1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কমে যাচ্ছে গমের উৎপাদন

১৬ জুলাই ২০১০

শীত আসছে ধীরে ধীরে৷ ছেঁড়া অথচ ওম দেয়- এমন এক গরম কাপড় পরে কৃষক জলিল শেখ খেতের ছোট সবুজ গমের চারায় পানি দিচ্ছেন৷ পাশের পুকুর থেকে কলসি ভরে কাঁধে করে পানি আনছেন বাংলাদেশের পাবনার ছোটনওগাঁ গ্রামের এই কৃষক৷

https://p.dw.com/p/OMz1
ছবি: AP

সবুজ চারার উপর ছড়িয়ে দিচ্ছেন পানি৷ এই হালকা শীতেও মানুষটির কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম৷ এক কলসি পানি দেন আর চারাগাছগুলোর দিকে তাকিয়ে বলেন, তোরা ঠিক মতো থাকবি৷ বড় হবি৷ তোদের রঙ যখন সোনালি আকার নেবে, মাথায় থাকবে গোছা গোছা গম... তখন আমি মনে করবো আমার এই কষ্ট সার্থক৷

জলিল শেখের এই স্বপ্ন কি আদৌ সত্য হবে? তাঁর কষ্ট কি সার্থক হবে? তাঁর ক্ষেত কি ভরে উঠবে সোনালি গমে... বোধ হয় না! বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই গমের উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমে গেছে৷ তবে দুই একটি জেলায় ভালো উৎপাদন হলেও সেখানে যে কতদিন এই অবস্থা থাকবে তা বলা মুশকিল৷ গম উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ শীতকাল৷ এক সময় তা ছিল বাংলাদেশে, কিন্তু এখন তা নেই ৷ এখন শীত এই এলো, এই গেলো অবস্থার মতো৷

হয়তো ইতিমধ্যেই আপনাদের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কেন এ রকম হচ্ছে? এক কথায় জলবায়ুর পরিবর্তন৷ অনেকে বলছে,ন জলবাযু পরিবর্তনের প্রভাব ইতিমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশে৷ পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা কৃষিব্যবস্থায় মারাত্মক কুফল বয়ে আনছে৷

তাপমাত্রা পরিবর্তনের ফলে ফসলের গুণাগুণ ও উৎপাদন কমে আসছে৷ মাটির উর্বরাশক্তি কমে যাচ্ছে এবং মাটিরক্ষয় বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ ফসলে দেখা দিচ্ছে নতুন নতুন রোগ৷ জানা যাচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে ধানের উৎপাদন ৮ ভাগ ও গমের উৎপাদন ৩২ ভাগ কমবে৷ অন্যদিকে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বলছে, বর্তমান হারে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা ২০৫০ সাল পর্যন্ত বাড়তে থাকলে, কেবলমাত্র দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে গম উৎপাদন শতকরা ১২ ভাগ, ধান উৎপাদন শতকরা ১০ ভাগ এবং ভুট্টা উৎপাদন ১৭ ভাগ কমে যাবে৷ এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার ১৬০ কোটি লোকের জন্য পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে৷

BdT Deutschland Wetter Mann mit Regenschirm und Hund im Kornfeld
ছবি: AP

কৃষিবিদরা জানান, মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ার কারণে আটার চাহিদা দ্রুত বাড়ছে৷ ফলে গমের চাহিদাও বাড়ছে৷ কিন্তু দেশে গমের উৎপাদন বাড়ছে না৷ বরং আশঙ্কাজনক হারে বছরের পর বছর কমছে৷ গত এক দশকে গমের উৎপাদন কমে অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে৷ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশে বর্তমানে গমের চাহিদা ৩৫ লাখ টন৷ উৎপাদন হচ্ছে ১০ লাখ টনের মতো৷ সে হিসাবে বছরে গমের ঘাটতি প্রায় ২৫ লাখ টনের বেশি৷

এক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, প্রতি বছর গম আমদানি করতে কেবল বাংলাদেশ সরকারকেই প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হচ্ছে৷ আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম বেড়ে গেলে এই খরচের পরিমাণ আরও বেড়ে যায়৷

জলবায়ু আর কৃষি একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত৷ কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায় জলবায়ু একটি বড় অংশ৷ তাই জলিল শেখের মতো সাধারণ কৃষকের দাবি, জলবায়ুর আরও পরিবর্তন হতে দেয়া যাবে না৷ এই পরিবর্তন যেন মানুষকে ক্ষুধা ও খাদ্য সংকটের দিকে ঠেলে না দেয়, সে লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে৷ তা না হলে এর মূল্য দিতে হবে তাঁর মত মানুষকেই ৷

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক