জনপ্রিয় এই বইগুলোর ওপরও নিষেধাজ্ঞা ছিল!
হ্যারি পটার থেকে শুরু করে ডিকশনারি – এমন কয়েকটি জনপ্রিয় বই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল৷
হ্যারি পটার, জে.কে. রাউলিং
দুনিয়ার পাঠক হ্যারি পটারের গল্পে মোহিত হলেও যুক্তরাষ্ট্রের অনেক খ্রিষ্টান পাঠকের কাছে এগুলো ছিল ‘শয়তান সম্বন্ধীয়’৷ এমনকি ‘পেন্টেকোস্টাল হার্ভেস্ট অ্যাসেম্বলি অফ গড চার্চ’-এর পিটসবার্গে হ্যারি পটার বইয়ের কপিও পুড়িয়েছেন৷ আরব আমিরাতের স্কুলগুলোতেও এই সিরিজের বইগুলো নিষিদ্ধ৷
গ্রিম ভাইদের রূপকথা
১৯৮৯ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি স্কুল তাদের পাঠ্যসূচি থেকে ‘লিটল রেড রিডিং হুড’-এর একটি সংস্করণ বাদ দিয়েছিল৷ রূপকথার ছোট্ট মেয়েটি তার দাদির জন্য যে ওয়াইন কিনেছিল, সে কারণে গল্পটি বাদ দেয় ঐ স্কুল কর্তৃপক্ষ৷
হোয়্যার দ্য ওয়াইল্ড থিংস আর, মরিস স্যান্ডাক
ছোট্ট ম্যাক্স খারাপ আচরণ করায় তাকে রাতে খেতে না দিয়ে ঘুমাতে পাঠানো হয়৷ ক্ষুধার কারণে বাচ্চাটি স্বপ্নে দেখে যে, তার ঘরটি রহস্যময় জঙ্গলে পরিণত হয়েছে এবং সেখানে কিছু প্রাণী এসেছে৷ স্যান্ডাকের এই ছবিপ্রধান বইটি তার ‘ডার্ক কন্টেন্ট’-এর জন্য কয়েকবার নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে৷ এমনকি ষাটের দশকে মনোবিজ্ঞানী ব্রুনো বেথেলহাইম বইটি ‘তিন-চার বছরের শিশুদের মনোজগতের জন্য ক্ষতিকারক’ বলে মন্তব্য করেছিলেন৷
দ্য ওয়ান্ডারফুল উইজার্ড অফ অজ, এল. ফ্রাংক বাউম
১৯০০ সালে প্রকাশিত বইটি যুক্তরাষ্ট্রে একাধিকবার নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়৷ নারীদের শক্তিশালী নেতা হিসেবে দেখানোর অভিযোগে ১৯২৮ সালে বইটি শিকাগোর পাবলিক লাইব্রেরিগুলোতে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল৷ এরপর ১৯৫৭ সালে একই কারণে ডেট্রয়টেও এটি নিষিদ্ধ করা হয়৷ এখনও অনেকে মনে করেন, এটি ডাকিনিবিদ্যাকে উৎসাহিত করে৷
মেফিস্টো, ক্লাউস মান
নাৎসি সরকার ক্ষমতায় আসার পর হেন্ড্রিক হ্যোফগেন নামে এক অভিনেতা নাৎসিদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন৷ এই ঘটনা নিয়ে ১৯৩৬ সালে নেদারল্যান্ডসে মেফিস্টো বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল৷ তবে জার্মানিতে এটি প্রথম এসেছিল ১৯৫৬ সালে৷ এরপর ষাট ও সত্তরের দশকে এর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল, কারণ, ভাইমার রিপাবলিকের সবচেয়ে প্রভাবশালী অভিনেতা গুস্তাফ গ্র্যুন্ডগেন্সের জীবন ও বাস্তব জীবনের কিছু ঘটনা নিয়ে উপন্যাসটি লেখা হয়েছিল৷
হার্ট ও ডার্কনেস, জোসেফ কনরাড
কঙ্গোতে বেলজিয়ামের সাম্রাজ্য স্থাপন ও সেই সময়কার ঘটনা নিয়ে পোলিশ-ব্রিটিশ লেখক কনরাডের লেখা বইতে সহিংস উপাদান থাকার অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক স্কুলে এটি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল৷ বইটিতে ‘নিগার’ শব্দটি ব্যবহার করায়ও স্কুলগুলো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷
অ্যানিমেল ফার্ম, জর্জ অরওয়েল
১৯৪৫ সালে রাশিয়ান রেভ্যুলেশন ও সোভিয়েত ইতিহাস নিয়ে রাজনৈতিক স্যাটায়ারধর্মী এই বইটি লেখা হয়৷ স্বাভাবিকভাবেই সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ বইটি নিষিদ্ধ করেছিল৷ অপরদিকে, শীতল যুদ্ধের সময় সিআইএ বইটির প্রচার চালিয়েছিল৷ আজও যুক্তরাষ্ট্রের অনেক স্কুলে বইটি বাধ্যতামূলক হিসেবে পড়ানো হয়৷
দ্য ডায়েরি অফ এ ইয়ং গার্ল, আনা ফ্রাংক
২০১০ সালে ভার্জিনিয়ায় বইটি নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছিল৷ কারণ, বইটির নতুন সংস্করণে যৌনতা বিষয়ক কিছু প্যারা সংযোজন করা হয়েছিল৷ এসব প্যারায় ১৪ বছরের ফ্রাংক তাঁর নিজের শরীর, মাসিক ও যোনি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন৷ ভার্জিনিয়ার অনেক স্কুল শিক্ষার্থীর বাবা-মা এ ব্যাপারে তাঁদের আপত্তি জানিয়েছিলেন৷ ২০১৩ সালে মিশিগানেও এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল৷
ফ্রাংকেন্সটাইন, ম্যারি শেলি
বইয়ের মূল চরিত্র বিজ্ঞানী ভিক্টর ফ্রাংকেন্সটাইনের তৈরি ‘মডার্ন প্রমিথিউস’এর বিষয়ে আপত্তি তুলেছিলেন ধর্মীয় নেতারা৷ ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল৷ ১৯৫৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় এটি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল৷
ডিকশনারির উপর নিষেধাজ্ঞা
২০১০ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের বইয়ের তাক থেকে মেরিয়াম ওয়েবস্টারের দশম সংস্করণ সরিয়ে ফেলেছিল৷ কারণ, কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের অভিযোগ ছিল, ঐ ডিকশনারিতে যৌন সম্পর্কের ‘গ্রাফিক ডেফিনেশন’ ছিল৷