জার্মানিতে নগ্নতাবাদ
অন্য অনেক দেশের তুলনায় জার্মানির সৈকতে বা স্টিম বাথগুলোতে ‘নগ্নতাবাদ’ অনেক সহনীয় একটি ব্যাপার৷ ছবিঘরে থাকছে জার্মানির ‘নুডিজম’ বা নগ্নতাবাদের ইতিহাস...
‘মুক্ত দেহ’
ফ্রাইকরপারকুলটুর (সংক্ষেপে এফকেকে) বা নগ্নতাবাদ জার্মানির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির অন্যতম৷ তরুণ প্রজন্মের মধ্যে অবশ্য ‘ফ্রি বডি কালচার’-এর এই ঝোঁক কমে আসছে৷ তবে সৈকতে, স্পা সেন্টারে, এমনকি পার্কেও নগ্নতাবাদের এই ঐতিহ্য পালন করেন অনেকেই৷
স্বাস্থ্যকর অভ্যাস
১৯ শতকের শেষের দিকে জার্মানদের প্রবল বিশ্বাস ছিল, কাপড় ছাড়া থাকা এবং নগ্ন হয়ে লেকে গোসল করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো৷ সেইসময়ে জার্মানদের মধ্যে দূষিত শিল্প এলাকা থেকে অপেক্ষাকৃত প্রাকৃতিক এলাকায় বসবাসেরও একটা প্রবণতা দেখা দেয়৷ নগ্ন হয়ে ব্যায়াম বা পাহাড়ে ওঠার মাত্রাও ছিল বেশি৷ দুই নারীর এই ছবিটি ১৯৩৩ সালে বাভারিয়ার কিমজি লেক থেকে তোলা৷
চলচ্চিত্রে নগ্নতাবাদ
‘ভেগে সু ক্রাফট উন্ড শ্যোহাইট’, বাংলায় ‘সামর্থ্যবান ও সুন্দর থাকার পথ’ নামের একটি জার্মান ছবিতে সেই ১৯২৫ সালেই নগ্নতাবাদের ব্যাপারটি প্রথম তুলে ধরা হয়৷ বিখ্যাত জার্মান পরিচালক ও অভিনেত্রী লেনি রিফেনস্টালের এই সিনেমাটি নির্বাক চলচ্চিত্রের যুগে অন্যতম জনপ্রিয় সিনেমা৷ এরমধ্যে নগ্ন হয়ে গোসল ও নাচের দৃশ্য ছিল প্রচুর৷
এফকেকে এবং নাৎসী বাহিনী
পরিচালক ও অভিনেত্রী লেনি রিফেনস্টাল পরে হিটলারের প্রিয় চলচ্চিত্র পরিচালকে পরিণত হন৷ ১৯৩৬ সালের বার্লিন অলিম্পিক নিয়ে পরিচালিত সিনেমা ‘অলিম্পিয়া’য় নগ্নতাবাদের মধ্য দিয়ে তিনি ‘আর্য দৈহিক গঠন’-এর খেলার বিচারিক মানদণ্ডের সংযোগ কী, সে সংক্রান্ত একটি বিতর্কিত ও জাতিবিদ্বেষী দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরেন৷ হিটলারের নাৎসী পার্টি ক্ষমতায় আসার পরপরই নগ্নতাবাদ নিষিদ্ধ করলেও আবার তা অনুমোদন দেয় ১৯৪২ সালে৷
পূর্ব জার্মানিতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা
মূলত সংস্কৃতি কর্মীদের হাত ধরে ১৯৫০-এর দশকে পূর্ব জার্মানিতে নগ্নতাবাদ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে৷ ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এ ধারা চলে৷ তথাকথিত কমিউনিস্ট শাসনের আওতায় থাকা পূর্ব জার্মানির জনগণের জীবনযাত্রা অত্যন্ত শৃঙ্খলাবদ্ধ ছিল৷ নগ্নতাবাদ ছিল সেখানে মানুষের একমাত্র ছাড়ের অংশ৷ ছবিটি ১৯৮৪ সালে পূর্ব বালিনের মুগিজি লেকের পাড় থেকে তোলা৷
বাল্টিক সাগড় পাড়ে
বাল্টিক সাগর পাড়ের সৈকতগুলোতে নগ্নতাবাদ খুব স্বাভাবিক৷ তবে পোল্যান্ডের সীমানায় এটি দেখা যেতো না৷ পোল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার পর এক দেশের নাগরিক অন্যদেশে গেলেও পোল্যান্ড এবং জার্মানির মধ্যে নগ্নতা নিয়ে যথেষ্ট উত্তেজনা দেখা দেয়৷
নগ্নতাবাদের মূল দর্শন
ছবিটি ১৯৮০ সালে লাইপসিশের একটি সৈকত থেকে তোলা৷ যৌনতা নয়, নগ্নতাবাদের মূল দর্শন হলো, নিজের আত্মাকে উন্মুক্ত করে দেওয়া– সামাজিক সংকট থেকে নিজেকে মুক্ত করার চর্চা করা৷ প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়ার এই মতবাদে যৎসামান্য সাঁতারের পোশাক পরাকেই নিরুৎসাহিত করা হয়৷
মিউনিখেও রয়েছে নগ্নতাবাদ চর্চা
খালি পূর্ব জার্মানিতে নয়, মিউনিখেও রয়েছে নগ্নতাবাদের চর্চা৷ তবে জনসমক্ষে নগ্ন হওয়া মিউনিখে নিষেধ৷ কিন্তু কিছু অনুমোদনপ্রাপ্ত এলাকা, যেমন ‘ইংলিশ গার্টেন’ এবং ইজার নদীর তীর কিংবা ফ্লাউখার সৈকতে নগ্নতাবাদের সর্বোচ্চ চর্চা হয়৷ ছবিটি ২০০২ সালের একটি গরমের দিনে তোলা৷ এফকেকে এলাকাগুলোতে নির্দিষ্ট চিহ্ন দেওয়া থাকে এবং সেখানে নগ্ন হয়ে থাকা মানুষগুলো কোনওভাবেই পর্যটক আকর্ষণ করতে চান না৷
বার্লিনের পার্কে
প্রকাশ্যে নগ্নতা বার্লিনে নিষিদ্ধ৷ তবে কিছু কিছু পার্ক, যেমন মাওয়ার পার্ক, ভল্কসপার্ক ফ্রিডরিশাইন এবং টিয়ারগার্টেনে তা অনুমোদিত৷ লাখ লাখ জার্মানের পছন্দ
আঙ্গেলা ম্যার্কেলের নগ্নতাবাদ
কথিত আছে জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বার্লিন দেয়াল পতনের দিন স্টিম বাথ বা সাউনা নিয়েছেন৷ তবে প্রতি বৃহস্পতিবার তিনি সাউনায় যেতেন৷ পরিসংখ্যান বলছে, ৩ কোটি জার্মান দেশটির ২ হাজার ৩০০ সাউনায় যেতেন প্রতিনিয়ত৷ প্রায় সব স্টিম বাথের জায়গায় নারী-পুরুষ একসাথেই প্রবেশ করতে পারেন এবং সেখানে তাদের বস্ত্রহীনই থাকতে হয়৷ তবে যৌন ব্যবসার স্থান বা পতিতালয়ের সাথে এসবকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না৷
বুনো এবং উদাম
সবাই না হলেও কেউ কেউ নগ্ন হয়ে পাহাড়ে ওঠেন৷ উত্তর জার্মানির হার্জ পাহাড়ে এরকম আঠারো কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে, যেখানে নগ্ন হয়ে উঠতে হবে আপনার৷