জঙ্গলে যখন জাগুয়ারই শরণার্থী
প্রতিবছরই অ্যামাজন নদী উপচে পড়ে৷ ফলে বন্যা সৃষ্টি হয় জঙ্গলে৷ আর তখন গাছে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় জাগুয়াররা৷ চলুন তাদের গাছবাসের কিছু তথ্য জেনে নেই৷
গাছের চূড়ায় স্বর্গ
ব্রাজিলের জঙ্গলে বাস করা জন্তু-জানোয়ারের মধ্যে অন্যতম জাগুয়ার৷ তাদের অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে বেঁচে থাকতে হয়৷ চোরা শিকারীর হামলা, চাষাবাদের জন্য জমি সাফের ফলে আবাস হারানোসহ অ্যামাজন জঙ্গলের খেয়ালি প্রকৃতির সঙ্গেও তাদের মানিয়ে চলতে হয়৷ বছরে একবার দক্ষিণ অ্যামেরিকার সবচেয়ে বড় নদীর পানি উপচে পড়ে৷ তখন তলিয়ে যায় সংশ্লিষ্ট জঙ্গল, যার অন্যতম বাসিন্দা জাগুয়াররা৷ ফলে সেই সময়টা গাছে কাটাতে হয় তাদের৷
বেড়ালের চোখে দেখা
ব্রাজিলের অ্যামাজোনাস রাজ্যের রাজধানী মানাউস থেকে ‘মামিরাওয়া সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট রিজার্ভের’ দূরত্ব প্রায় ৬০০ কিলোমিটার৷ জাগুয়ারদের গাছবাসের ছবি তুলতে আলোকচিত্রী ব্রুনো ক্যালি একদল গবেষকের সঙ্গে সেখানে গিয়েছিলেন৷
ভারি, তবুও সাবলীল
ব্রাজিলের পুরুষ জাগুয়ারগুলো ছয় ফুটেরও বেশি লম্বা এবং ওজনে একশ’ কেজিরও বেশি হতে পারে৷ তা সত্ত্বেও তারা সাবলীলভাবে গাছে উঠতে পারে এবং ডালপালার মধ্যে আটকে থাকতে পারে৷
জাগুয়ারদের গোপন জীবন
কিন্তু গাছে জাগুয়াররা ঠিক কী করে? তারা কী খায়? গাছের উপরে বাচ্চা লালনপালন করে কিভাবে? এমিলিয়ানো এস্তারসি রামালহো এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন৷ তিনি হচ্ছেন ইয়া্উরেট প্রকল্পের প্রধান, যে প্রকল্পের আওতায় মামিরাওয়া রিজার্ভে অবস্থানরত জাগুয়ারদের উপর গবেষণা করা হচ্ছে৷ গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য এই বড় বেড়ালদের রক্ষায় কাজে লাগবে বলে আশা করছেন গবেষকরা৷
বেড়াল ধরার ফাঁদ
মাত্র পাঁচ বছর আগেও বিজ্ঞানীরা জানতেন না যে, জাগুয়ার বছরে চার মাসের মতো গাছে বসবাস করে৷ ‘‘তাদের এই আচরণ কখনো নথিভূক্ত করা হয়নি,’’ বলেন এমিলিয়ানো রামালহো৷ তাদের আচরণ সম্পর্কে আরো জানতে এবং তাদের নিয়ে গবেষণা করতে তাই তাদের ধরা প্রয়োজন৷ এজন্য জঙ্গলে ফাঁদ পাতছেন রামালহো’র এক সহযোগী৷
যোগাযোগ রক্ষা
কালো এই পুরুষ জাগুয়ারটির গলায় জিপিএস কলার স্থাপন করেছেন গবেষকরা৷ এর মাধ্যমে প্রানীটির গতিবিধি এবং ঘন জঙ্গলে ফিরে গিয়ে সেটি কী করে সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে৷
প্রাণঘাতী অস্ত্র
অচেতন প্রাণীটির ওজন এবং উচ্চতা মাপা ছাড়াও আরো কিছু কাজ করেন গবেষকরা৷ তারা প্রাণীটির প্রাণঘাতী দাঁতের মাপও নেন৷ অন্য বড় বেড়ালগুলো সাধারণত তাদের শিকারের শ্বাসরোধ করে কিংবা ঘাড় ভেঙে সেটিকে হত্যা করে৷ কিন্তু জাগুয়ার তাদের শিকারের খুলিতে এক কামড় দিয়েই কাজটি সারতে পারে৷ এক আঘাতে খুন করতে সক্ষম হিসেবে স্থানীয় পর্যায়ে এই প্রাণী বেশ পরিচিত৷
গাছে তাদের দেখার আশায়
স্থানীয় গাইডরা পর্যটকদের নৌকায় করে জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যায় গাছে চড়া জাগুয়ারদের একনজর দেখানোর আশায়৷ গবেষকরা আশা করছেন যে, তাদের গবেষণা ইকোট্যুরিজমকেও উৎসাহিত করবে৷ পর্যটকরা জাগুয়ার দেখতে অনেক টাকা খরচ করতে ইচ্ছুক বলে মনে করছেন তাঁরা৷
স্থানীয়দের সাথে প্রেম-ঘৃণার সম্পর্ক
জাগুয়ারের বাচ্চার এমন ছবি তোলার আশায় পর্যটকরা নিঃসন্দেহে অনেক টাকা খরচ করতে রাজি হবেন৷ আর সেটা হলে স্থানীয়রা নিজেদের স্বার্থেই জাগুয়ার হত্যার বদলে বাঁচিয়ে রাখবেন বলে আশা করছেন গবেষকরা৷ কেননা, এখন অবধি তাদের অনেকের চোখে জাগুয়ার হচ্ছে সেই প্রাণী, যেটি তাদের গৃহপালিত প্রাণী হত্যা করে এবং খাবার চুরি করে নিয়ে যায়৷