1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে বোরখা নিষিদ্ধ হবে কী ?

২০ মে ২০১০

মে মাসের ১১ তারিখে ফ্রান্সে আইন করে বোরখা পরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে৷ সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করে কেউ জনসমক্ষে বের হতে পারবে না৷ বেলজিয়ামেও ঘটেছে একই ধরণের ঘটনা৷ জার্মানিতেও কি এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা জারি হতে যাচ্ছে ?

https://p.dw.com/p/NSQL
ছবি: AP

বেলজিয়ামে সম্প্রতি আইন করে বোরখা পরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে৷ বোরখা – যা শুধু মহিলাদেরই পরতে দেখা যায়৷ এবং এই পোশাক পরলে শুধুমাত্র চোখ দুটো দেখা যায়, শরীরের অন্য কোন অঙ্গ নজরে আসে না৷ আফগানিস্তানে যে ধরণের বোরখা পরে মহিলারা চলাফেরা করেন, সে ধরণের বোরখা পরা আইন করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ফ্রান্স'এও৷ জার্মানিতে এখনও যে কেউ এই বোরখা পরে চলাফেরা করতে পারে৷ কোন বাধা নেই, নেই নিষেধাজ্ঞা৷ কিন্তু তা কি সব সময়ই থাকবে ? জার্মান রাজনীতিকরা এ নিয়ে এখনও মাথা ঘামাচ্ছেন না৷ তবে কী বলছেন সাধারণ জার্মান নাগরিকরা ? একজন মহিলা বললেন, ‘‘আমি গতকালকেই বার্লিনে একজন মহিলাকে বোরখা পরিহিত অবস্থায় দেখলাম৷ ফ্রিডরিশস্ট্রাসেতে৷ ''

আরেক জন জানালেন, ‘‘বোরখা পরিহিত কোন মহিলা ? সম্প্রতি ট্রেনে একজনকে আমরা দেখেছি৷ তবে আমরা গ্রামে থাকি৷ আমাদের ওখানে এ ধরণের কিছু দেখা যায় না৷ গতকালকেই প্রথমবারের মত আমি বোরখা পরা কাউকে দেখলাম৷ আমার কিছুই মনে হয়নি৷''

Vollverschleierte Frau in Köln
জার্মানিতে এখনও যে কেউ এই বোরখা পরে চলাফেরা করতে পারে (ফাইল ফটো)ছবি: DW

আরেক মহিলার ভাষ্য, ‘‘আমরা মিউনিখে থাকি৷ বোরখা পরা মহিলা শুধু জুলাই এবং অগাস্ট মাসেই বেশি দেখা যায়৷ আমার মনে হয়, যে সব আরব পুরুষ এখানে থাকেন, তারা তখন তাদের স্ত্রীদের বেড়াতে নিয়ে আসেন৷''

ঠিক কতজন মহিলা জার্মানিতে বোরখা পরে চলাফেরা করছে, তার সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি৷ জার্মানিতে মুসলমানদের জন্য রয়েছে একটি পরিষদ৷ তাদের ভাষ্য অনুযায়ী সারা জার্মানিতে সব মিলে হয়তো ১০০ জন মহিলা রয়েছেন, যাঁরা বোরখা পরে চলাফেরা করছেন৷

তবে জার্মান রাজনীতিক মহলে ‘বোরখা পরা' নিয়ে এখনো কোন ধরণের উচ্চ-বাচ্য শোনা যাচ্ছে না৷ কিন্তু ক্ষমতাসীন জোট সরকারের শরীক দল এফডিপির সাংসদ সেরকান টোরেন খুব অল্প সংখ্যাকদের মধ্যে একজন, যিনি মনে করেন জার্মানিতে বোরখা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা উচিত৷ সেরকান বললেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি কতজন মহিলা বোরখা পরেন, সেই সংখ্যা বড় কথা নয়৷ কথা হল, বোরখা পরে তারা জনসমক্ষে বের হচ্ছে৷ জোর করে বোরখা পরানো হল – জোর করে বিয়ে দেয়া বা যৌনাঙ্গচ্ছেদ করার মতই অপরাধ৷ উত্তর আফ্রিকায় এ ধরণের সমস্যা লেগেই রয়েছে৷ বোরখা পরিহিত প্রতিটি মহিলাই একক একটি ঘটনা৷ সবাই বলতে পারে, ধর্মীয় স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে এই দেশে, দেশের সংবিধানে – কিন্তু তারও একটা সীমা থাকা উচিত৷ এর বেশি নয়৷''

Vollverschleierte Frau in Köln
জার্মানির কোলন শহরে বোরখা পরিহিত একজন (ফাইল ফটো)ছবি: DW

টোরেন নিজেই এসেছেন একটি মুসলিম অভিবাসী পরিবার থেকে৷ আজ তিনি সাংসদ৷ তিনি মনে করেন রাষ্ট্রের নিজস্ব ঐতিহ্য বহির্ভূত কাজে বাধা দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে৷ সেরকান-এর যুক্তি, ‘‘ যে বা যারা বোরখা পরে, সে পরিষ্কার বুঝিয়ে দিচ্ছে – আমাদের দেশ, আমাদের সমাজ নিয়ে তার বিশেষ কোন মাথাব্যাথা নেই৷ আমাদের সমাজের মূল স্রোতে সামিল হতে তাদের আপত্তি রয়েছে৷ আমাদের সমাজের সঙ্গে তাদের যোগাযোগও খুব হালকা৷ আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়৷ এটা গণতন্ত্রের পরিপন্থী৷ কোন মেয়ে নিজ ইচ্ছায় বোরখা পরে না, এটা এক ধরণের নির্যাতন৷ কারাবন্দীর মত – তাদের বোরখার মধ্যে আটকে রেখে চলাফেরা করতে হচ্ছে৷ এবং এজন্যই আমি মনে করি, জার্মানিতে বোরখা পরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা উচিত৷''

জোট সরকারের প্রধান শরীক দল সিডিইউ-র রাজনীতিক গ্যুন্টার ক্রিংস বললেন অন্য কিছু৷ ক্রিংস নিজেই বললেন, ‘‘কেউ সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে চলাফেরা করছে, তা আমাদের সমাজে সহজে মেনে নেয়া হচ্ছে না৷ কিন্তু আমি মনে করি, তা নিষেধ করা রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না৷ এসব পোশাক সরাসরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করাও সম্ভব নয়৷ ফ্রান্স আর বেলজিয়ামে যা ঘটেছে, তা আমার কাছে একটু বাড়াবাড়িই মনে হয়েছে৷''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন