1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
সমাজজাপান

জাপানে পরিত্যক্ত নবজাতকদের হাসপাতাল

৩১ জুলাই ২০২২

জাপানের কুমামোতোতে জিকাই ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে পরিত্যক্ত নবজাতকদের জন্য একটি ‘হ্যাচ' আছে৷ গত ১৫ বছর ধরে জাপানের পরিত্যক্ত শিশুদের জন্য একমাত্র ‘নিরাপদ আশ্রয়স্থল' এই ক্লিনিকটি৷

https://p.dw.com/p/4Ev4k
১৯৪৮ সালে জাপানে গর্ভপাত বৈধ হয়ছবি: Reuters

এখানে গর্ভবতীদের ২৪ ঘণ্টা সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা আছে, পাশাপাশি আছে হটলাইনের সুবিধা৷ কেউ যদি গোপনে সন্তান জন্ম দিতে চায় তাদের সবধরনের সুযোগ সুবিধা দিতে সর্বক্ষণ প্রস্তুত এই ক্লিনিক৷

গোপনে প্রসব এবং পরিত্যক্ত সন্তানদের নিরাপদ আশ্রয়ের কারণে ক্লিনিকটি সমালোচনার মুখেও পড়েছে৷ কিন্তু এখানকার  প্রধান চিকিৎসক তাকেশি হাসুদা বললেন, ‘‘অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের কারণে অনেক নারী লজ্জায় তা প্রকাশ করতে চান না এবং এটাকে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা মনে করেন৷ এ ধরনের নারীরা এখানে এসে সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন৷''

হাসপাতালের কর্মী সাওরি তামিনাগা জানালেন, রাজি থাকলে কখনো কখনো তারা মায়েদের কাছে তাদের শিশুদের এখানে জন্ম দেয়ার বা রেখে যাওয়ার কারণ জানতে চান৷ তারা মায়েদের উৎসাহ দেন, যাতে তারা কিছু তথ্য লিখে রেখে যান, যাতে শিশুরা পরবর্তীতে তাদের শেকড় সম্পর্কে জানতে পারে৷

জার্মান মডেল অনুসারে ২০০৭ সালে ক্যাথলিক এই হাসপাতালে প্রথম পরিত্যক্ত শিশুদের জন্য ‘বেবি হ্যাচ' চালু হয়৷

শত শত বছর ধরে এ ধরনের ‘বেবি হ্যাচ' কর্মসূচি চলে আসছে৷ বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু দেশে এই মডেল চালু আছে৷

তবে ব্রিটেনসহ কয়েকটি দেশে এই মডেল নিষিদ্ধ হয়েছে৷ প্রত্যেকটি শিশুর তার জন্ম এবং বাবা-মা'র তথ্য জানার অধিকার আছে এবং এই ব্যবস্থায় শিশু অধিকার লঙ্ঘন হয় বলে অভিযোগ করেছে জাতিসংঘ৷

জিকাই হাসপাতাল মনে করে ‘বেবি হ্যাচ' মডেল মূলতঃ জাপানে শিশুদের হয়রানি এবং মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে৷ পুলিশ রেকর্ড অনুযায়ী, ২০২০ সালে সেদেশে ২৭টি শিশু পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় এবং ২০১৯ সালে হয়রানির শিকার হয়ে ৫৭ জন শিশুর মৃত্যু হয়৷

হাসুদা জানালেন, পরিত্যক্ত শিশুদের মায়েদের মধ্যে যৌনকর্মী এবং ধর্ষণের শিকার নারী আছেন, আছেন এমন নারী যাদের থাকার কোন জায়গা নেই৷

হাসুদা বলেন, ‘‘বেবি হ্যাচ ব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হল, সমাজের পরিত্যক্ত মায়েদের জন্য শেষ অবলম্বন এটি৷''

এখন পর্যন্ত ১৬১ টি শিশু এই হাসপাতালে রেখে গেছেন মায়েরা৷

জাপানের প্রথা অনুযায়ী, যারা সন্তানের জন্ম দেবেন, তারাই তাকে লালন-পালন করতে বাধ্য৷ কিন্তু ‘বেবি হ্যাচ' ব্যবস্থা এর বিরোধী হওয়ায় এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে হাসপাতালটিকে৷ যদিও সরকারের তরফ থেকে কোন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি৷ বরং বৈধ নিবন্ধন আছে এই ব্যবস্থার৷

দেশটিতে জন্ম, মৃত্যু এবং বিয়ের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক৷ যেসব শিশু পরিত্যক্ত এবং নিবন্ধনে যাদের পরিবারের পরিচয় থাকে না, তাদের ‘কলঙ্কিত' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়৷

হাসপাতালের নিষেধ সত্ত্বেও অনেক সময় জাপানের শিশু কল্যাণ কর্তৃপক্ষ পরিত্যক্ত শিশুদের পরিবার খুঁজে বের করার চেষ্টা করে৷ এর ফলে ৮০ শতাংশ শিশু পরবর্তীতে তাদের পরিবারের ব্যাপারে জানতে পেরেছে এবং ২০ ভাগ তাদের বাবা-মা বা আত্মীয়ের কাছে ফিরে গেছে৷

প্রতি বছর এই হাসপাতালের হটলাইনে লাখো নারীর ফোন আসে৷ এদের সবাই গোপনে সন্তান প্রসব করতে চান৷

বেবি হ্যাচে যে নারীরা তাদের সন্তানকে রেখে যান তাদের প্রশ্ন করা হয় কেনো তারা গর্ভপাত করাননি৷ হাসুদা জানান, নারীদের সাথে যেকোন নেতিবাচক ঘটনা ঘটুক না কেনো সমাজ তাদের সাহায্য না করে নারীকেই দায়ী করে এসবের জন্য৷

১৯৪৮ সালে জাপানে গর্ভপাত বৈধ করা হয়৷ ২২ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাত করা যাবে, তবে এজন্য পুরুষ সঙ্গীর অনুমতি লাগবে৷ সঙ্গী মৃত, নিখোঁজ হলে বা নারী ধর্ষণের শিকার হলে সেক্ষেত্রে অনুমতি দেয়া হয়৷

এপিবি/এসিবি (এপি, এএফপি)