জার্মানিতে সন্তান লালনপালনে যত বিভ্রান্তি
সন্তান লালনপালন নিয়ে গোটা বিশ্বেই নানাজনের নানামত রয়েছে৷ তবে জার্মানিতে এই বিতর্কে অংশ নেয়ার আগে যে বিষয়গুলো আপনার জেনে নেয়া ভালো, তা পাবেন এখানে৷
ঐতিহ্যবাহী বা অপ্রচলিত নাম
আপনি আপনার শিশুকে সবার চেয়ে আলাদা রাখতে চান, নাকি সকলের মাঝে রাখতে চান? সন্তানের নাম নির্ধারণ অনেকটা ট্যাটুর ডিজাইন পরিকল্পনা করার মতো ব্যাপার৷ তবে কেউই বোধহয় চাইবে না, নাম নিয়ে তার সন্তান ভবিষ্যতে বিপাকে পড়ুক৷ বেন এবং মিয়া জার্মানিতে বেশ পরিচিত নাম, আর গতবছর তাদের পছন্দের শীর্ষে ছিল মারি এবং এলিয়াস৷
জনসমক্ষে স্তন্যপান
যদিও সব মা সন্তানকে স্তন্যপান করান না, তবে জার্মানিতে এই চর্চা বেশ প্রচলিত৷ জার্মানিতে নগ্নতা এক স্বাভাবিক ব্যাপার, ফলে জনসমক্ষে শিশুকে স্তন্যপান করানো কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়৷ তবে নারীর এই অধিকার আইন দ্বারা সংরক্ষিত নয়৷ তাই কোনো দোকানদার চাইলে তাতে বাধা দিতে পারেন৷
বড় শিশুদের স্তন্যপান করানো
এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব আপনার৷ তবে জার্মানিতে কোনো কোনো মা প্লে গ্রাউন্ডে বসে তিন বছর বয়সি শিশুকেও স্তন্যপান করান৷ এখানে বলে রাখা ভালো, এই চর্চা খুব একটা দেখা যায় না, কেননা, অভিভাবকদের সাধারণত সন্তানের বারো মাস বা ক্ষেত্রবিশেষে ১৪ মাস বয়স অবধি সরকারি ভাতা দেয়া হয়ে থাকে৷ অনেক মা তাই চান, কাজে ফেরার আগেই সন্তানকে স্তন্যপান বন্ধ করানোর৷
চাইল্ডকেয়ার
কাজে ফেরার আগে সন্তানকে চাইল্ডকেয়ারে ভর্তি করানো এক জরুরি ব্যাপার৷ আর অনেক নতুন বাবা-মা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েন৷ কোনো কোনো অভিভাবক মনে করেন যে, চাইল্ডকেয়ার নির্ধারণের বিষয়টি শিশুর ভবিষ্যত শিক্ষা জীবনের উপর প্রভাব ফেলবে৷
টিকাদান
অবিশ্বাস্য শোনালেও কোনো কোনো অভিভাবক সন্তানকে টিকাদানের বিরোধী৷ জার্মানিতে এজন্য কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই৷ আর ওইসিডি ড্যাটা বলছে, ৯৬ শতাংশ শিশুকে ছোটবেলায় টিকা দেয়া হয়৷ তবে অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে, এই হার আরো কম৷ টিকাদানের বিরোধীরা বিশ্বাস করেন, এটা শুধুমাত্র তখনই কাজ করে যখন পর্যাপ্ত মানুষ তা অনুসরণ করেন৷
কান্না থামানোর উপায়
গোটা বিশ্বেই এটা এক বড় ইস্যু৷ রাতেরবেলা সন্তানের কান্নায় ঘুমাতে পারেন না অনেক বাবা-মা৷ তাই সমাধান খোঁজেন তাঁরা৷ এক্ষেত্রে একটি উপায় হচ্ছে ফের্বার মেথড৷ এই মেথড বলছে, শিশুকে না থামা পর্যন্ত কাঁদতে দিন৷ একসময় সে থেমে যাবে৷ কেউ কেউ এই মেথড পছন্দ করলেও অনেকে বলেন এটা আসলে শিশুর উপর এক ধরনের নির্যাতন৷
ঘুম পাড়ানোর ভিন্ন পন্থা
যাঁরা শিশুকে ঘুম পাড়ানোর প্রশিক্ষণের বিপক্ষে, তাঁরা সম্ভবত ‘অ্যাটাচমেন্ট প্যারেন্টিংয়ে’ বিশ্বাসী৷ কোনো কোনো অভিভাবক সন্তানের পাশে ঘুমাতে বা সন্তানের সঙ্গে একসাথে ঘুমাতে যান৷ তবে এই বিষয়টিও বিতর্কিত, কেননা, এতে করে শিশুর একা ঘুমানোর প্রবণতা কমে যায়৷
ডিসপোজেবল বা কাপড়ের ডায়পার অথবা ডায়পারমুক্ত
ডায়াপার আরেকটি বৈশ্বিক আলোচনার বিষয়৷ সহজভাবে ব্যবহারোপযোগী অনেক ডায়াপার বাজারে আছে৷ এবং এখনো অনেক অভিভাবক পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাপড়ের ডায়াপার ব্যবহার করেন৷ কিন্তু এগুলো পরিষ্কার করা সহজ কাজ নয়৷ আর যাঁরা ঝামেলা ফ্রি থাকতে চান, তাঁরা ব্যবহার করেন ডিসপোজেবল ডায়াপার৷ কোনো কোনো অভিভাবক আবার কোনোরকম ডায়াপার ছাড়াই সন্তান পালন করেন৷ তবে এটা এখনো বিরল৷
ঘরে তৈরি খাবার বা বোতলে ভরা খাবার
অবশ্যই কিছু অভিভাবক আছেন, যাঁরা নিজহাতে তৈরি খাবার শিশুকে খাওয়াতে ভালোবাসেন৷ তবে সবাই এমন নয়৷ আর জার্মানিতে অরগ্যানিক শিশু-খাবার বেশ সহজলভ্য৷ এর মধ্যে কোনটা ভালো, সেটা বিবেচনার দায়িত্ব আপনার৷
টিভি এবং ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস
শিশুদের জন্য অসাধারণ কিছু অ্যাপস এবং টেলিভিশন প্রোগ্রাম রয়েছে৷ আর অনেক এক বছর বয়সি শিশুই তাদের নানা-নানির চেয়ে ভালো মোবাইল ব্যবহার করতে পারে৷ যদিও শিশুদের ডিজিটাল ডিভাইস দেয়ার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে, তবে বাস্তবতা হচ্ছে অনেক অভিভাবক সন্তানদের মোবাইল বা টিভির সামনে রাখতে পছন্দ করেন না৷ আবার সন্তানরা যখন সেসব নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তখন সেই সময়টুকু এক ধরনের ছুটি হিসেবে উপভোগ করেন তারা৷
চিনি
জার্মান অভিভাবকদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা রয়েছে৷ সেটা হচ্ছে, কার সন্তান কতদিন অবধি মিষ্টি কিছু না খেয়ে বড় হয়েছে৷ জার্মানিতে গ্রীষ্মে শিশুদের আইসক্রিম খাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার৷ তাই যেসব অভিভাবক শিশুদের তা থেকে বিরত রাখতে পারেন, তাদের বাহবা দেয়া যেতেই পারে৷ তবে দেখা যায় যে, দ্বিতীয় সন্তানের মিষ্টি অল্পবয়সেই জোটে, কেননা ততদিনে অভিভাবকরা সন্তান লালনপালনের নিয়মনীতির ক্ষেত্রে শিথিল হয়ে যান৷