1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিশু দত্তক নেওয়ার প্রবণতা

এসথার ফেলডেন / আরবি৩০ জুলাই ২০১৩

পায়ে কেডস, গায়ে টুপিওয়ালা শার্ট আর চোখে আধুনিক চশমা তাঁর৷ লম্বা কালো চুল পনিটেল-এর মতো করে বাঁধা৷ কিম স্পেরলিং এর বয়স ৩৭ বছর৷ জার্মানিতেই কেটেছে তার জীবনের অধিকাংশ সময়৷ তবে চেহারাই বলে দেয় যে, তাঁর শেকড় অন্য কোনো দেশে৷

https://p.dw.com/p/19Ge8
INCHEON, SOUTH KOREA - JUNE 24: A young child looks out the window of a vehicle as he and a group of approximately 24 North Korean asylum seekers arrive at Incheon International airport June 24, 2002 in Seoul, South Korea. The group had been hiding out on South Korean embassy grounds in Beijing. A statement from the Foreign Ministry announced that the North Koreans would be allowed to depart after authorities verified their identities and ensured that they had not committed crimes within China. (Photo by Chung Sung-Jun/Getty Images)
ছবি: Getty Images

১৯৭৫ সালের ডিসেম্বর মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সৌলে জন্ম কিম-এর৷ তবে ঠিক পরের গ্রীষ্মেই মাত্র ছয় মাস বয়সে এক জার্মান দম্পতি কিমকে পোষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন৷

রপ্তানি পণ্য হিসেবে শিশু

কিম স্পেরলিং ২৮২৯ শিশুর একজন, যাদের ১৯৬৭ থেকে ১৯৯৮ সালের মধ্যে জার্মানিতে আনা হয়৷ শিশু সাহায্য সংস্থা ‘ট্যার দে সম্' এসব শিশুকে জার্মান দম্পতিদের কাছে হস্তান্তর করে৷ এদের মধ্যে শুধু দক্ষিণ কোরিয়া থেকেই আনা হয় ১৮৯৮টি বাচ্চা৷ উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে শিশুদের দত্তক নেওয়ার ব্যাপারে যেসব সংস্থা এগিয়ে এসেছে, তার মধ্যে ‘ট্যার দে সম্'-ই প্রথম৷ ইতিমধ্যে সফল কর্মকাণ্ডের জন্য অ্যাডপশন এজেন্সি হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিও পেয়েছে সংগঠনটি৷

Porträt - Kim Sperling
কিম স্পেরলিং ২৮২৯ শিশুর একজন, যাদের ১৯৬৭ থেকে ১৯৯৮ সালের মধ্যে জার্মানিতে আনা হয়ছবি: Kim Sperling

শুরুতে সংস্থাটি বিশেষ করে ভিয়েতনামি শিশুদের জার্মানিতে আনার ব্যবস্থা করতো৷ তবে ৭০-এর দশক থেকে তাদের নজর পড়ে দক্ষিণ কোরিয়ার দিকে৷ ১৯৫৩ সালে কোরিয়ান যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে হাজার হাজার শিশুকে বিদেশে পাঠানো হয়৷ এসব শিশুর অনেকে এতিম৷ আবার অনেকের জন্ম হয়েছে যুদ্ধের সময় মার্কিন সেনাদের ঔরসে৷ এই সব শিশুর জন্ম বৈধ নয় এবং তাদের শরীরে রয়েছে ‘বিদেশি রক্ত'৷ এমনটি মনে করা হয় কনফুসিয়ান আদর্শে বিশ্বাসী কোরিয়ান সমাজে৷

এছাড়া ৬০-এর দশকে দেশটিতে শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কারণে নতুন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়৷ ‘ট্যার দে সম্'-এর মুখপাত্র মিশায়েল হয়ের জানান, ‘‘এইসময় মানুষ নগরমুখী হতে শুরু করে৷ এদের মধ্যে ছিল অনেক তরুণী, যারা কারখানাগুলোতে কাজ করত৷ সেখানে তারা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে গর্ভবতী হলে তাদের বাচ্চাদের বাইরের দেশে পোষ্য হিসেবে লালন-পালনের জন্য দিয়ে দিতো৷

উপযুক্ত পিতা-মাতার সন্ধান

এই কাজটিই এসে পড়ে ‘ট্যার দে সম্'-এর হাতে৷ প্রথমদিকে বাচ্চাদের জন্য উপযুক্ত পিতামাতা ঠিক করার ব্যাপার তেমন কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম কানুন ছিল না৷ মিশায়েল হয়ের বলেন, ‘‘আসলে তখন বিদেশ থেকে পোষ্য গ্রহণের বিযয়টি ছিল একটি নতুন ঘটনা৷'' শুরুতে মনে করা হয়েছিল, যে যেসব বাচ্চার জন্য মা-বাবা প্রয়োজন, তাদেরকে দত্তক নিতে আগ্রহী দম্পতি পেলেই যথেষ্ট৷ কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সংস্থাটি লক্ষ্য করে যে, এতে অসুবিধা হচ্ছে৷ তাই সম্ভাব্য পালক পিতা-মাতার সন্ধানে সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া তৈরি করা হয়৷ এর মধ্যে রয়েছে যুব দপ্তর ও মনোবিজ্ঞানীদের সাথে আলাপ আলোচনা করে উপযুক্ত মাবাবা ঠিক করা৷ সবশেষে একটি পরিষদের মাধ্যমে প্রার্থীর যোগ্যতার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা৷

আমলাতান্ত্রিক জটিলতা

অন্যদিকে আর একটি সমস্যা হলো কোরিয়ার আমলাতান্ত্রিক জটিলতা৷ যেমন দত্তক নেওয়ার জন্য কোনো শিশুকে পছন্দ করা হলে অনাথ আশ্রমগুলিকে বেশ কসরত করতে হয়৷ জন্মসনদ পেতে আদালত কিংবা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ঘোরাঘুরি করতে হয় বহুবার৷ এছাড়া দত্তক নেওয়ার প্রক্রিয়া কোরিয়ার আইন মেনে হচ্ছে কিনা, তা দেখার জন্য সেখানকার আইনজীবীদের ছাড়পত্র লাগে৷ এসব পদক্ষেপ যথাযথভাবে সম্পন্ন হলেই কোনো শিশুকে পালক নেওয়া সম্ভব৷

শিশু জার্মানিতে পৌঁছানোর পর থেকে পালক পরিবারকে সঠিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে টেরে ডেস হোমেস৷ সংস্থাটির মুখপাত্র মিশায়েল হয়ের জানান, ‘‘প্রথমদিকে আমাদের কর্মীরা এবং পালক পিতামাতারা মনে করতেন, শিশুটি তো জার্মানিতে চলে এসেছে, সে এখানে বড় হলে জার্মান সমাজের সাথে পুরোপুরি খাপ খাইয়ে নিতে পারবে৷'' কিন্তু পরবর্তীতে বিশেষ করে ৮০-র দশক থেকে স্পষ্ট হয় যে, এই হিসাবটা আসলে মিলছে না৷ প্রতিনিয়তই সংস্থাটি নতুন নতুন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে৷

আসল পরিচয়ের সন্ধান

‘‘যৌবনে পৌঁছে পালিত সন্তানরা জানতে চায়, আসলে আমি কোথা থেকে এসেছি? আমাকে কেন এখানে পাঠানো হয়েছিল? আমার আসল বাবা-মা কোথায়?'' তরুণদের এসব প্রশ্নের উত্তর জানার সুযোগ দিতে চেষ্টা করে ‘ট্যার দে সম্'৷ ১৯৯০ সালে প্রথম এই সব তরুণ-তরুণীকে জন্মভূমির সঙ্গে পরিচয় করাতে দক্ষিণ কোরিয়ায় ভ্রমণের ব্যবস্থা করে সংস্থাটি৷ সেই থেকে এই ধরণের ভ্রমণের আয়োজন অব্যাহত রয়েছে৷

Symbolbild Auslandsadoption Südkorea USA
প্রতীকী ছবিছবি: Michael Nagle/Getty Images

কিম স্পেরলিং জন্মভূমির সাথে পরিচিত হওয়ার পর থেকেই নাড়ির টান অনুভব করেন দেশটির জন্য৷ নিজের আসল মায়ের খোঁজ পেতে অনেক চেষ্টা করেছেন তিনি৷ শিক্ষা ও পেশাগত কাজ নিয়ে বারবার ফিরে গেছেন প্রিয় জন্মভূমির বুকে৷ তবে মায়ের খোঁজ পাওয়ার সব চেষ্টায় ব্যর্থ হয়৷

কিম কি জার্মান, নাকি কোরিয়ান? এই প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর তাঁর নিজেরও জানা নেই৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘নানা দিক দিয়ে আমি আসলে একজন কোরিয়ান৷ কিংবা হয়ত বা কোরিয়ান-জার্মান দুটোই৷'' স্ত্রী কোরিয়ান হওয়াতে দৈনন্দিন জীবনের সব কর্মকাণ্ডই দুই জগতের মাঝে আবর্তিত হয় কিমের৷ তাই তো তিনি বলেন, ‘‘কোরিয়া আমার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে৷ ভালোই তো৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য