1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিদেশি বিদ্বেষের রেশ

কারিন ইয়েগার / আরবি২৯ মে ২০১৩

ঠিক ২০ বছর আগে, অর্থাৎ ১৯৯৩ সালের ২৯শে মে জার্মানির সোলিঙেন শহরে বিদেশিদের উপর উগ্র দক্ষিণপন্থিদের হামলার এক ভয়াবহ ঘটনা গোটা বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল৷ দুই দশক পরে জার্মানি আজ কোথায় দাঁড়িয়ে?

https://p.dw.com/p/18fYd
"Ausländer raus" und Hakenkreuz. Fremdenfeindliche Graffiti an der ehemaligen Polizeiwache in Solingen-Wald. Coypright: Heinz Siering/1992.
Reportage Solingen Fremdenfeindlichkeitছবি: Heinz Siering/1992

ভয়াবহ সেই দিনটির কথা মনে হলে আজও শিউরে ওঠেন সেচিল চাকিচি৷ ‘‘এই ঘটনার শিকার আমিও তো হতে পারতাম৷'' এইভাবে প্রকাশ করেন তিনি মনের কথা৷

‘‘আমরা আতঙ্কে মাটিন নীচে সেলারে লুকিয়েছিলাম৷ ঘটনার পর এক সপ্তাহ বাচ্চাদের স্কুলে আনা নেওয়া করতাম আমরা৷'' ২০ বছর পর সোলিঙেন শহরের সেই ভয়ানক ঘটনার স্মৃতি চারণ করে জানান আরেক জন, মাইডে কুলাক৷

ভয়াবহ দিনটি

সোলিঙেন ১৯৯৩ সালের ২৯ মে৷ অন্যান্য দিনের মতই একটি দিন ছিল গেঞ্চ পরিবারের জন্য৷ হঠাৎ রাতের আঁধারে আগুন লেগে তছনছ হয়ে যায় সব কিছু৷ তুর্কি বংশোদ্ভূত গেঞ্চদের বাড়িটিতে আগুন লাগিয়ে দেয় বর্ণবাদী সন্ত্রাসীরা৷ মর্মান্তিক ভাবে মারা যায় পাঁচ জন৷ এর আগে বেশ কিছুদিন ধরেই জার্মানির পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন শহরে নব্য নাৎসিদের তাণ্ডব ও হামলার কথা শোনা যাচ্ছিল৷ সোলিঙেন-এ আগুন লাগানোর মধ্য দিয়ে পশ্চিমাঞ্চলে এসে পড়ে বিদেশি বিদ্বেষের ঢেউ৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিদেশিদের ওপর জঘন্যতম হামলা ছিল সেটি৷

এই ঘটনার পর আশেপাশের তুর্কি পরিবাররা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন৷ দরজার নেমপ্লেটে তুর্কি নাম বদলে ফেলেন৷ বাচ্চাদের বাইরের কাপড় চোপড় পরিয়ে বিছানায় পাঠানোর অভ্যাস করেন৷ যদি দ্রুত পালাতে হয়৷ সবাই বাড়িতে অগ্নিপ্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়ে মাথা ঘামাতে শুরু করেন৷ যাতে আগুন লাগলে তাড়াতাড়ি নেভানো যায়৷

আজও ভয় কাটেনি

আজ ঘটনার ২০ বছর পরও ভয় কাটেনি তাদের৷ সোলিঙেন-এর তুর্কি বংশোদ্ভূত মেয়েরা নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ করেন, করেন ভাবের আদান প্রদান৷ ‘‘এই আতঙ্ক নিয়ে তো বেশিদিন থাকা যায় না৷'' বলেন এই আসরের একজন সেচিল চাকিচি৷ মাথা নেড়ে সায় দেন আইলা উজুন৷ পেশাশিক্ষা স্কুলের শিক্ষিকা তিনি৷ স্থানীয় রাজনীতিতেও সক্রিয়৷ ঐ ঘটনার পর অভিবাসীদের মধ্যে যে প্রচণ্ড ভীতি বিরাজ করছিল, তা লক্ষ্য করেছেন তিনি৷ ‘‘আবার এরকম কিছু ঘটতে পারে, এই ভয়টি এখনও রয়ে গেছে৷'' জানান আইলা উজুন৷ কোথাও এই ধরনের দুর্ঘটনায় তুর্কি পরিবার জড়িত থাকলে আঁতকে ওঠেন আইলা৷ মনে মনে দোয়া করেন, ঘটনাটি যেন যান্ত্রিক কোনো গোলযোগ থেকে হয়, বর্ণবাদী আক্রমণ থেকে নয়৷

