জার্মানিকে ১৯৭৪-এর বিশ্বকাপ জেতানো মুলার প্রয়াত
চলে গেলেন জার্মানির অন্যতম সেরা ফুটবলার গার্ড মুলার। বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
'বম্বার অফ দ্য নেশন'
মুলারকে বল হয় জার্মানির সর্বকালের সেরা স্ট্রাইকার। তার ৭০ বছর পূর্তিতে সাবেক জাতীয় কোচ জোয়াকিম লো বলেছিলেন, ''তিনি ছিলেন বম্বার অফ দ্য নেশন। তার মতো স্ট্রাইকার জার্মানি আর দেখেনি।''
'ফ্যাট লিটল মুলার'
মাত্র ১৮ বছর বয়সে মুলার আসেন বায়ার্ন মিউনিখে। ১৯৬৪ সালে তাকে প্রথম দেখার পর বায়ার্ন কোচ মোটেই খুশি হননি। ছোটখাট চেহারার স্ট্রাইকার গোল করবে কী করে? তখন তাকে বলা হতো, ফ্যাট লিটল মুলার। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি কোচকে তার মত পরিবর্তন করতে হলো।
প্রথম ইউরোপীয় কাপ জয়
১৯৬৬ সালে জার্মান কাপ জেতে বায়ার্ন। তারপর ১৯৬৬-৬৭ সালে উয়েফা কাপ। ক্লাবকে এই প্রথম একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় জয় এনে দেয়ার পিছনে মুলারের কৃতিত্ব ছিল অনেকখানি। ১৯৬৬-৬৭ সালে বুন্দেশলিগায় মুলারই ছিলেন সর্বোচ্চ গোলদাতা(২৮ গোল)। জার্মান লিগেও সাত গোল দিয়ে একই শিরোপা পান তিনি। পরপর দুই বছর জার্মান কাপ জেতে বায়ার্ন।
বিয়ে
মুলার আর দেরি করেননি। ১৯৬৭ সালে তিনি বান্ধবী উশি এবেনবখকে বিয়ে করেন। তারা ছিলেন আজীবনের সঙ্গী।
গোল করার কৌশল
মুলারের পা ছিল ছোট। তিনি যে কোনো পজিশন থেকে গোল করতে পারতেন। সেটাই ছিল তার বিশেষত্ব। বুন্দেশলিগায় ৪২৭ ম্যাচে তিনি ৩৬৫ গোল করেছেন।
বিশ্বকাপে অনবদ্য মুলার
তখন জার্মানি পূর্ব ও পশ্চিমে বিভক্ত। মুলার ছিলেন পশ্চিম জার্মানির টিমের রত্ন। ১৯৭০ বিশ্বকাপে তিনি ১০ গোল দিয়েছিলেন। গোল্ডেন বুটও পান। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয়সূচক গোল তারই।
বিশ্বকাপ জয়
এর চার বছর পর মুলারের গোলেই বিশ্বকাপ ঘরে তোলে পশ্চিম জার্মানি। ১৯৫৪ সালের পর দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ পেল পশ্চিম জার্মানি। নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ফাইনালের গোলকেই জীবনের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোল বলেছিলেন মুলার।
বায়ার্নের ত্রিমূর্তি
মুলার, বেকেনবাওয়ার ও গোলরক্ষক সেপ মাইয়েরকে বলা হত বায়ার্নের ত্রিমূর্তি। তারা ক্লাবকে অসংখ্য প্রতিযোগিতায় জিততে সাহায্য করেছেন। মুলার যে ১৫ বছর বায়ার্নে ছিলেন, তখন চারবার লিগ, চারবার জার্মান কাপ ও তিনবার ইউরোপীয় কাপ জিতেছে ক্লাব।
অ্যামেরিকায়
বায়ার্নের হয়ে দীর্ঘদিন খেলার পর মুলার অ্যামেরিকায় ফোর্ট লডারডেল স্ট্রাইকার্সের হয়ে ৭১ ম্যাচে ৩৮ গোল করেন।
মুলারের স্টেকহাউস
ফোর্ট লডারডেলে দ্য অ্যাম্ব্রি স্টেকহাউস কিনে নেন মুলার। নাম রাখেন গার্ড মুলারস অ্যাম্ব্রি। সেই স্টেকহাউস এখনো আছে। তবে তার নামবদল হয়েছে।
বিদায় বায়ার্ন
১৯৮৩ সালে বায়ার্নের হয়ে শেষ ম্যাচে নামেন মুলার। সেই সময় থেকেই মদ্যাসক্তি নিয়ে তার সমস্যা শুরু হয়।
খারাপ সময় কাটিয়ে
বন্ধুর সাহায্যে এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠেন মুলার। চিকিৎসা করে মদ্যাসক্তি কাটান। তারপর ১৯৯২ সালে তিনি বায়ার্নের অ্যামেচার দলের সহকারি কোচ নিযুক্ত হন।
আলঝাইমারে আক্রান্ত
তার ৭০ তম জন্মদিনের আগে বায়ার্ন জানিয়ে দেয়, মুলার আলঝাইমারে আক্রান্ত। তারপর তাকে নার্সিং হোমেই কাটাতে হয়েছে। ৭৫ বছর বয়সে ১৫ অগাস্ট তিনি চলে গেলেন। থেকে গেল ফুটবলের এই মহান স্ট্রাইকারের স্মৃতি।