জার্মানির কার্নিভাল: খ্রিস্ট ধর্মের আগে ও পরে
জার্মানিতে কার্নিভালের মৌসুম মানে বিরাট উৎসব৷ নানা পোশাকে সেঁজেগুজে এ সময়টা মানুষ খুব উদযাপন করেন৷ কিন্তু কে কতটা এর ইতিহাস জানেন? সেই মধ্যযুগ থেকে চলছে এই উৎসব৷ আরো জানতে পুরো ছবিঘরটি দেখুন, পড়ুন৷
মধ্যযুগের আগেও
এখন যেই কার্নিভাল হয়, তার সূত্রপাত মধ্যযুগে৷ কিন্তু শীতের শেষ উদযাপনের জন্য জার্মানরা আগেও উৎসব করতেন৷ খ্রিস্টধর্ম আসার আগে লৌহযুগ বা প্রাকমধ্যযুগে ‘হেথেন’ আচারে শীত শেষ হবার খুশি উদযাপন করা হতো৷ তখন জার্মানিক গোত্রগুলো এই উৎসব উদযাপন করত৷
দেবতা দিওনিসুসের সম্মানে
রোমান যুগে রাইনের পাড়ের মানুষ বসন্ত এলে মদের দেবতা দিওনিসুসের সম্মানে বিরাট ভোজের আয়োজন করতেন৷ সেখানে প্রচুর মদ্যপান এবং হাসিতামাশা করা হতো৷ সে সময় কয়েকদিনের জন্য সাধারণ মানুষ শাসকগোষ্ঠীর খোলাখুলি সমালোচনা করতে পারতেন৷ কোনো ভয় ছিল না৷ এমন কিছু ঐতিহ্য এখনো আছে৷
যেভাবে হলো কার্নিভাল
রাইন অঞ্চলে যখন খ্রিস্ট ধর্ম এলো, তখন চার্চ হেথেন উৎসবকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করল৷ একে চার্চের পঞ্জিকায় স্থান দেয়া হলো এবং ‘কার্নিভাল’ নাম দেয়া হলো৷ এটি ল্যাটিন ‘কার্নে লেভারে’ শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘মাংস ছাড়া’৷ লোক ব্যুৎপত্তিতে এর সংস্কার করে করা হয় ‘কার্নে ভালে’ বা ‘মাংসকে বিদায়’৷ অর্থাৎ, লোকাচার দাঁড়ায় উপবাসের আগে প্রচুর মাংস খেয়ে নাও৷
উপবাস
ইস্টারের ছয় সপ্তাহ আগে উপবাস শুরু হয়৷ ৪০ দিনের এই উপবাসের আগে কার্নিভাল পালিত হয়৷ উপবাসের সময়টিকে ‘লেন্ট’ বলা হয়৷ চার্চের ভাষায় এ সময় শান্ত থাকা উচিত৷ পানাহারে নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত৷ যিশু খ্রিস্টের ওপর চলা নির্যাতন ও তাঁর মৃত্যুর সময়টিকে সম্মান জানাতেই এই ব্যবস্থা৷ তাই উপবাসের আগে এ অঞ্চলের খ্রিস্টীয় ধর্মাবলম্বীরা সর্বোচ্চ মজাটুকু করে নিতে চান৷
প্যারেড ও শ্রেণি বদল
কার্নিভালের একটি বড় ব্যাপার হলো এর প্যারেড৷ নানান পোশাক পরে মানুষ প্যারেডে অংশ নেন৷ পাশে রাস্তার দু’পাশে দাঁড়ানো মানুষদের দিকে খাবার ও উপহার ছুড়ে দেন৷ শুরুতে এ সময়টায় শ্রেণিবদল করতেই এই আয়োজন ছিল৷ যেমন, সাধারণ শ্রমজীবীরা এ সময় রাজা-রাজপুত্র বা প্রশাসকদের পোশাক পরতেন৷ তাদের আসল পরিচয় ঢাকা পড়ত মাস্কের পেছনে৷ প্যারেড থেকে তারা খাবার ও ওয়াইন ছুঁড়ে দিতেন৷ ক’দিনের জন্য ঠিক রাজাদের মতোই আচরণ করতেন৷
কার্নিভাল প্রতিবাদেরও ভাষা
ঊনিশ শতকের শুরুর দিকে কার্নিভালকে আনুষ্ঠানিকতা দেয়া হয়৷ সে সময় রাইন অঞ্চল শাসন করতেন প্রুশিয়ানরা৷ কার্নিভালের পুরোনো ঐতিহ্য অনুযায়ী, এ সময় প্রশাসকদের নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা বা সমালোচনা করা যেতো৷ তাই এ অঞ্চলের মানুষ প্রুশিয়ান সেনাদের পোশাক পরে তাদের নিয়ে ব্যঙ্গ করতেন৷ সেটি ছিল একরকম প্রতিবাদের ভাষা৷
আজকের দিনের কার্নিভাল
আজকের দিনে কার্নিভালে শিশু, কিশোর থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধরা নানান পোশাক পরে প্যারেডে যোগ দেন৷ এটি জার্মানির বন, কোলন, মাইনৎস, ডুস্যলডর্ফসহ রাইন অঞ্চলের সবচেয়ে বড় উৎসবের একটি৷ কেউ কেউ এর ধর্মীয় দিকটি মাথায় রাখেন৷ কারো কারো কাছে এটি শুধুই উৎসব৷ মুখোশ, চকোলেট, খেলনা, পানীয় নিয়ে বড় বড় প্যারেড হয়৷ তা বিলানো হয় রাস্তার দু’পাশে মানুষের মাঝে৷