জার্মানরা সব কাজই নিজে করেন
রান্নাবান্না, ঘর পরিষ্কার করা, বাগান করা, সংসারের সব কাজ তো জার্মানরা নিজে করেনই, ঘরবাড়ি রং করা, গাড়ি বা সাইকেল মেরামত করা বা মিস্ত্রির নানা কাজও বহু জার্মান নিজেই করেন৷ এই ছবিঘরে থাকছে তারই কিছু নমুনা৷
ড্রিল করা
ছবিতে দেখুন , নিজের বাড়ির সেলারে ইলেকট্রনিক ড্রিল মেশিন দিয়ে কাজ করছেন৷ ছবির মানুষটির নাম রল্ফ ক্লেফিশ, তিনি ছিলেন কোলনের স্থানীয় পত্রিকা ‘ক্যোলনার রুন্ডশাউ’এর প্রকাশনা বিভাগের প্রধান৷ তাঁর মতে, সবাই নিজের কাজ নিজে করবে, এটাই স্বাভাবিক৷
সুইমিং পুল পরিষ্কার করা
সুইমিং পুল পরিষ্কার রাখা একেবারেই সহজ কাজ নয়৷ নিজেদের ফিট রাখার জন্য প্রতিদিন স্বামী-স্ত্রী দুজনেই সাঁতার কাটেন৷ পুলটি ঝকঝকে রাখার দায়িত্ব রল্ফের আর তা তিনি বেশ আনন্দের সাথেই করে থাকেন৷ বিশাল বাড়ির একতলা করেন রল্ফ নিজে আর আরেক তলা করেন তাঁর স্ত্রী৷
নিজের সাইকেল মেরামতও করেন মার্গট
নিজেকে সচল ও সুন্দর রাখতে নিয়মিত সাইকেল চালান মার্গট৷ সাইকেলের সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা তা নিজেই চেক করেন এবং টুকটাক কোনো সমস্যা থাকলে নিজেই সেরে ফেলেন৷ তাঁর কাছে নারী বা পুরুষের আলাদা কাজ বলে কোনো কথা নেই৷
বাড়ি রং করেন ৮৩ বছর বয়সি ‘যুবক’
বাজার করা, বাগান করা ৮৩ বছর বয়সি ইয়োজেফ সুন্ডারকেম্পার নিয়মিত কাজ৷ তাছাড়া এ বয়সে তিনি বাড়ির রংও করেন৷ বাড়ির কোনো কিছু নষ্ট হলে ঠিকও করেন নিজে৷ ইয়োজেফের নিজস্ব জুয়েলারি ব্যবসা ছিল স্বর্ণের গহনা ছাড়াও হীরা, মুক্তা, পান্নার গহনাও বিক্রি হতো সেখানে৷ তবে ইয়োজেফের সবচেয়ে ভালো লাগতো তাঁর ভীষণ প্রিয় ঘড়ি ওমেগা বিক্রি করতে৷ তবে বাগান করা তাঁর সবচেয়ে প্রিয় শখ৷
করিতকর্মা হেলগা ক্যোসলিং
স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে নিজের বাড়িতে একাই থাকেন হেলগা৷ অত্যন্ত বিনয়ী এ নারী বাড়ির সব কাজ নিজেই করেন৷ বাগানের দেয়ালে মেশিন দিয়ে ছিদ্র করছেন দ্বিতীয় মোম দানিটি ঝুলানোর জন্য৷
সব কাজেই পটু
গাড়ি চালাতে খুব ভালোবাসেন হেলগা৷ প্রতিদিন নিজের ছোট্ট কুকুরকে মুক্ত বাতাস সেবন করাতে গাড়ি করে অনেক দূরে নিয়ে যান এবং এর মধ্য দিয়ে নিজেও সুস্থ থাকেন৷ বাইরে রেরোনোর আগে তাঁর বিএমডাব্লিও মোটরটা একটু চেক করে নিচ্ছেন৷ টুকটাক সমস্যা হলে নিজেই সারাতে পারেন৷
সব কাজ জানার সুবিধা বোঝেন মারিয়ানে
স্বামী-স্ত্রী দুজনেই ছিলেন শিক্ষক৷ স্বামী কয়েক বছর আগে না ফেরার দেশে চলে গেছেন৷ আগে দু’জনে মিলেমিশে শিক্ষকতার পাশাপাশি ঘরের সব কাজও করতেন৷ এখন মারিয়ানে লাইট লাগানো থেকে শুরু করে সব কাজ একাই করেন৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘ভাগ্যিস এসব কাজ আগেই করতাম, তা না হলে এখন খুব অসুবিধা হতো৷’’
বাগান পরিচর্যায় মারিয়ানে
বাগান পরিচর্যা করছেন মারিয়ানে৷ প্রয়োজনে এ কাজে তিনি অন্যদেরও পরামর্শ দিয়ে থাকেন৷ জার্মানরা কোনো কাজকেই কখনো ছোট মনে করেন না৷
নিজের ঘর যেন এক ওয়ার্কশপ
প্রায় প্রতিটি জার্মান বাড়িতেই এরকম ড্রিল মেশিন রয়েছে৷ তাছাড়া সব বাড়িতে একটি টুল বক্স তো থাকেই৷
জার্মানিতে কাজ শেখা সহজ
দেখুন, দোকানের দেয়ালে লাগানো বোর্ডে স্পষ্ট করে লেখা রয়েছে কাঠের তৈরি দরজা, জানালা বা ফার্নিচারে কোন রং কিভাবে লাগাতে হবে বা কতবার লাগালে দেখতে কেমন হবে৷ এসব জানার পর তো যে কেউ নিজেই রং করতে পারেন৷
নিজে করলে কাজে বৈচিত্রও আসে
আজকাল অনেকেই ঘরের দেয়ালে বিভিন্ন রং ব্যবহার করেন৷ বিশেষ করে শিশুদের ঘরের দেয়াল৷ আবার কেউবা ঘরের তিন দিকের দেয়াল সাদা করে এক পাশের দেয়ালে সবুজ, লাল বা অন্য কোনো রং করেন৷ এরকম দেয়াল দেখতে কিন্তু বেশ লাগে৷ আগের দিনে হলে বিভিন্ন রং মিশিয়ে নিতে হতো, তবে আজকাল তৈরিই পাওয়া যায়৷
পরিশ্রম কমিয়ে দেয় বিশেষ কিছু দোকান
দোকানে এভাবে কাঠের টুকরো পিস করা থাকে৷ এর ফলে নিজের ঘরের ফার্নিচার বা কিচেন নিজেই তৈরি করে নেয়া যায়৷ একটু ধারণা বা আগ্রহ থাকলে কিন্তু সবই করা সম্ভব৷ এসব কাজে সাহায্য করা বা পরামর্শ দেয়ার জন্য দোকানের বিভিন্ন বিভাগে আলাদা কর্মীও থাকে৷
নিজে করলে অনেক সাশ্রয়
জার্মানিতে একজন মিস্ত্রি বা ইলেকট্রিশিয়ানকে ঘন্টায় দিতে হয় কমপক্ষে ৫০ ইউরো অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় পাঁচ হাজার টাকা৷ কাজেই খুব জরুরি না হলে জার্মানরা এসব কাজ নিজেই করেন৷ এসব কাজ করতে কোনো সমস্যাও হয় না, কারণ, এসব তো তাঁরা ছোটবেলায় পরিবারের কাছ থেকেই শিখে নেন!