চাঞ্চল্যকর নব্য নাৎসি মামলার শুনানি শুরু হওয়ায় বর্ণবাদ ও বিদেশি বিদ্বেষের বিষয়টি আবার সামনে চলে আসে ভুক্তভোগীদের৷ উল্লেখ্য বিদেশি ও অভিবাসীদের হত্যায় মেতে উঠেছিল জার্মানির পূর্বাঞ্চল সুইকাউ শহরের তিন জার্মান নব্য নাৎসি, দু'জন তরুণ ও একজন তরুণী৷ সেই সাথে ব্যাংক ডাকাতিও চালাতো তারা৷ ১০ বছর পর ধরা পড়ে তাদের এই অপতৎপরতা৷ এতদিন কী করে তারা চোখের আড়ালে থাকতে পারলো তা বুঝে উঠতে পারেননা আইলা উজুন৷ ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রশ্ন করেন তিনি, ‘‘কর্তৃপক্ষ কী করছিল, যারা আমাদের করের টাকায় চলে?''

নাগরিকত্ব নিলেও বৈষম্য থাকে

অনেক দিন আগেই জার্মান নাগরিকত্ব নিয়েছেন আইলা উজুন৷ মাইডে কুলাকেরও আছে জার্মান পাসপোর্ট৷ ১২ বছর বয়সে জার্মানিতে এসেছেন তিনি৷ জার্মান ভাষাটা রপ্ত করার জন্য বাবা-মা প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পাঁচ বছর পড়িয়েছেন তাঁকে৷ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ওষুধের দোকানের সহকারী হিসাবে৷ তবু নিজেকে তিনি একজন মুসলমান জার্মান বলে মনে করেন মাইডে৷

আইলা উজুনও লক্ষ্য করেছেন, নাম, চেহারা, পোশাক আশাক, ধর্ম, ভাষা ইত্যাদির কারণে মানুষ কীভাবে বৈষম্যের শিকার হয়৷ ‘‘আমি নিজে কোনো হেজাব পরি না৷ কিন্তু কাউকে হেজাব দিয়ে বিচার করি না, যা এই সমাজের অনেকেই করে থাকে৷ তবে আমি যে কোনো কট্টরপন্থার বিরোধী৷ এ দেশে থাকতে হলে তো আমি আমার নামকে বদলাতে পারবো ন৷'' আক্ষেপ করে বলেন আইলা৷

Reportage Solingen Fremdenfeindlichkeit
সোলিঙেন-এর তুর্কি বংশোদ্ভূত মেয়েরা নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ করেন, করেন ভাবের আদান প্রদানছবি: DW/K. Jäger

নামের কারণে প্রত্যাখ্যান

সেচিল চাকিচির ছেলেকে এই নামের কারণেই বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে৷ সেচিল জানান, ‘‘আমার ছেলে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির জন্য নানা জায়গায় আবেদন করেছিল৷ কিন্তু প্রত্যেক বারই প্রত্যাখ্যান পত্র পায়৷ যখন সে জার্মান নাম নিয়ে আবেদনপত্র পাঠালো, তখনই তাকে ইন্টারভিউর জন্য ডাকা হলো৷''

সোলিঙেনে ১৩০ জাতির লোকজন বসবাস করেন৷ ‘‘জার্মানিতে জন্ম নেয়া ৪০ শতাংশ ছেলেমেয়ে বিদেশি বংশোদ্ভূত৷'' আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে জানান তুর্কি মহিলা সমিতির আইলা উজুন৷ অভিবাসীদের সংখ্যা বাড়ছে এখানে৷ জার্মানিরও প্রয়োজন রয়েছে এই সব মানুষকে৷ কেননা দেশটিতে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে টানাটানি চলছে কর্মক্ষম মানুষের৷ তাই এখনই চিন্তাভাবনা করতে হবে, কীভাবে জার্মানির সকল মানুষ মিলেমিশে থাকতে পারে৷ সবাই পরস্পরের পাশে এসে দাঁড়াতে পারে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য