1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জঙ্গিরা যেভাবে তহবিল গঠন করে

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২০ অক্টোবর ২০১৬

গুলশান হামলায় কারা অর্থের জোগান দেয় তা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট নতুন নতুন তথ্য পাচেছ৷ দেখা যাচ্ছে জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে যারা জড়িত, তারা নিজেদের সম্পদ তো দেনই, দেশ বিদেশ থেকেও অর্থ সংগ্রহ করে দেন৷

https://p.dw.com/p/2RUL5
প্রতীকী ছবি সিরিয়া
ছবি: Getty Images/S. Platt

এর বাইরে ইসলামের জন্য ‘কাফের মুশরেকদের' সম্পদ লুটকেও জায়েজ মনে করে তারা৷ কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘‘গুলশান হামলার আগে ঢাকার খিলগাঁও এলাকা থেকে দুই মেয়ে, জামাতা ও স্ত্রীসহ সিরিয়ায় পাড়ি জমান ডা. রোকন৷ তিনি দেশ ছাড়ার আগে ৮০ লাখ টাকা নব্য জেএমবির তহবিলে জমা দিয়ে যান৷''

তদন্ত করতে গিয়ে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন, গত ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরের একটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে নিহত তানভীর কাদেরী উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরে নিজেদের একটি ফ্ল্যাট বিক্রি করা ও সঞ্চিত অর্থ মিলিয়ে প্রায় এক কোটি টাকা জেএমবির তহবিলে জমা দেয়৷

সেনাবাহিনীর মেজর পদ থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেয়া জাহিদুল ইসলাম অবসর নেয়ার সময় এককালীন যে অর্থ পেয়েছিলেন তা এবং সঞ্চিত অর্থ মিলিয়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকা নব্য জেএমবির তহবিলে জমা দেয়৷ জাহিদুল ইসলাম জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হয়েছেন৷

নূর খান

২০১৩ সালে ক্যানাডা থেকে দেশে এসেই নব্য জেএমবির সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি শুরু করেন জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী৷ গত ১৮ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম জানান, ‘‘মূলতঃ তামিম চৌধুরী নিজ উদ্যোগে বিদেশ থেকে কথিত জিহাদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন৷ গুলশান হামলার আগে তার নির্দেশনায় জঙ্গি বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট দুবাই থেকে আসা ১৪ লাখ টাকা সংগ্রহ করেন৷ গুলশান হামলার আগে হুন্ডির মাধ্যমে ১৪ লাখ টাকা গ্রহণ করে জঙ্গিরা৷'' তিনি জানান, ‘‘এছাড়া দেশের ভিতরে যারা নব্য জেএমবির কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত, তাদের অনেকেই নব্য জেএমবির তহবিলে অর্থ দান করে৷''

জঙ্গিরা আর যেভাবে অর্থ সংগ্রহ করে

জেএমবি নেতা সালাউদ্দিন সালেহিনের ১৬১ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক একটি জবানবন্দি থেকে জানা গেছে, সাংগঠনকি তহবিল বাড়ানোর জন্য ২০০৩ সালে তারা ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় ব্র্যাক অফিসে ডাকাতি করে৷ একই বছরের জানুয়ারি মাসে মুক্তাগাছার চেঁচুয়া গ্রামে অফিস থেকে তিনটি মোটরসাইকেল, একটি ফ্রিজ, ঔষধ ও কিছু অফিস স্টেশনারি সামগ্রী ডাকাতি করে৷ এসব জিনিসপত্র বিক্রি করে পাওয়া অর্থ সংগঠনের তহবিলে জমা দেয়৷

গত ৮ সেপ্টেম্বর জেলার টাঙ্গাইলের বাসাইলের একটি পাঁচ তলা ভবনে ডাকাতির সময় পুলিশ গুলি ছুড়ে পাঁচ জেএমবি সদস্যকে আটক করে৷ এর আগে গত বছরের ২১ এপ্রিল ঢাকার অদূরে আশুলিয়ার কাঠগড়ায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের শাখায় ডাকাতি করে দুর্বৃত্তরা৷ ডাকাতদের গুলি ও ছুরির আঘাতে নিহত হয় ৮ জন৷ পরে জানা যায়, ওই ডাকাতির সঙ্গে জেএমবি সদস্যরা জড়িত৷

মাসুদুর রহমান

নরসিংদীর ডাকাতির ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে গত জুন মাসে রাজধানীর বনানী এলাকায় একটি ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জেএমবি সদস্যদের জড়িত থাকার তথ্য পায় পুলিশ৷ এছাড়া চলতি মাসে ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় একটি ডাকাতির সঙ্গেও জেএমবি সদস্যদের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়ার পরে সোমবার রাতে তেজগাঁও এলাকার একটি বাসা থেকে সাত জেএমবি সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়৷

পুলিশ জানায়, জঙ্গিরা তাদের ভাষ্যমতে ‘কাফের-মুশরেকদের অর্থ' ছিনিয়ে নিয়ে তথাকথিত জিহাদ বা ইসলাম কায়েমের জন্য খরচ করা জায়েজ মনে করে৷ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা তদন্তে গুলশান হামলার অর্থের ব্যাপারে তথ্য পেয়েছি৷ এই অর্থ দেশ এবং বিদেশ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে৷ এ নিয়ে তদন্ত চলছে৷ তারা তহবিলের জন্য চুরি ডাকাতিসহ অপরাধমূলক কাজও করে৷ তাদের এজন্য কোনো অনুশোচনা বোধ নাই৷''

এ নিয়ে জঙ্গি বিষয়ক গবেষক এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণে দেখেছি জঙ্গিরা নিজেদের মধ্য থেকে তহবিল সংগ্রহ করে৷ দেশের বাইরে থেকেও তারা অর্থ পায়৷ আবার তারা চুরি-ডাকাতির মতো কাজও করে অর্থের জন্য৷ তারা যে কোনো উপায়ে হোক না কেন অর্থ সংগ্রহ করবে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘জঙ্গিরা মনে করে তারা যে কাজ করছে তার জন্য যে কোনো উপায়ে অর্থ সংগ্রহ করা বৈধ৷ এটা করতে গিয়ে তারা কোনো নীতি নৈতিকতার ধার ধারে না৷'' 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান