জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন আনা কয়েকটি দেশ
লিঙ্গবৈষম্য থেকে শুরু করে ভাবমূর্তি পরিবর্তন – এ সব নানা কারণে বিভিন্ন দেশ তাদের জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন এনেছে৷ সম্প্রতি জার্মানিতেও জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের প্রস্তাব উঠেছে৷
অস্ট্রেলিয়া
প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের ঘোষণার পর ২০২১ এর ১ জানুয়ারি থেকে অস্ট্রেলিয়ানরা তাঁদের জাতীয় সংগীতের একটি ভিন্ন সংস্করণ গাইবেন৷ জাতীয় সংগীতে অস্ট্রেলিয়াকে আর ‘ইয়াং অ্যান্ড ফ্রি’ হিসেবে অভিহিত করা হবে না৷ আদিবাসীদের সুদীর্ঘ ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই পরিবর্তন৷
জার্মানি
দেশটির সমতা বিষয়ক কমিশনার ক্রিস্টিন রোজে-ম্যোরিং জাতীয় সংগীতে আরও বেশি লিঙ্গ সমতা আনার প্রস্তাব করেছেন৷ তিনি গানের যে অংশে ‘ফাটারলান্ড’ অর্থাৎ ‘পিতৃভূমি’ বলা হচ্ছে, সেখানে ‘হাইমাট’ অর্থাৎ ‘জন্মভূমি’ লেখার প্রস্তাব দিয়েছেন৷ তবে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলসহ অনেকে মনে করছেন, জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন নেই৷
অস্ট্রিয়া
২০১২ সালে অস্ট্রিয়ার জাতীয় সংগীতে ‘ছেলেরা’-র জায়গায় ‘মেয়েরা এবং ছেলেরা’ লেখা হয়৷ উদ্দেশ্য লিঙ্গ সমতা আনা৷
ক্যানাডা
উত্তর অ্যামেরিকার এই দেশটিও সম্প্রতি তাদের জাতীয় সংগীতকে আরও লিঙ্গ নিরপেক্ষ করেছে৷ সংগীতের দ্বিতীয় লাইনে ‘তোমার সব ছেলেরা’-র জায়গায় ‘আমরা সবাই’ লেখা হয়েছে৷
নেপাল
২০০৮ সালে নেপালে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়৷ তার আগের বছর নেপালে নতুন একটি গানকে জাতীয় সংগীতের স্বীকৃতি দেয়া হয়৷ ১৯৬২ সালে গ্রহণ করা নেপালের আগের জাতীয় সংগীতে রাজতন্ত্রের প্রশংসা ছিল৷ তাই এতে পরিবর্তন আনা হয়৷
আফগানিস্তান
দেশটিতে বেশ কয়েকবার জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন আনা হয়৷ তালেবান শাসনামলে আফগানিস্তানে কোনো জাতীয় সংগীতই ছিল না৷ তালেবানের পতনের পর ২০০২ সালে পুরনো জাতীয় সংগীতকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল৷ পরে ২০০৬ সালে তৎকালীন কারজাই সরকার সবকিছু নতুন করে শুরু করতে জাতীয় সংগীতও পরিবর্তন করে৷
রুয়ান্ডা
আফ্রিকার এই দেশটির কথা উঠলেই গণহত্যার কথা মনে পড়ে৷ ১৯৯৪ সালে মাত্র একশ দিনের মধ্যে সে দেশে পাঁচ থেকে ১০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল৷ গণহত্যা পরবর্তী রুয়ান্ডার ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে দেশটি ২০০১ সালে একটি নতুন জাতীয় সংগীত বেছে নেয়৷
দক্ষিণ আফ্রিকা
দেশটি ১৯৯৭ সালে আগের দু’টি জাতীয় সংগীত থেকে কিছু অংশ নিয়ে নতুন একটি জাতীয় সংগীত তৈরি করে৷ আফ্রিকান্স ও ইংরেজি ভাষায় গানটি রচিত৷ তবে আফ্রিকান্স ভাষার অংশটি বর্ণবাদ আমলে ব্যবহৃত জাতীয় সংগীতের অংশ হওয়ায় এর সমালোচনা করেন অনেকে৷ নেলসন ম্যান্ডেলা সেটি রিকনসিলিয়েটরি ব্যবস্থা হিসেবে বর্ণবাদ-পরবর্তী দক্ষিণ আফ্রিকার সংগীত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন৷
রাশিয়া
ভ্লাদিমির পুটিন ২০০০ সালে রুশ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ১৯৯০ সালের আগে ব্যবহৃত জাতীয় সংগীত ফিরিয়ে আনেন৷ তবে গানের কথায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়৷ ১৯৯০ সালে যে জাতীয় সংগীত গ্রহণ করা হয়েছিল তাতে কোনো কথা না থাকায় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া অ্যাথলিটরা এর সমালোচনা করেছিলেন৷ তাঁদের বক্তব্য ছিল, কথাবিহীন গান তাঁদের নাকি উদ্বুদ্ধ করতে পারেনি৷