1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে সন্দেহভাজনের পরিচয় প্রকাশ করা হয় না

২৪ জুলাই ২০২০

আমাদের দেশে এবং পশ্চিমা বিশ্বে আইন অনুযায়ী, কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তির অপরাধ প্রমাণের আগ পর্যন্ত তার পরিচয় প্রকাশ করা উচিত নয়। জার্মানিতে এ বিষয়ে ‘প্রাইভেসি আইন' বেশ কড়া।

https://p.dw.com/p/3fr9D
Symbolbild Deutschland Prozess gegen Andrea G. vor dem Landgericht Coburg
ছবি: picture alliance/dpa/D. Karmann

জার্মানিতে কোনো ব্যক্তিকে কোনো দুষ্কর্মে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হলে তার ছবি বা পরিচয় সাথে সাথে প্রকাশ করা হয় না। অপরাধ প্রমাণের আগ পর্যন্ত গণমাধ্যমও কোনো অপরাধীর নাম-পরিচয় প্রকাশ করে না।

জার্মানিতে ‘প্রাইভেসি আইন' বর্তমানে আরো কঠোর করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ‘তথ্য সংরক্ষণ/রক্ষা' (ডেটা প্রটেকশন) আইন। যে-কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তির অপরাধ প্রমাণের আগে পরিচয় প্রকাশ করা জার্মান আইন অনুযায়ী, তার প্রাইভেসি বা ব্যক্তি জীবনের মধ্যে অনধিকার প্রবেশের সামিল। জার্মান প্রাইভেসি অ্যাক্ট এতটাই কড়া যে, জার্মানির বাইরে অবস্থিত কোনো কোম্পানি, যারা এই দেশে কোনো দ্রব্য সরবরাহ করে থাকে বা কোনো সেবা প্রদান করে থাকে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে পারবে।

 জার্মান সংবিধানে পরিষ্কার বলা আছে, গণমাধ্যমের সম্পূর্ণ স্বাধীনতার কথা, যেখানে কোনো সেন্সরশিপ থাকবে না। তবে পাশাপাশি এটাও বলা আছে, প্রতিটি ব্যক্তির প্রাইভেসির প্রতি সম্মান জানানো এবং তাদের অধিকারের প্রতি খেয়াল রাখার কথা মাথায় রাখতে হবে সাংবাদিকদের।

জার্মান আইনে এটাও বলা আছে, যদি কোনো সংখ্যালঘু বা অভিবাসী অপরাধী হয়ে থাকে, তার অপরাধ প্রমাণ হলেও তার ধর্ম, দেশ অনেক ক্ষেত্রে উল্লেখ না করা, যাতে সেই দেশের মানুষ বা সেই ধর্মের মানুষ অন্যদের আক্রোশের শিকার না হয়।

জার্মানির প্রাইভেসি আইনের অন্যতম উদাহরণ বহুল আলোচিত ম্যাডেলিন ম্যাককান নিখোঁজের ঘটনা। ডেইলি টেলিগ্রাফের মতে, মর্ডার্ন হিস্ট্রি বা সাম্প্রতিক ইতিহাসে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে গণমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি খবর প্রকাশ ও প্রচার হয়েছে ব্রিটেনের ম্যাডেলিনকে নিয়ে।  ২০০৭ সালে পর্তুগালের একটি গ্রামে বেড়াতে গিয়ে নিখোঁজ হয় তিন বছরের ফুটফুটে শিশু ম্যাডি। চলতি বছরের জুন মাসে জার্মান কৌসুলিরা জানান, তারা ৪৩ বছর বয়সি এক জার্মান নাগরিককে সন্দেহ করছেন, যার বিরুদ্ধে শিশু যৌন নির্যাতনের অনেক অভিযোগ রয়েছে এবং যে বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। জার্মান পুলিশ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কাছে বার বার অনুরোধ করে রায় হওয়ার আগে পর্যন্ত অপরাধীর নাম পরিচয় যাতে প্রকাশ না করা হয়।

বেশিরভাগ জার্মান ও ব্রিটিশ গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ পায় যে, ম্যাডেলিন মামলায় একজন নতুন সন্দেহভাজন পাওয়া গেছে। জার্মান কৌসুলিদের ধারণা, সে ম্যাকলিনকে হত্যা করেছে।

যেহেতু তার অপরাধ প্রমাণ হয়নি, তাই তার নাম ও ছবি প্রকাশ করা হয়নি কোনো জার্মান গণমাধ্যমে। বেশ কিছু ব্রিটিশ মিডিয়া তার নাম ও ছবি প্রকাশ করলেও বিবিসি, স্কাই নিউজ টেলিভিশন ও অনলাইনে সন্দেহভাজনের নাম পরিচয় প্রকাশ করেনি। এছাড়া সান ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট নাম প্রকাশ করলেও ছবি প্রকাশ করেনি।

বিবিসি'র ওয়েবসাইটে বলা হয় জার্মান ‘প্রাইভেসি আইন’ অনুযায়ী তারা সন্দেহভাজনের নাম ও ছবি প্রকাশ করা থেকে বিরত থেকেছে।

জার্মান আইন এক্ষেত্রে কতটা কড়া এই ঘটনা থেকেই বোঝা যায়।

জার্মানিতে এমন বহু ঘটনার নজির আছে, যেখানে ভয়াবহ অপরাধীরা অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের ব্যাপারে কিছুই জানা যায়নি।

হানাও এর ঘটনাটাই ধরা যাক। বর্ণবিদ্বেষের জেরে এক ব্যক্তি ১০ জন মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। পরে সে নিজেও আত্মঘাতী হয়। এরপরও পুলিশ তার পুরো পরিচয় প্রকাশ করেনি। গণমাধ্যম কেবল জেনেছিল ব্যক্তির নাম টোবিয়াস আর। টোবিয়াস নামটা জার্মানিতে এত বেশি যে অপরাধীকে চেনা কোনোক্রমেই সম্ভব নয়।

HA Asien | Amrita Parvez
অমৃতা পারভেজ, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Böll

২০০৯ সালে দুই জার্মান খুনি উইকিপিডিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল, তাদের অপরাধ সম্পর্কে বিস্তারিত লেখার জন্য, এতে তাদের ‘প্রাইভেসি' লঙ্ঘন হয়েছে বলে দাবি করেছিল তারা।

ম্যাডির ঘটনাটি যদি আমাদের দেশে ঘটতো। সেক্ষেত্রে আমাদের মিডিয়াকী করতো? ওই সন্দেহভাজন ব্যক্তির নাম, ঠিকানা, আত্মীয় স্বজন কে কোথায় আছে সে বিষয়ে কে আগে ব্রেকিং দিতে পারবে সেই অসুস্থ প্রতিযোগিতায় মেতে উঠতো। হয়ত অপরাধীর বাবা-মা আত্মীয়-স্বজন এ ব্যাপারে কিছুই জানতেন না। তারপরও গণমাধ্যমের কাঠগড়ায় শুরু হতো তাদের বিচার।

জার্মানিতে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর উপর জনগণ এবং গণমাধ্যমের আস্থা রয়েছে। বাংলাদেশের মতো এখানে তারা অপরাধী ধরে ‘হিরো' বনে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় মাতে না। ২০১৬ সালে বার্লিনে ক্রিসমাস মার্কেটে ট্রাক হামলা হয়েছিল। সেই খবর প্রকাশ করার জন্য রাতে অফিসে ছুটতে হয়েছিল। জার্মানির আলোচিত সব গণমাধ্যমে সব ঘটনার আপডেট দেয়া হচ্ছিল পুলিশের বরাত দিয়ে। পুলিশের পক্ষ থেকে টুইট করে অনুরোধ করা হচ্ছিল সাংবাদিক এবং জনগণ যেনো তাদের কথা মতো চলেন। অর্থাৎ, গুজবে কেউ যাতে কান না দেয়। আর পুলিশের প্রতি আস্থার নমুনা সেদিন দেখেছিলাম জার্মান গণমাধ্যমে।

লেখা শেষ করবো আর একটি আলোচিত মামলার কথা জানিয়ে। ব্রিটিশ পপ তারকা স্যার ক্লিফ রিচার্ডের বিরুদ্ধে আশির দশকে শিশু যৌন হয়রানির অভিযোগ তদন্তে পুলিশ তাঁর বাসায় তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিল ২০১৪ সালে। সেটা নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছিল বিবিসি। ২০১৮ সালে বিবিসির বিরুদ্ধে ‘প্রাইভেসি লঙ্ঘনের’ অভিযোগে মামলা করেন এবং তা জেতেন স্যার রিচার্ড। বিবিসিকে এজন্য দুই লাখ ১০ হাজার পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দিতে হয়।

শিশু যৌন নির্যাতনের ঘটনায় রিচার্ডের বিরুদ্ধে যেমন কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি, তেমনি তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়নি। ২০১৬ সালে ওই মামলা থেকে খালাস পান তিনি। বিচারক তাঁর রায়ে বলেন ‘‘বিবিসি অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে স্যার রিচার্ডের প্রাইভেসি অধিকার লঙ্ঘন করেছে।‘ বিবিসি বলেছিল, মত প্রকাশের ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ভিত্তিতে তাদের প্রতিবেদন সঠিক ছিল। কিন্তু বিচারক তাদের ওই আবেদন নাকচ করে দেন।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান