1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জলবায়ু পরিবর্তন, আমাদের সমস্যা আমাদেরকেই দূর করতে হবে

২৪ নভেম্বর ২০০৯

ডিসেম্বরের প্রথমেই ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে শুরু হচ্ছে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন৷ জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন এই সম্মেলনের সাফল্য নিয়ে কিন্তু খুব চিন্তিত৷ তিনি এক বিবৃতিতে বললেন, আমাদের এই পৃথিবীতে আমাদেরকেই বাঁচিয়ে রাখতে হবে৷

https://p.dw.com/p/KeLr
ছবি: AP

আমাদের যত সমস্যা, তা নিজেদেরকেই দূর করতে হবে৷ আর এই জন্য যেকোন ভাবে আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনকে অর্থবহ করতে হবে৷ জার্মান ম্যাগাজিন স্পাইজেলে তার একটি খোলা চিঠি প্রকাশিত হয়েছে এই তো দিন দুয়েক আগে৷ সেখানে তিনি বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ইস্যুকে কোনভাবেই খাটো করে দেখা যাবে না৷ জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর মোকাবিলাই এখন সবচেয়ে বড় এজেন্ডা৷ এই সম্মেলনে ধনীদেশগুলোকে কার্বন নির্গমনের মাত্রা কমিয়ে আনার ঘোষণা দিতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোকে অর্থ সহায়তা দিতে হবে৷

প্রসঙ্গ: বাংলাদেশ

বাংলাদেশ৷ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ক্ষতির সম্মুক্ষিন হবে যে যে দেশগুলো, সেগুলোর অন্যতম৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক টেলি কন্ফারেন্সে বললেন, আগামী ডিসেম্বরে কোপেনহেগেন জলবায়ু সম্মেলনে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব মোকাবেলায় অনুন্নত দেশগুলোকে অর্থায়নের ব্যাপারে সুস্পষ্ট ঘোষণা চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ ওই সম্মেলনকে সামনে রেখে সম্প্রতি এক ভিডিও কনফারেন্সে বিশ্বের আট নেতার কাছে এ দাবি জানান তিনি৷ ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী লার্স রাসমুসেনের উদ্যোগে কোপেনহেগেন জলবায়ু সম্মেলনকে সামনে রেখে বিশ্বনেতাদের গুরুত্বপূর্ণ এক ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হলো এ ভিডিও কনফারেন্সে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন, ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী কেভিন রাডসহ মেক্সিকো, নরওয়ে ও ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷

Arsen Verseuchung in Bangladesh
উপকূলের অনেক এলাকাই ডুবে যাবেছবি: AP

ভিডিও কনফারেন্সে শেখ হাসিনা যা বললেন

কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অনুদান হিসেবে তহবিল যোগানোর ব্যাপারে উন্নত বিশ্বকে সুস্পষ্ট সমঝোতায় আসতে হবে৷তিনি বলেন, আমরা কোপেনহেগেন মিটিংয়ে ব্যর্থতা মেনে নিতে পারি না৷আমি আশাবাদী সকল উন্নত দেশগুলোকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে৷অঙ্গীকার আসতে হবে স্পষ্ট৷স্পষ্ট রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও আসতে হবে৷কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় অনুন্নত বিশ্বের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থান না নিয়ে উন্নত বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে৷

Sheikh Hasina
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাছবি: Mustafiz Mamun

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটাও জানিয়ে দেন, মূল দায়িত্বটা এখন উন্নত বিশ্বের ওপরই বর্তেছে৷বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মোকাবেলায় কোপেনহেগেন থেকে একটি অর্থনৈতিক প্যাকেজের ঘোষণা আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন৷

আরও অর্থ চাইলো বাংলাদেশ

এই সম্মেলনের ঠিক আগে জানা গেলে জলবায়ু পরিবর্তনের ধকল সামলাতে আগামী চার বছরের জন্য ধনী দেশগুলোর কাছে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার চাইছে বাংলাদেশ৷ এর আগে এ বিষয়ে যে অংক জানানো হয়েছিল, বতর্মান অংক আগের চাওয়া অর্থের দ্বিগুন৷

China Climate Change
জ্বালানি নিয়েও হচ্ছে নতুন চিন্তা ভাবনাছবি: AP

আগে জানানো হয়েছিল, আগামী মাসে কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর কাছে ক্ষতি পোষাতে সহায়তা হিসাবে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার চাইবে৷ কিন্তু বাংলাদেশের পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী হাসান মাহমুদ একটি সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, এই জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ৷ আর তাই এই অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য প্রয়োজন বাড়তি অর্থ৷ তারা হিসাব করে দেখেছেন, আগামী চার বছরে ধকল সামলানোর কাজেই প্রয়োজন হবে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ তিনি বলেন, আগামী মাসের জলবায়ু সম্মেলনে আমরা এই বিষয়টি বিশ্ব সমাজের সামনে উত্থাপন করবো৷ তিনি বলেন, এ কথা ঠিক যে ঐ সম্মেলনে তহবিলের বিষয়টি আমাদের কাছে প্রধান ইস্যু নয়, আমরা শিল্পোন্নত দেশগুলো যে কার্বন নির্গমন করছে, তার সরাসরি শিকার, এটা আমরা জানাবো৷ আমরা বলবো এই কারণে তাদেরকে অবশ্যই এর মাসুল গুনতে হবে, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করতে হবে৷

জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার

বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে চৌদ্দ কোটি মানুষ সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হতে চলেছে৷ ইতিমধ্যে এই পরিবর্তনের কারণে বন্যা, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, খরার মত ঘটনা ঘটছে৷ এ ছাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাব অল্প হলেও পড়তে শুরু করেছে৷ বিভিন্ন স্থানে পানি লবণাক্ত হয়ে পড়েছে৷ নোবেল বিজয়ী জাতিসংঘের ইন্টার-গভর্মেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ বা আইপিসিসি জানিয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের অন্তত ১৭ ভাগ ভূমি তলিয়ে যেতে পারে৷ আর ২০৫০ সাল নাগাদ ৫ কোটি মানুষ হতে পারে গৃহহীন৷ পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রাপ্ত অর্থে তারা সমুদ্রের নিকটবর্তী অঞ্চলে লবণাক্ততা দূর করা, বাঁধ, রাস্তা এবং হাজারো আশ্রয় শিবির বানানো হবে, রোপন করা হবে বৃক্ষ৷ তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে কোপেনহেগেন সম্মেলনে বিশ্ব নেতারা একটি একক সিদ্ধান্তে আসবেন বলে আমরা আশা করি৷

প্রতিবেদক: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক