1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে ‘অরফ্যান ডিজিজ’ বা বিরল অসুখের চিকিৎসা

১৪ ডিসেম্বর ২০১০

কোনো কোনো অসুখ বিসুখ এতই কদাচিৎ দেখা দেয় যে, ডাক্তাররা এসব রোগের চিকিৎসা করতে গিয়ে অনেকটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যান৷ কেননা রোগের লক্ষণগুলি সম্পর্কে তাঁদের খুব কম ধারণাই থাকে৷

https://p.dw.com/p/QXde
‘অরফ্যান ডিজিজ’ নিয়ে চিন্তিত চিকিৎসকরাছবি: picture-alliance/dpa

জার্মানিতে প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ বিরল অসুখ বিসুখের শিকার৷ বিশেষজ্ঞদের মতে এই ধরনের রোগের সংখ্যা প্রায় আট হাজারের মত হবে৷ অনেক ডাক্তার ও হাসপাতাল অভিজ্ঞতার অভাবে এই সব রোগের চিকিৎসার কোনো পথ খুঁজে পাননা৷ চিকিৎসা ক্ষেত্রে এইসব রোগের নাম দেয়া হয়েছে ‘অরফ্যান ডিজিজ'৷ সম্প্রতি এই ধরনের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার উন্নতির লক্ষ্যে বার্লিনে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল৷ এতে যোগ দিয়েছিলেন চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংস্থা, স্বাস্থ্যবিমা প্রতিষ্ঠান, রোগীদের আত্মীয়স্বজন ও বিশেষজ্ঞরা৷

৫৩ বছর বয়সি মারিয়ন লেসনি সিরিয়েনোমেলিয়া রোগে আক্রান্ত৷ মেরুদণ্ডে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র হয়ে যায় বিরল এই অসুখটিতে৷ মারিয়ন জানান, ‘‘প্রথমে আমার শরীরের এক পাশ অবশ হয়ে যায়৷ ১৬ বছর বয়স থেকে এই রোগের লক্ষণগুলি দেখা দেয়৷ মাত্র আড়াই বছর আগে বোঝা গেল এই অসুখটা কী? অর্থাৎ ৩৭ বছর লাগলো রোগটা ধরতে৷''

Manfred Boehm
অ্যামেরিকাতেও রয়েছে 'রেয়ার ডিজিজ' নিয়ে নানা ধরনের উদ্যোগছবি: Christina Bergmann

মারিয়ন লেসনির মত বহু রোগী তাঁদের রোগ নির্ণয়ের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করেন৷ অনেক চিকিৎসকই বুঝে উঠতে পারেননা, রোগটা আসলে কী? হয়তো ৪০ বছরের চিকিৎসক জীবনে মাত্র একবারই এই ব্যাধির সংস্পর্শে এসেছেন কেউ কেউ৷ জার্মানির অসনাব্রুক শহরের শিশুচিকিৎসক ডাঃ গিজব্যার্ট ফয়েগ্ট এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘কোনো কোনো অসুখকে বড় গোত্রের কোনো ব্যাধির মধ্যে ফেলা যায়না৷ রোগীদের নির্দিষ্ট কোনো অসুখের নাম বলতে না পারাটা আমাদের জন্য খুব কষ্টকর৷ এটা একটা বিরাট সমস্যা৷ এতে আমরা খুব অসহায় বোধ করি৷''

হামবুর্গ শহরের উটে কুন ডিস্টোনিয়া নামে এক ধরনের অসুখে ভুগছেন৷ জিনগত কারণে খিঁচুনি দিয়ে পেশিগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে৷ আগে ভাগে না জানিয়েই হঠাৎ দেখা দেয় রোগের লক্ষণগুলো৷ জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়তে হয় উটে কুনকে৷ কেননা চোখের পাতা বার বার বন্ধ হয়ে যায়৷ তাঁর ডাক্তারও ধরতে পারছেননা রোগটা৷ উটে কুন এপ্রসঙ্গে জানান, ‘‘বলা হয় এটা সাইকোসোমাটিক৷ বা মানসিক৷ দেখুন কীভাবে এই সমস্যাটা দূর করতে পারেন, তাহলে পেশির খিঁচুনিও আর থাকবেনা৷ চোখও আবার আবার খুলতে পারবেন৷'' বিরল ব্যাধি বিষয়ক সম্মেলনের জার্মানির মুখপাত্র মিরিয়াম মান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ইউরোপের অন্যান্য দেশ এ ব্যাপারে বেশ তৎপর৷ ফ্রান্স ও ডেনমার্কে ‘অ্যালায়েন্স ফর রেয়ার ডিজিজ' রয়েছে৷ অ্যামেরিকাতেও রয়েছে এই ধরনের উদ্যোগ৷ জার্মানি এ ক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে আছে৷''

Fallbeispiel Leukodystrophie
জার্মানিতে প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ বিরল অসুখ বিসুখের শিকারছবি: IDW

বিশেষ ধরনের হাসপাতালেরও অভাব রয়েছে এখানে৷ গত ফেব্রুয়ারি মাসে ট্যুবিংগেন শহরের ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকে চক্ষু, চর্ম ও স্নায়ুবিষয়ক বিরল অসুখ বিসুখের শাখা খোলা হয়েছে৷ বলেন প্রফেসর ডাঃ ওলাফ রিস৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমরা এখন পরের ধাপে যাচ্ছি৷ ট্যুবিংগেনে ৩০ থেকে ৪০ লাখ রোগীর চিকিৎসা করাতে পারব না আমরা৷ সারা জার্মানিতেই একটা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে চাই আমরা৷ কোন কোন জায়গায় কোন কোন বিশেষ ধরনের রোগব্যাধি দেখা দেয়, তা খুঁজে বের করতে হবে আমাদের৷''

বার্লিনের শারিটে ক্লিনিকে এবং হানোফার শহরের মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ হাসপাতালগুলি যতটা সম্ভব বেশি রোগীর চিকিৎসার ব্যাপারে সচেষ্ট হচ্ছে৷ এক এক জায়গায় এক এক ধরনের রোগের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে৷ প্রফেসর ওলাফ রিস আরো জানান, ‘‘আমরা চাই, রোগীদের যেন জার্মানির বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসার খোঁজে ঘুরতে না হয়৷ বার্লিনে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, হানোফার কিংবা মিউনিখে চক্ষুবিশেষজ্ঞ খোঁজার চেয়ে আমাদের চিকিৎসা কেন্দ্রের সঙ্গে তারা প্রথমে যোগাযোগ করতে পারেন৷''

এরপরের পদক্ষেপ হবে, বিরল ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীদের বিশেষ বিশেষ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা৷ অন্যান্য চিকিৎসকদেরও সম্পৃক্ত করতে হবে এই উদ্যোগে৷ বার্লিনের শারিটে ক্লিনিকে এ ক্ষেত্রে একজন সমন্বয়কারী বা দিক নির্দেশকও নিযুক্ত হয়েছেন৷ চিকিৎসারত ডাক্তার ও রোগীদের তথ্য উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করছেন তিনি৷ যেমন বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা ও বিশেষ ধরনের গবেষণাগারের খোঁজখবর দেয়া ইত্যাদির দায়িত্ব তাঁর ওপর ন্যস্ত৷ ডাঃ ক্রিস্টায়ানে মুন্ডলোজ এই রকম একজন সমন্বয়কারী৷ তিনি বলেন, ‘‘বিশেষ করে চিকিৎসক ও থেরাপিস্টদের জন্য আমি কাজ করি৷ তবে মাঝে মাঝে রোগীরাও আমার কাছে সরাসরি আসেন৷ আমি তাঁদের প্রথমে একজন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য বলি৷ রোগীর অনুমোদন পেলে তাঁর রোগ সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত চিকিৎসক আমার কাছে পাঠাতে পারেন, যা নিয়ে আমি এব্যাপারে আরো গবেষণা করতে পারি৷''

এ ক্ষেত্রে ইন্টারনেটও একটা বড় সহযোগিতা৷ প্যারিসকেন্দ্রিক ‘অর্ফা নেট' বিশেষ করে ৩০টি ইউরোপীয় দেশের ড্যাটা সংগ্রহ করছে৷ ক্লিনিক্যাল গবেষণা, ওষুধপত্র, রোগীদের স্বসাহায্য প্রতিষ্ঠানগুলি তালিকাভুক্ত রয়েছে এতে৷ প্রায় ৫৬০০ রোগসংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যাবে এই নেটে৷ রোগ নির্ণয়ে অসুবিধা হলে চিকিৎসকরা অর্ফা নেটের সাহায্য নিতে পারেন৷ প্রফেসর মানফ্রেড শ্টুরমান অর্ফা নেটের জার্মান শাখার দায়িত্বে রয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘অনেক ডাক্তার কোনো রোগীর অসুখটা ঠিক ধরতে পারেননা৷ কিন্তু রোগের লক্ষণগুলি বুঝতে পারেন৷ এই সব লক্ষণ কোনো নির্দিষ্ট অসুখের কিনা তা বের করতে হলে ‘অর্ফা নেটে'র সাহায্য নিতে পারেন তাঁরা৷''

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক