিতার শুধু প্রথম অনুচ্ছেদটি জাতীয় সংগীত হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির সরকার আবার গোটা কবিতাটিকেই জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি দেয়৷ তবে স্থির হয়, সরকারি অনুষ্ঠানে একমাত্র তৃতীয় অনুচ্ছেদটি গাওয়া হবে৷ ১৯৯১ সালে পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের পর শুধুমাত্র তৃতীয় অনুচ্ছেদটি জার্মানির জাতীয় সংগীতের মর্যাদা পায়

পুনরেকত্রীকরণের পরেও জার্মানির মানুষ নিজস্ব জাতিসত্ত্বা নিয়ে দ্বন্দ্বে ছিলেন৷ চার দশকের কমিউনিস্ট শাসনের পর সাবেক পূর্ব জার্মানির মানুষের পক্ষেও নতুন বাস্তবতা মেনে নেওয়া সহজ ছিল না৷ অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে সেই জটিল সম্পর্ক চলে আসছে৷ আজও দুই অংশের মানুষের মধ্যে ব্যবধান দূর হয়নি৷ ২০০৬ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক দেশ হবার সুযোগ দেশাত্মবোধের অনুভূতিকে নতুন এক মাত্রা দেয়৷ জার্মান জাতীয় দলের ম্যাচে এই প্রথম সমর্থকরা সাবলীলভাবে জাতীয় পতাকা দোলাতে এবং জাতীয় সংগীতের সুরে কণ্ঠ দিতে দ্বিধা করেননি৷ সেই জার্মান জাতীয় দলে বিদেশি বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়ের অভাব ছিল না৷ ফলে ইউরোপের বুকে আধুনিক, ঐক্যবদ্ধ ও বহু জাতি-বর্ণ-ধর্মের দেশ হিসেবে জার্মানির মানুষ নিজেদের নতুন করে আবিষ্কার করেন৷ বিদেশি বংশোদ্ভূত কয়েকজন খেলোয়াড়ের ঠোঁট নড়তে না দেখে অবশ্য কিছু মানুষ তাঁদের দেশাত্মবোধ ও আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন৷

সেই ঐক্যবোধ অবশ্য আজ আর অটুট নেই৷ সাম্প্রতিক কালের শরণার্থী সংকটের জের ধরে জার্মানিতে আবার জাতীয় পরিচয় ও সত্তা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে৷ কট্টর দক্ষিণপন্থি শক্তি গণতন্ত্রের কাঠামোর মধ্যেই নিজস্ব স্থান করে নিয়েছে৷ এমনকি গত নির্বাচনে সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে এএফডি বা ‘জার্মানির জন্য বিকল্প' দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে৷ মূল স্রোতের রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রকাশ্যে নিজেদের তুলে ধরলেও দলের মধ্যে চরম দক্ষিণপন্থি ভাবধারা বার বার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে৷ আপাতত ক্ষমতাকেন্দ্রের দিকে তাদের নজর৷ সেই অঘটন ঘটলে সংবিধানসহ জাতীয় সত্তার বাকি প্রতীকগুলির কী দশা হবে, তা বলা কঠিন৷ 

Sanjiv Burman Kommentarbild App PROVISORISCH
সঞ্জীব বর্মন, ডয়চে ভেলে

এর মধ্যে জার্মানির পূর্বাংশে জাতীয় সংগীত নিয়ে নতুন করে এক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে৷ টুরিঙ্গিয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, পূর্বাঞ্চলের মানুষ এই সংগীতের সঙ্গে একাত্মবোধ করেন না৷ তাই জাতীয় সংগীত বদলানোর সময় এসেছে৷ বামপন্থি দলের একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর দাবি, নাৎসি আমলের কালো ছায়ার কারণে পূর্বাঞ্চলের মানুষ এই গান গাইতে চান না৷ ‘পিতৃভূমি' ও ‘ভ্রাতৃত্ববোধ' ইত্যাদি শব্দ আর যুগোপযোগী নয়, এমন মতামতও শোনা যাচ্ছে৷

তবে এমন বিতর্ক নিয়ে এখনো গেল-গেল রব ওঠেনি৷ যুক্তিতর্কের ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রীর আনা এই প্রস্তাব নিয়ে সমাজ ও সংবাদমাধ্যমে আলোচনা চলছে৷ কিন্তু বিষয়টি এখনো এমন গুরুত্ব পায়নি যে, অদূর ভবিষ্যতে জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের উদ্যোগ শুরু হয়ে যাবে৷

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলতে চান? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