1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে সরকার বদলালেও প্রশাসন বদলায় না

২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

জার্মানিতে জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগে কি দলীয়করণের চেষ্টা হয়? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে খুব একটা কষ্ট করতে হয়নি৷

https://p.dw.com/p/3QKyf
München Unterföhring Mehrere Verletzte bei Schießerei
ছবি: Getty Images/AFP/C. Stache

এক কথায় বলা যায়, জার্মানিতে সরকারি চাকুরিজীবীদের দলীয়করণের চেষ্টা করা হয় না৷  গুরুত্বপূর্ণ কোনো নিয়োগে দলীয় পরিচয় জার্মানিতে মুখ্য নয়৷

বাংলাদেশে একটি বিষয় বেশ স্পষ্টভাবে দেখা যায়৷ সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রশাসনে প্রতক্ষ্যভাবে ব্যাপক রদবদল হয়৷ বিষয়টি এমন যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দলটির সমর্থক সরকারি চাকুরিজীবীরা গুরুত্বপূর্ণ পদে যাবেন, দ্রুত পদোন্নতি পাবেন৷ সরকারি চাকুরিতে নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রেও সেই দলের সদস্য, শুভানুধ্যায়ীরা প্রাধান্য পাবেন৷ শুধু তাই নয়, যারা দলটির সমর্থক নন কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন, এমন মানুষদের কেউ কেউ হন ওএসডি, কেউবা অবসরে যেতে বাধ্য হন৷

বলছি না শুধু আওয়ামী লীগই এমনটা করে৷ বিএনপির মধ্যেও এই চর্চা আছে৷ এমনকি অতীতে সামরিক সরকারের মধ্যেও এমন প্রবণতা দেখা গেছে৷ আর ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় হোক, দেশের সাধারণ মানুষও এই বিষয়টি প্রকারান্তরে মেনে নেন বলেই মনে হয়৷

Arafatul Islam Kommentarbild App
আরাফাতুল ইসলাম, ডয়চে ভেলে

আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দ্বিতীয় মেয়াদে আমরা দেখেছি, বিচার বিভাগেও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে৷ বাংলাদেশের একজন প্রধান বিচারপতির দেয়া কিছু সিদ্ধান্ত ক্ষমতাসীন দলের পছন্দ না হওয়ায় রাতারাতি তাঁর বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ গণমাধ্যমে, রাজনীতিবিদদের কথায় উঠে এসেছে৷ ফলশ্রুতিতে একপর্যায়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি৷ এমনকি ইতোমধ্যে দু'টো দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়েরও প্রার্থনা করেছেন সেই বিচারপতি৷ শুধু তাই নয়, তিনি একটি বইও লিখেছেন, যেখানে বিচার বিভাগের উপর সরকারের হস্তক্ষেপের নানা উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে৷

বাংলাদেশে সবকিছু দলীয়করণের এই চেষ্টা জার্মানিতেও হয় কিনা তা নিয়ে লেখার দায়িত্ব পড়েছে আমার উপর৷ তো, শুরুতে ডয়চে ভেলের আর্কাইভ ঘেঁটে তেমন কিছু পেলাম না৷ এরপর যোগাযোগ করি ডয়চে ভেলের রাজনীতি বিষয়ক ডেস্কের সঙ্গে৷ সেখানে কর্মরত একাধিক জার্মান সাংবাদিক সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলে যা জানলাম তা হচ্ছে, জার্মানিতে জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ কিংবা সামরিক বাহিনী - কোথাও দলীয়করণের চেষ্টার নজির তেমন একটা নেই৷ রাজনীতিবিদদের মধ্যে এ ধরনের কোনো চেষ্টাও নেই৷

এক্ষেত্রে জার্মানিতে একযুগ বসবাসের অভিজ্ঞতা থেকেও কিছু কথা বলতে পারি৷ আমার কাছে মনে হয়েছে, জার্মানির রাজনৈতিক দলগুলো পুরোপুরি জনসমর্থন নির্ভর৷ দেশটিতে বর্তমানে টানা চতুর্থ মেয়াদে চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ তবে, এসব মেয়াদে ম্যার্কেলের দল সিডিইউ একক দল হিসেবে নয়, বরং অন্যান্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট গড়েই সরকার গঠন করেছেন৷ এটা থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, জার্মানিতে বর্তমান মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চিরশত্রুতা বলে কোনো ব্যাপার নেই৷ বরং সবচেয়ে বড় দুই দল জনগণের স্বার্থে একত্রে সরকার গঠন করতেও দ্বিধা করছে না৷ 

দলগুলোর জনসম্পৃক্ততা বোঝার আরেকটি বড় উদাহরণ ম্যার্কেলের শরণার্থী নীতি৷ ২০১৫ সালের শরণার্থী সংকটের সময় ১০ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয় জার্মান সরকার৷ ম্যার্কেল শক্তভাবে শরণার্থীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন তখন৷ কিন্তু তাঁর এই অবস্থান জার্মানির ভোটারদের একাংশ পছন্দ করেননি৷ ফলে, ক্রমশ ভোটার হারাতে থাকে তাঁর দল৷

ভোটারদের মনের এই অবস্থা বুঝতে পেরে ম্যার্কেল তাঁর নীতিথেকে সরে না এলেও সরকারে কিছু পরিবর্তন এনেছেন৷ তিনি এমন একজন রাজনীতিবিদকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছেন, যিনি শরণার্থীবিরোধী হিসেবে পরিচিত৷ পাশাপাশি যেসব শরণার্থীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত করেছেন৷ অবৈধ শরণার্থীদের ধরতে পুলিশের অভিযান দৃশ্যমানভাবে বাড়িয়েছেন৷ মোটের উপর জার্মানদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে, শরণার্থীদের সম্পর্কে যত নেতিবাচক কথা ছড়ানো হচ্ছে, তার একটা বড় অংশই গুজব৷

এখানে শিক্ষণীয় হচ্ছে, ম্যার্কেল কিন্তু জনসমর্থনের চিন্তা বাদ দিয়ে জনপ্রশাসন কিংবা বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাচ্ছেন না৷ বরং যেসব ভোটার তাঁর সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁর দলকে বাদ দিয়ে অন্য দলকে ভোট দিয়েছে, সেসব ভোটারকে তিনি নানাভাবে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন৷ এটাই গণতন্ত্র৷ আর গণতন্ত্রের এমন চর্চা যত বাড়বে, ততই মঙ্গল৷

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলতে চান? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য