জর্জিয়ার সবচেয়ে বড় ময়লার ভাগাড়
জর্জিয়ার গোনিও ময়লার ভাগাড় পরিবেশবিদদের জন্য এক বড় মাথা ব্যাথার কারণ৷ ষাটের দশকে গড়ে ওঠা দেশটির সবচেয়ে বড় আর ক্ষতিকর এই ভাগাড় শেষ পর্যন্ত বন্ধ হতে যাচ্ছে৷ জঞ্জালের এই স্তূপ আর সেখানকার বাসিন্দাদের কথা জানুন ছবিঘরে৷
ক্যাসিনোর শহরে ময়লার ভাগাড়
ক্যাসিনোর কারণে জর্জিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ শহর বাটুমিকে অনেক সময় কৃষ্ণ সাগরের লাস ভেগাস নামে ডাকা হয়৷ তবে এই চিত্র দেখে সেটি বোঝার উপায় নেই৷ শহরটির মাত্র দশ কিলোমিটার দূরে গোনিওতে ময়লার এমন ভাগাড় গড়ে ওঠে ১৯৬০ এর দশকে ৷ বর্তমানে যার আকার তিন লাখ বর্গমিটার বা ৭৪ একর ছাড়িয়েছে৷ ময়লা জমতে জমতে উচ্চতা হয়েছে ১২ থেকে ১৫ মিটার বা ৫০ ফুট৷ ছবিতে দূরে বাটুমি শহরের সুউচ্চ ভবন দেখা যাচ্ছে৷
ময়লায় জীবন
ভাগাড়ের পাশেই ডুমবাদজে ও আরো ২৪ টি পরিবারের বসবাস৷ তাদের আয়ের উৎসও এখানকার জঞ্জাল৷ কিন্তু ময়লা কুড়িয়ে আর কতটাই বা আয় হয়৷ তাই সেখানকার বেশিরভাগ বাসিন্দাই দরিদ্র্য৷ পাশেই আছে সবুজ রঙের একটি পুকুর যা তাদের পানির উৎস৷ ডুমবাদজে জানান, পুরো এলাকাটাই আসলে দূষিত হয়ে পড়েছে এবং তাদের শিশুরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে৷
ফেলনা থেকে ঘর
৩৪ বছর বয়সি শ্রমিক ও আন্দোলনকর্মী গোখা ডুমবাদজে ভাগাড় থেকে কুড়ানো জঞ্জাল দিয়েই পাশেই খুপড়ি ঘর তুলেছেন৷ এখানের শতাধিক মানুষ ময়লা কুড়িয়ে জীবন যাপন করেন৷ রিসাইক্লিং করা যায় এমন প্রতি বস্তা ফেলনা থেকে তাদের আয় সাড়ে ছয় ডলার করে৷
কৃষক থেকে ময়লা সংগ্রহকারী
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ময়লার ভাগাড়কে জর্জিয়ার সবচেয়ে বড় আর ভয়াবহ ভাগাড় হিসেবে চিহ্নিত করেছে৷ গত বছর ৮৩ হাজার ৮৩৮ টন ময়লা ফেলা হয়েছে সেখানে৷ কিন্তু বিশ্বব্যাংক বলছে, এখানকার ময়লার ব্যবস্থাপনা যথাযথ নয় এবং তা ইউরোপের মানদণ্ডের সঙ্গেও মানানসই নয়৷ ৭০ বছর বয়সী নাটালে বেরিৎজে জানান তিনি ও তার স্বামী একসময় এখানেই কৃষিকাজ ও পশু পালন করেছেন৷ এখন তাদের ময়লা কুড়াতে হচ্ছে৷
পরিবেশের ক্ষতি
পরিবেশবিদেরা বলছেন এই ভাগাড় শুধু সেখানকার বাসিন্দাদেরই নয় গোটা বাস্তুসংস্থানের ক্ষতি করছে৷ পানিতে বিষাক্ত বর্জ্য মিশে জলজ জীবনকে হুমকির মুখে ফেলছে৷ ফেলে দেয়া জৈব বর্জ্য থেকে চল্লিশ থেকে ষাট ভাগ মিথেনের উৎপত্তি, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নেরই একটি বড় কারণ৷
বন্ধের উদ্যোগ
দেশটির উপ অর্থমন্ত্রীও মনে করেন ভাগাড়টি যত দ্রুত সম্ভব বন্ধ করতে হবে৷ এখানকার বিষাক্ত পানি কৃষ্ণ সাগরে গিয়ে মিশছে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি, যা খাদ্য শৃঙ্খলকেও দূষিত করছে৷ ইউনিসেফ ২০১৯ সালে জানিয়েছে আডজারা এলাকার ৮০ ভাগ শিশুর শরীরে ক্ষতিকর মাত্রায় লিডের উপস্থিতি রয়েছে৷
নতুন প্লান্ট
২০০৯ সালে গোনিও ভাগাড়টি বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেয় আডজারান সরকার৷ এর পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব আধুনিক বর্জ্য শোধনাগার গড়ে তোলার জন্য ইউরোপীয় উন্নয়ন ব্যাংক ৩৪ লাখ ডলার ও সুইডিশ উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা সরকারকে ৪৬ লাখ ডলার দিয়েছে৷ সেই অর্থে বাটুমি থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে ইউরোপীয় মানদণ্ড মেনে একটি প্লান্ট তৈরি করা হচ্ছে যা ২০২২ সালে চালু হবে৷ সেখানে বর্জ্য থেকে মিথেন গ্যাস সংগ্রহের ব্যবস্থাও থাকবে৷
নাটিলা শাভাদজে, ইংরিদ গেরকামা, নাথালি বেরট্রামস/এফএস