জার্মানিতে ট্রাফিক সিগনালেই বিখ্যাত ব্যক্তিদের দেখা!
মনীষীদের সঙ্গে সমকামী যুগল বা কার্টুনের চরিত্ররাও ধীরে ধীরে রাস্তার মোড়ে লাল-হলুদ-সবুজ ট্রাফিক বাতিগুলোয় প্রতীক হিসেবে ভেসে উঠছে৷ শহরের সঙ্গে মনীষী বা কার্টুনের চরিত্রটির কোনো না কোনো সংযোগ নিশ্চয়ই রয়েছে৷
মার্ক্সের লালবাতি
আবক্ষ শ্মশ্রুযুক্ত যে ব্যক্তিটি দু’হাত বাড়িয়ে ট্রাফিক সামলাচ্ছেন ট্রিয়ার শহরের এই লালবাতিতে, তিনি আর কেউ নন, ‘কমিউনিজমের জনক’ কার্ল মার্ক্স স্বয়ং৷ মার্ক্সের জন্মই এই ট্রিয়ার শহরে, আগামী ৫ই মে তাঁর দ্বিশততম জন্মবার্ষিকী৷ সেই উপলক্ষ্যে ট্রিয়ারের মেয়র এই বিশেষ ট্রাফিক বাতিটির উদ্বোধন করেন৷ মজা এই যে, এই ট্রাফিক বাতিতে মার্ক্স লাল থেকে সবুজ হয়ে যান!
মাইনৎস শহরের বামন
উনবিংশ শতকের একটি গাথা অনুযায়ী ‘হাইনৎসেলম্যেনশেন’ নামের একদল বামন কোলন শহরে এসে রাতারাতি সব কাজ করে দিয়ে যেতো৷ তাদেরই দেখাদেখি ‘মাইনৎসেলম্যেনশেন’-দের উদ্ভাবন৷ এরা কিন্তু সরকারি জেডডিএফ টেলিভিশন কেন্দ্রের অনুষ্ঠানে বিজ্ঞাপনের ফাঁকে আবির্ভূত হয়৷ গোটা জার্মানির মানুষ এদের চেনে ‘মাইনৎসের বামন’ বলে, কেননা, জেডডিএফ টেলিভিশনের মুখ্য কার্যালয়ও মাইনৎস শহরে৷ কাজেই ট্রাফিক বাতিতেই বা তারা বাদ যাবে কেন?
পুতুলনাচের কাস্পার
জার্মানিতে পুতুলনাচ বলতেই লোকে বোঝে বাভেরিয়ার আউগ্সবুর্গ শহরের ‘পুপেনকিস্টে’ বা ‘পুতুলের বাক্স’ নামের পুতুলনাচের দলটিকে৷ ঐ পুতুলনাচের দলটির সবচেয়ে জনপ্রিয় পুতুলটির নাম হলো কাস্পার, যার সৃষ্টি সুদূর সপ্তদশ শতাব্দীতে৷ আউগ্সবুর্গের ট্রাফিক লাইটে কিন্তু কাস্পার আবির্ভূত হয় শুধুমাত্র সবুজ বাতিতে, কেননা, লালবাতি নিয়ে তো আর ঠাট্টা-মস্করা করা চলে না৷
সবুজ সংকেত দিচ্ছেন বেটোফেন
বন শহর হলো জার্মানির বিশ্ববরেণ্য সংগীতস্রষ্টা বেটোফেনের জন্মস্থান৷ ২০২০ সালে আসছে তাঁর ২৫০তম জন্মবার্ষিকী৷ সেই উপলক্ষ্যে বেটোফেনের জন্মের বাড়িটির অদূরে ব্যার্টা ফন জুটন্যার প্লাৎস মোড়টির একটি ট্রাফিক লাইটে বেটোফেনের মুখ ভেসে উঠছে – তবে আউগ্সবুর্গের মতোই, শুধু সবুজ বাতিতে৷
সমকামী যুগলকে নিয়ে ট্রাফিক লাইট
২০১৫ সালের মে মাসেই ভিয়েনার ‘স্টাটহালে’ নামের কনসার্ট হলটির সামনে এই বিশেষ ট্রাফিক বাতিগুলি লাগানো হয়েছিল৷ এবার ক্রিস্টোফার স্ট্রিট ডে উপলক্ষ্যে জার্মানির ফ্রাংকফুর্ট শহরও সেই পরিকল্পনা করছে৷ এভাবেই সহিষ্ণুতার বার্তা জায়গা করে নিচ্ছে ব্যস্তসমস্ত, যানবাহনবহুল রাজপথে৷
অস্ট্রেলিয়ায় ট্রাফিক বাতিতে পথ দেখাচ্ছেন মহিলারা
২০১৭ সালের মে মাসে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরের কেন্দ্রে দশটি ট্রাফিক বাতিতে পুরুষ প্রতীকগুলিকে বদলে করা হয় মহিলা৷এর বার্তা স্বভাবতই নারী-পুরুষের সমানাধিকার৷ তবে প্রকল্পটি চলবে মাত্র এক বছর৷ তার পরে কি যে তিমিরে, সে তিমিরেই?
খাঁটি বার্লিনবাসী
জার্মানির সবচেয়ে পরিচিত ট্রাফিক বাতির চরিত্র সম্ভবত বার্লিনের তথাকথিত ‘আম্পেলমান’৷ আম্পেলমান কথাটির অর্থ ট্রাফিক বাতিতে (অথবা ‘আম্পেল’-এ) যে মানুষটি (‘মান’) দাঁড়িয়ে থাকে৷ সাবেক পূর্ব জার্মানির ট্রাফিক মনস্তত্ববিদ কার্ল পেগলাউ এই চরিত্রটির স্রষ্টা৷ ১৯৬৯ সালে বিভক্ত বার্লিনের পূর্বাংশে প্রথম দেখা দেয় এই ‘আম্পেলমান’, পেগলাউ যাকে একবার বলেছিলেন, ‘বার্লিনের আসল নাগরিক’৷